পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী ছিল গত ১৮ ডিসেম্বর। ২ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ। সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। শ্রীলঙ্কার প্রধান বিচারপতি জয়ানথা জয়সুরিয়াও অতিথি হিসেবে ছিলেন। অনুষ্ঠান-আলোচনায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রাসঙ্গিকতা পায়। রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিচারকদের নির্ভয়ে বিচারকার্যক্রম পরিচালনার সাহস যোগানো হয়।
গত ২৭ ডিসেম্বর বিচারকদের উদ্দেশে অভিভাষণ দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে দেয়া অভিভাষণে সারাদেশে কর্মরত জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীদের কোনো অন্যায়-আবদারের কাছে মাথানত না করতে বিচারকদের নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। হুঁশিয়ারিও দেয়া হয় বিচারকদের। তিনি বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত কোনো বিচারককে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনজীবীরা বারবার সময় আবেদন করলেই তা যেন গ্রহণ করা না হয় সেদিকে সচেষ্ট থাকতে হবে। অযথা শুনানি মুলতবি করলে বিচারপ্রার্থীর হয়রানি বাড়ে। বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে জেলা জজদের আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ তিনি। বিচারকদের সুশৃঙ্খলভাবে কোর্ট পরিচালনার আহবান জানান।
প্রধান বিচারপতির দেয়া অভিভাষণের ৫ দিনও অতিক্রান্ত হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে চরমভাবে লাঞ্ছিত করেন আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ। ঘটনাটি এজলাসের ভেতরকার। এজলাসের ভেতরকার ছবি এবং ভিডিও ধারণের আইনগত বৈধতা নিয়ে মোটা দাগে প্রশ্ন তোলাই যায়। কিন্তু যে ঘটনার ভিডিও ধারণ করা হয়েছে- সেটির তুলনায় ভিডিও ধারণ কোনো অপরাধ কি না- এমন পাল্টা প্রশ্নও ওঠে। ভিডিও ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল না হলে হয়তো আন্দাজই করা যেতো না-আদালতের ভেতরে কি ঘটেছে।
এ বিষয়ক একটি আবেদন আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি জে বি এম হাসান এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। সেইসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো: আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলামকে তলব করা হয়েছে। আগামী ১৭ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে তাদের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে হবে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় এ তথ্য জানান।
ব্যবস্থা নিতে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আবেদন
এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে রেজিস্ট্রার জেনারেল মো: গোলাম রব্বানী আবেদনটি বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে পাঠান।
আবেদনে বলা হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফরুকের পাঠানো চিঠিতে জানানো হয় যে, তিনি গত ২ জানুয়ারি পূর্বাহ্নে যথাসময়ে বিচার কার্য পরিচালনার জন্য এজলাসে উঠে দৈনন্দিন কার্য তালিকায় নির্ধারিত মামলাসমূহের শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। এজলাস চলাকালে বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: তানভীর ভূঞা, সম্পাদক প্রশাসন অ্যাডভোকেট মো: আক্কাস আলী, অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলামসহ আনুমানিক ১০/১৫ জন আইনজীবী আসেন। তারা অশালীন ও অসৌজন্যমূলকভাবে তাকে এজলাস থেকে নেমে যেতে বলেন। বারের সভাপতি আদালতকে লক্ষ্য করে উচ্চস্বরে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন।
এ সময় আদালতের এজলাসে কোর্ট ইন্সপেক্টর, আদালতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্য, আদালতের কর্মচারী ও বিচারপ্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের মধ্য থেকে একজন সদস্য ঘটনাটি ভিডিও করেন। পরে ভিডিওটি তার হস্তগত হয়। তার দরখাস্তের অংশ হিসেবে ভিডিও ক্লিপটি ভুক্তভোগী বিচারক মোহাম্মদ ফারুক আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেন।
৪ জানুয়ারি দেয়া আবেদনে বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ অন্যান্য আইনজীবীগণ আদালত চলাকালে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালাজ ও অশালীন আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকগণের নিরাপত্তা, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি এবং শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে উক্ত অভিযোগের বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়া আবশ্যক। এজলাস চলাকালে আদালতে বিচারক ও কর্মচারীগণকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের জন্য আদালত অবমাননার ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় আবেদনে।
এদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান হয়নি। বরং আইনজীবী এবং আদালত সহায়ক কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে অচলাবস্থা প্রলম্বিত হয়েছে।
