পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি’ বলে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আক্ষেপ করলেও পাঠকদের কাছে ‘কথা’ রেখেছে ইনকিলাব। ৩৫ বছর পেরিয়ে ইনকিলাব আজ পদার্পণ করলো ৩৬ বছরে। দেশের সংবাদপত্র জগতে নিজস্ব ‘ভিশন’ নিয়েই আবির্ভাব ঘটে ইনকিলাবের। কিন্তু ইনকিলাব কথা রেখেছে, পাঠকের কাছে অঙ্গিকারের ব্যত্যয় ঘটায়নি। বিজাতীয় সংস্কৃতির উলঙ্গ নৃত্যের মধ্যে জন্ম নেয়ায় ইনকিলাবের দীর্ঘ এই চলা পথ মোটেও কুসুমাসত্তীর্ণ ছিল না। তবে চলার পথে কখনোই নীতির প্রশ্নে আপোষ করেনি; অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি পত্রিকাটি। পাঠকের কাছে প্রমাণ করেছে ইনকিলাব ‘শুধু দেশ ও জনগণের পক্ষে’। তাইতো হাজারো পত্রিকার ভীড়ে ‘ইনকিলাব’ হয়ে গেছে এ দেশের মা-মাটি মানুষের হৃদয়ের কণ্ঠস্বর।
আজ ইনকিলাবের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ঐতিহাসিক শুভক্ষণে ইনকিলাবের দেশ-বিদেশের সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী, সাংবাদিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফুরন্ত শুভেচ্ছা।
৩৫ বছর আগের কথা। তখন দেশে এতো সংবাদপত্র ছিল না। ছিল না তথ্য প্রযুক্তির এতো অবাধ প্রবাহ। দেশের সংবাদপত্র শিল্প সঙ্কটময় সময় অতিক্রম করছিল। দেশজ সংস্কৃতির ভান্ডার তুলে ধরার বদলে বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চার ঊর্বর ভ‚মিতে পরিণত করা হয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে। সংস্কৃতি চর্চার নামে অশালীন উলঙ্গ নৃত্য ও তথাকথিত প্রগতিশীলতার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল দেশের গোটা সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। রাজধানী ঢাকা থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে সেই অপসংস্কৃতির নোংরা স্রোতধারা। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলাম ধর্ম-আলেম-ওলামা, পীর-মশায়েখ, মাদরাসা শিক্ষা, দাড়ি-টুপিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করাই ছিল যেন তথাকথিত কিছু প্রগতিশীল সংস্কৃতিমনা ব্যক্তির নিত্যচর্চার বিষয়। কেবল আলেম সমাজকে উপহাস করতেই রচিত হতো নাটক-সিনেমা, গান-বাজনা, কথিকা। এমনকি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিটিভিতেও একই ধারা ছিল প্রবাহিত। বিজাতীয় সংস্কৃতির এ নৃত্যের মধ্যেই উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) প্রতিষ্ঠা করেন দৈনিক ইনকিলাব। তখন আমেল ও সিনিয়র সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেই ইনকিলাবের টিকে থাকা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। ইনকিলাব অর্থ বিপ্লব। সত্যিই ইনকিলাব তাদের আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করে দেশের সংবাদপত্র শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
বিজ্ঞানের বদৌলতে গত কয়েক বছরে দেশে তথ্য ও যোগাযোগ মাধ্যমে বিপ্লব ঘটেছে। প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি দেশে প্রায় অর্ধ-শতাধিক টেলিভিশন মিডিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশ-বিদেশে গড়ে উঠেছে প্রায় ১০ হাজার অনলাইন মিডিয়া। এসব মিডিয়া প্রতিদিন খবর প্রচার করছে। এছাড়াও হালে ‘আনকাট’ তথ্য আদান প্রদানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বøগ, ফেসবুক, টুইটারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব হাজারো মিডিয়ার ভীড়ে ইনকিলাব নিরপেক্ষভাবে সংবাদ প্রচার, খবরের পেছনের খবর প্রচারে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য রক্ষা করেই প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে।
