পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত বুধবার ২ জুন একটি বাংলা দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম ‘সুপ্রীম কোর্ট বার ক্যান্টিনে গরুর গোশত নিয়ে বিতন্ডা।’ শিরোনাম দেখে একটু অবাক হলাম। মুসলিম দেশে গরুর গোস্ত নিয়ে বিতন্ডা হবে কেন? খবরে বলা হয়েছে, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ক্যান্টিনে গরুর গোস্ত রান্না করার প্রতিবাদ জানিয়েছে আইনজীবী ঐক্য পরিষদ, সুপ্রীম কোর্ট শাখা। একই সঙ্গে ক্যান্টিনে গরুর গোস্ত রান্না বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সমিতির বর্তমান কমিটির প্রতি আহব্বান জানানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সুপ্রীম কোর্ট শাখার সভাপতি বিভাস চন্দ্র বিশ্বাস সহ ৪ আইনজীবীর আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। আবেদনে স্বাক্ষরকারী অন্য আইনজীবিরা হলেন, আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সম্পাদক অনুপ কুমার সাহা, আইনজীবী সমিতির বিজয়া পূর্ণমিলনী ও বাণী অর্চনা পরিষদের আহবায়ক জয়া ভট্টাচার্য্য এবং সদস্য সচিব মিন্টু চন্দ্র দাস।
আবেদনে বলা হয়েছে, আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পারলাম যে, গত ২৯ ও ৩০ মে রাতে সুপ্রীম কোর্ট ক্যান্টিনে গোমাংস রান্না করা হয় এবং রাতে তা খাবারের জন্য পরিবেশন করা হয়। সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ঐতিহ্যগত ভাবেই এর সৃষ্টিলগ্ন থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল এবং কখনোই এখানে গোমাংস রান্না ও পরিবেশন করা হয়নি। হঠাৎ করে এই ধরনের তৎপরতায় আমরা বিষ্মিত ও হতবাক। আমরা সংশ্লিষ্টদের এহেন তৎপরতার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আবেদনে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দীর্ঘ ললিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে ভবিষ্যতে সুপ্রীম কোর্ট বার ক্যান্টিনে এই ধরনের গোমাংস রান্না ও পরিবেশন করা থেকে বিরত রাখার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সমিতির কার্যকরী কমিটিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এব্যাপারে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বক্তব্য কী সেটা জানা যায়নি।
এখানে একটি বিষয় পরিস্কার হচ্ছে না। সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ক্যাফেটারিয়ায় কি অতীতে গরুর গোস্ত রান্না ও পরিবেশন করা হয়নি? না হয়ে থাকলে কেন হয়নি? আর হয়ে থাকলে এখন কেন হবে না? আমরা বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। তাই সুস্পষ্ট কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। কমনসেন্স বলে যে গরুর গোস্ত রান্না হবে, আবার খাসি বা মুরগীর গোস্তও রান্না হবে। মুসলমানরা গরু, খাসি, মুরগী যেটা ইচ্ছা খাবেন। আর হিন্দু আইনজীবীরা খাসি বা মুরগী যেটা ইচ্ছা খাবেন।
একই দিন দৈনিক ইনকিলাবের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ‘পুতিনের পাকিস্তান সফরের উজ্জ্বল সম্ভাবনা।’ আসলে এই বিষয়টি একটি একক পূর্ণাঙ্গ কলাম লেখার দাবি রাখে। কারণ একবিংশ শতাব্দীতে এসে, বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকে, বৈশি^ক রাজনীতি যে একটি বড় বাঁক নিচ্ছে সেই প্রেক্ষিতে এই খবরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যদি সত্যি সত্যি পুতিন পাকিস্তান সফর করেন তাইলে সেটি হবে বিগত ৭৩ বছরে কোনো সোভিয়েট বা রুশ রাষ্ট্র প্রধানের প্রথম পাকিস্তান সফর। তবে আগে দেখা যাক, খবরটিতে কী বলা হেেছ।
খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাকিস্তান সফরের সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল হয়েছে। গত সপ্তাহে করাচী থেকে কাসুর পর্যন্ত গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য ইমলামবাদ ও মস্কোর মধ্যে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করার পর পাকিস্তানী কর্মকর্তারা সোমবার এ সম্ভাবনার কথা জানান। রাশিয়া ও পাকিস্তান উভয় দেশই তাদের স্নায়ুযুদ্ধের বৈরিতা কাটিয়ে উঠতে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন যুগে প্রবেশের সিদ্ধান্তের ফলে এটি একটি ফ্ল্যাগ প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। পাইপ লাইনটির দৈর্ঘ্য ১১ শত ২২ কিলোমিটার। প্রকল্প ব্যায় ধরা হয়েছে ২.২২ বিলিয়ন ডলার।