ইনকিলাব’র ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা গতকাল বৃহস্পতিবার জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই বিচারকসহ নাজিরের অপসারণ চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সকল আদালত ৩ দিনের জন্য বর্জন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আইনজীবীরা। গতকাল সকাল থেকে আদালত বর্জন করে জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এ সময় বক্তব্য রাখেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম লিটন, মাহবুবুল আলম খোকন প্রমুখ। এ সময় বক্তারা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১ এর বিচারকের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ এনে বলেন, গেল ১ ডিসেম্বর বিকেলে মামলা দায়ের করতে গেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১ এর বিচারক মামলাটি গ্রহণ না করে জেলার সকল আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিকর ও অপমানজনক মন্তব্য করেন। এর আলোকে ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আইনজীবী সমিতি। সে সাথে জাল স্ট্যাম্প, জালিয়াতির উৎস ও চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেয়ায় ঘুষখোর ও ঘুষখোরের মদদদাতা আদলতের নাজির মুমিনকে প্রত্যাহারের দাবি জানায়। অথচ তাকে রক্ষায় জেলা জজের ইন্ধনে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করেছে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীরা। এরই প্রতিবাদে জেলার আইনজীবীরা জেলা জজ শারমিন নিগার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুক ও আদালতের নাজির মোমিনুল হকের অপসারণের দাবিতে বৃহস্পতি, রবি ও সোমবার পর্যন্ত ৩ দিনের জন্য সকল কোর্ট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। দাবি আদায় না হলে কর্মসূচী চলমান থাকবে বলেও জানান বক্তারা।
এদিকে বর্জনকে ঘিরে সকাল থেকে জেলা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল আদালতসহ সবকটি আদালতের বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীদের বিপাকে পড়তে হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, সময় পার হয়ে যাওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ এর বিচারক মামলাটি নেননি। তবে এ কারণে একজন বিচারককে আইনজীবীরা যেভাবে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ তার সাথে আচরণ করেছে তা দুঃখজনক। এই আচরণ আইন পরিপন্থি। এছাড়াও তিনি আইনজীবী কর্তৃক জেলা জজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে বলেন, জেলা জজকে নিয়ে এ ধরণের মন্তব্য সংবিধান পরিপন্থি।
উল্লেখ্য, একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূলত গেল ১ ডিসেম্বর একটি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির নেতাসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বিতন্ডা হয়। সময় পার হয়ে যাওয়ায় নিয়ম অনুসারে মামলাটি নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আইনজীবী সমিতি। এ ঘটনায় আদালতে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে মঙ্গলবার বিচার বিভাগীয় কর্মচারি অ্যাসোসিয়েশন সভা করে বুধবার থেকে কর্মবিরতি ও মানববন্ধ কর্মসূচি পালন করে। আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গণে এসে বিচারবিভাগীয় কর্মচারীদের মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এসময় শত শত আইনজীবী জেলা বার এসোসিয়েশন ভবনের সামনে জড়ো হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয় ব্যক্ত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে জেলা জজ শারমিন নিগারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
ভিডিও ভাইরাল : বিচারিক কাজে হস্তক্ষেপ, বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের প্রতি আইনজীবীদের মারমুখি আচরণ, অশ্রাব্য গালাগালের একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। (৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি ১ জানুয়ারির) ভিডিওতে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বেঞ্চ সহকারী সুবর্ণা আক্তার রিয়াকে ডেকেছিলেন। এ সময় অ্যাডভোকেট মো: আক্কাস আলী (সেক্রেটারি, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) হঠাৎ এজলাসে ঢোকেন। ঢুকেই তিনি বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে বলেন, স্যার, এজলাস থেকে নেমে যেতে বলেন। ওই আইনজীবী বলেন, বারের সভাপতি-সেক্রেটারি আসতেছেন। আমাদের একটি সিদ্ধান্ত আছে। আপনি কোর্টে উঠতে পারবেন না। জবাবে বিচারক বলেন, আমি কোর্টে উঠব না এ সিদ্ধান্ত কি আপনারা নিতে পারেন? জবাবে ওই আইনজীবী বলেন, জ্বি অবশ্যই নিতে পারি।
আদালত বলেন, আপনারা কোর্ট বর্জন করেন, তাই বলে কি আমি কোর্টে উঠব না ? আক্কাস আলী বলেন, কেন উঠবেন স্যার? আমাদের তো নিষেধ করা আছে। আইনজীবী এবং বিচারকের মাঝে কথোপকথনের মধ্যেই ক্ষুব্ধ-ক্রুদ্ধ হয়ে এজলাসে ঢোকেন বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: তানভীর ভুইয়া। তিনি এসেই অশ্রাব্য ভাষায় এজলাস থেকে বিচারককে নেমে যাওয়ার জন্য ধমকাতে থাকেন।
তিনি একাধারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং জেলার বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও বটে। এক সময় তিনি বিজয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যানও ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।