‘শুধু দেশ ও জনগণের পক্ষে’ স্লোগান নিয়ে ইনকিলাব জাতীয়তাবাদ ও ইসলামের দীপ্ত শিখায় উদ্ভাসিত হয়েই নিরন্তর এগিয়ে চলছে। দীর্ঘ এ পথের বাঁকে বাঁকে নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেছে পত্রিকাটি। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পালাবদলে কখনো কণ্ঠ চেপে ধরার চেষ্টা হয়েছে; কখনো মত প্রকাশে প্রতিবন্ধকতার চেষ্টা হয়েছে। ইনকিলাব থেমে থাকেনি; সব বাধা অতিক্রম করে আপোষহীনভাবেই এগিয়ে চলেছে। বর্তমানের কর্পোরেট সাংবাদিকতার যুগে দেশের অনেক গণমাধ্যম টিকে থাকার স্বার্থে দেশি-বিদেশী প্রভাবশালীদের রক্তচক্ষুর ভয়ে স্রোতে গা ভাসিয়েছে; কখনো কখনো কর্পোরেট হাউজের অপকান্ডের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু ইনকিলাব সেই স্রোতে গা ভাসায়নি। ইনকিলাব কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠেনি। বিজ্ঞাপন ও পাঠকের ওপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞাপন সঙ্কটের কারণে আর্থিক টানাপড়েন এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দোলাচল এবং বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও প্রচারণায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ‘মানবিক মর্যাদা, সমতা ও সামাজিক ন্যায় বিচার’ প্রতিষ্ঠায় অবিচল থেকেছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতীয় স্বার্থ ও গণমানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষে ‘খবর প্রচারে’ সোচ্চার থেকে পাঠক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
৩৫ বছর আগে জন্ম নেয়া দৈনিক ইনকিলাব সে সময়ের তরুণ সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে যে অঙ্গিকার নিয়ে যাত্রা শুরু করে; সংবাদ প্রচার ও মানুষের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে সে অঙ্গিকার আজো অটুট রেখেছে। বিগত শতকের আশির দশকে প্রভাবশালী মন্ত্রীর সন্তান হয়েও লেখাপড়া শেষ করে সুযোগ থাকা সত্তে¡ও অন্য পেশায় না গিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাংবাদিকতা পেশায় নিজেকে নিবেদিত করেন এ এম এম বাহাউদ্দীন। সেদিনের তরুণ আজকের প্রবীণ সম্পাদক। তাঁর দৃঢ়তায় ইনকিলাব একদিকে দেশজ সংস্কৃতি ফেরি করছে; অন্যদিকে আকাশ সংস্কৃতির নামে বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে ইসলামী আকিদার সমাজ বিনির্মাণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
ইনকিলাবের এগিয়ে চলার মাঝপথে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়েছেন ফাহিমা বাহাউদ্দীন। দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ফাহিমা অন্য পেশায় না গিয়ে পিতার পথ ধরে সাংবাদিকতা পেশায় এসেছেন। পিতার মতো তিনিও দৃঢ়চেতা সমাজ সচেতন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন। চিন্তা-চেতনায় আধুনিক মনস্ক হওয়ায় তিনি ডিজিটালাইজেশনের যুগে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইনকিলাবের অনলাইন ভার্সনকে সময়োপযোগী করে সাজিয়েছেন। ইনকিলাবের দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাঠক কী চায়, তা নিয়ে গবেষণা করে সে ভাবেই অনলাইন ভার্সনে দেশি-বিদেশে সংবাদ প্রকাশ করছেন। তার দেশজ সংস্কৃতির প্রতি অনুরক্ত, দেশপ্রেমের সুচিন্তিত কমিটমেন্টে দেশ-বিদেশের ১৫ লাখ পাঠক দৈনিক ইনকিলাব ‘অনলাইন সংস্করণ’ নিয়মিত পড়ছেন।
ইনকিলাব খবর প্রচারে ৩৫ বছর ধরে নিজস্ব কমিটমেন্ট রক্ষা করে চলছে। সংবাদ প্রচারে খবরের সত্যতা, বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি জোর দিয়েই সিলেক্টিভ খবর প্রচার করছে। আলোচনায় আসতে এবং অযথা বাহবা পেতে অযাচিত কোনো বিষয় নিয়ে খবর প্রচারে মাতামাতি করেনি। সংবাদ প্রচারে ১ লাখ ৪৯ হাজার ২১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশের দেশজ সংস্কৃতির প্রবহমান পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রের স্রোতধারার কৃষ্টি-কালচারকেই প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছে।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে এখন দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম আকাশ সংস্কৃতির নামে বিজাতীয় সংস্কৃতির চর্চা উৎসাহিত করছে। বিজ্ঞাপন বা অন্যভাবে আর্থিক সুবিধা পেতে কেউ কেউ সে স্রোতে মিশে গেছে। আবার কেউ বিজাতীয় সংস্কৃতির দৌরাত্ম্যে টিকতে না পেরে রণে ভঙ্গ দিয়ে নিজেরাও সেই স্রোতে গা ভাসিয়েছেন। কিন্তু অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে ইনকিলাব ‘নীতির প্রশ্নে’ কখনো আপোষ করেনি। বিজ্ঞাপন সঙ্কটে আর্থিকভাবে দুর্বল হলেও অনুচিত, অযাচিত ও অন্যায়ের কাছে মাথানত করেনি।