পাকিস্তানের সিনিয়র কর্মকর্তারা মনে করছেন যে, পাকিস্তানের জন্য এই প্রকল্পের কেবল অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত তাৎপর্য রয়েছে। তারা বলেন যে, পাকিস্তান তার পররাষ্ট্রনীতিতে বৈচিত্র্য আনার জন্য রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক পাকিস্তান সফরকালে বলেন যে, মস্কো ইসলামবাদকে সম্ভাব্য সকল প্রকার সাহায্য দিতে আগ্রহী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইতোমধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে পত্রযোগে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ইনকিলাবের ঐ খবরে বলা হয়, এখন রাশিয়া পাকিস্তানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে পারে। গত বছরে রাশিয়া পাকিস্তানের কাছে মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম বিক্রি করতে চাচ্ছিল। কিন্তু ভারতীয় বাধায় সেই বিক্রয় স্থগিত হয়ে যায়।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টি হলে পাকিস্তান প্রো ওয়েস্ট অর্থাৎ আমেরিকা ও পাশ্চত্য পন্থী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান আমেরিকা সফরে যান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জত্তহর লাল নেহরু মস্কো সফরে যান। এরপর পর্যায়ক্রমে পাকিস্তান পাশ্চত্য এবং আমেরিকার সাথে তিনটি সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। এগুলো হল সেম্পো বা বাগদাদ প্যাক্ট, সিয়াটো বা দক্ষিণ পূর্ব এশীয় চুক্তি পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি। ঐদিকে নেহরু জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির প্রবক্তা হলেও সোভিয়েট ইউনিয়ন এবং সোভিয়েট শিবিরের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। কিন্তু ভারত সোভিয়েট ইউনিয়ন বা সোভিয়েট ব্লকের সাথে কোনো সামরিক চুক্তিতে জড়িয়ে পড়েনি। ফল হয়েছে এই যে কোনরূপ সামরিক চুক্তি না থাকা স্বত্তে¡ও সোভিয়েট ইউনিয়ন ভারতকে অঢেল পরিমাপে সার্বাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত করে। ফলে ভারত সামরিক দিক দিয়ে পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম ও শক্তিশালী এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও শক্তিশালী রাষ্ট্র রূপে আবিভর্‚ত হয়। পক্ষান্তরে আমেরিকা পাকিস্তানকে দেয় পুরাতন লক্কড়-ঝক্কড় সমরাস্ত্র। ৭১-এর যুদ্ধে পাকিস্তানের উভয় ফ্রন্টে ভারতের প্রশ্নাতীত শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
দুই
তারপরে পাকিস্তানের হুঁশ হলেও আমেরিকা পাকিস্তানকে এমন অষ্টে পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে যে আমেরিকার খপ্পর থেকে পাকিস্তানের বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। এমন প্রতিকূলতার মাঝেও পাকিস্তান চীনের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে শুরু করে। চীনের সমর্থনে পাকিস্তান মার্কিন বেষ্টনী থেকে আংশিকভাবে হলেও বের হতে সমর্থ হয়েছে। এখন যদি রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে পারে তাহলে পাকিস্তান বশ্যতা পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে পাকিস্তান রাশিয়া থেকে সর্বাধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহ করতে হবে। মিলিস ব্যালান্স এবং গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যায় সেই সব তথ্য থেকে দেখা যায় যে, মান ও উৎকর্ষতার দিক থেকে চীনের সমরাস্ত্র রাশিয়ার পেছনে এবং আমেরিকার অনেক পেছনে।
এক্ষেত্রে পাকিস্তানের একটি প্লাস পয়েন্ট রয়েছে। সেটি হল, ভারত এতদিন জোর গলায় বলে এসেছে যে সে জোট নিরপেক্ষ, আর পাকিস্তান জোটভুক্ত। কিন্তু এখন আর ভারতের সেকথা বলার মুখ নাই। এখন সে চারজাতি ‘কোয়াডের’ সদস্য। কোয়াড একটি সামরিক জোট। অপর তিন সদস্য হলো আমেরিকা, জাপান ও অষ্ট্রেলিয়া।
এতদিন সোভিয়েট তথা রুশ সমরাস্ত্রে ভারত একটি বৃহৎ শক্তি হলেও তার প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী চীনের চেয়ে বেশ পেছনে। এই ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য ভারত এখন আমেরিকা এবং ফ্রান্স থেকে বিপুল পরিমাণে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র কিনছে।
প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্রে পাকিস্তান ভারতের অনেক পেছনে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য পাকিস্তানের শেষ অবলম্বন হলো পারমাণবিক বোমা বা অস্ত্র। কিন্তু পরমাণবিক বোমা ছেলের হাতের মোয়া নয়। যখন তখন চাইলেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা যা না। পরাশক্তিগুলোর পাল্টা আঘাতের ভয় থেকে যায়। বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বা সাময়িকী আমি ঘেঁটে দেখেছি, প্রচলিত অস্ত্র, অর্থাৎ ট্যাঙ্ক, জঙ্গী বিমান, ফ্রিগেট, ডেস্ট্রয়ার, সাবমেরিন ইত্যাদি সবক্ষেত্রে পাকিস্তান ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। তার সামরিক শক্তি কত সে ব্যাপার লন্ডনের মিলিটারী ব্যালান্সের তথ্যই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। এখন রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্ব করে প্রচলিত অস্ত্রে পাকিস্তান কতটুকু শক্তিশালী হতে পারে সেটা দেখার জন্য নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণ গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।