এখানে একটি কথা না বললেই নয়। সারাবিশ্বে প্রিন্ট মিডিয়া সঙ্কটে পড়ে গেছে। দেশের অনেক পত্রিকা ১৬ পৃষ্ঠা ও ২০ পৃষ্ঠা কলেবরে নিয়মিত বের করছে। কিন্তু আর্থিক কারণে ইনকিলাবের পৃষ্ঠা সংখ্যা কমে গেছে। একই কারণে অন্যান্য পত্রিকার ছাপা কাগজের চেয়ে ইনকিলাবের ছাপা কাগজের মানও খারাপ। পৃষ্ঠা কম ও কাগজের মান খারাপ হওয়ার পরও দেশের বিপুল সংখ্যক পাঠক ইনকিলাব নিয়মিত পড়ছেন। ইনকিলাবের পৃষ্ঠা না ওল্টালে সকালের নাস্তা করতে পারেন না এমন পাঠকের সংখ্যাও অনেক। এরা ইনকিলাবের সিরিয়াস পাঠক। কলেবর বেশি এবং কাগজের মান ভাল হলে নিঃসন্দেহে ইনকিলাবের আরো অনেক পাঠক বেড়ে যেত।
বিজ্ঞানের বদৌলতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও খবর এখন সহজলভ্য। টিভির রিমোট টিপলেই তাৎক্ষণিক তাজা খবর; মোবাইল টিপলেই অনলাইনের খবর পাওয়া যায়। তবে প্রিন্ট মিডিয়ার চাহিদা ফুরিয়ে যায়নি। কিন্তু বস্তুনিষ্ঠতা, খবরের পেছনের খবর এবং খবরের নিরপেক্ষতার কারণে ইনকিলাব এখনো পাঠকদের কাছে সমাদৃত। প্রতিদিনের ইভেন্টের পাশাপাশি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিশ্ব রাজনীতি, ভ‚-রাজনীতি, দেশজ সংস্কৃতি, নাটক-সিনেমা-সংগীত, খেলাধূলা, নারী শিক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা-চিকিৎসা, ইসলামী শিক্ষা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, মতামত, বিশ্লেষণ, শিক্ষাঙ্গন, সমাজ জীবন, মুসলিম দুনিয়ার চালচিত্রের খবর সব শ্রেণীর দেশি বিদেশেী পাঠকের জন্য তুলে ধরছে নিরলসভাবে। এতে অবদান রাখছেন ইনকিলাব পত্রিকার রিপোর্টিং বিভাগ ও বার্তা বিভাগের সাংবাদিক, সম্পাদকীয় বিভাগের সাংবাদিক, সারাদেশের বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের সংবাদকর্মীরা। প্রশাসন, বিজ্ঞাপন, সার্কুলেশন, মেশিনম্যান এমনকি ইনকিলাবে কর্মরত পিয়ন-দারোয়ানদের ভ‚মিকা রয়েছে ইনকিলাবের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে।
হাজারো পত্রিকার ভীড়ে আন্তর্জাতিক খবর প্রচারের ক্ষেত্রে ইনকিলাব অন্যান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশ্ব রাজনীতির খবর বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের খবর, মুসলমানদের নানা সংবাদ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের দৃঢ়চেতা কর্মকাÐের খবর, বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী চীনের রাজনীতি, ভারতের মুসলমানদের বিরুদ্ধে নিত্য জুলুম নির্যাতন এবং দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি সরকারের মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের খবরাখবর সর্বক্ষণিকভাবে পাঠকদের জন্য তুলে ধরছে।
ইনকিলাব নীতির মধ্যে থেকেই সংবাদ প্রচারে বৈচিত্রময়তায় সব শ্রেণির পাঠকের মধ্যে তৈরি করেছে সেতুবন্ধন। পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে চিন্তায়, চেতনায়, কর্মে পরিবর্তনশীল বিশ্ব ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা কিছু সত্য, সুন্দর, ভালো, মহৎ, জনকল্যাণকর এবং দেশ-জনগণের জন্য ইতিবাচক সেগুলো প্রচারে প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছে। ইসলামী মূল্যবোধের ব্যাপারে আপোষ না করেই খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে সকল ধর্মালম্বীর অধিকার, মতকে সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকে। দেশের অনেক গণমাধ্যমে ভিন্ন মতালম্বীদের খবর প্রচারে বৈষম্য করলেও ইনকিলাব সে পথে হাটেনি। বিপরীতমুখী চিন্তা-চেতনার মানুষের খবরও অকপটে প্রচার করছে জন্মলগ্ন থেকেই।
ইনকিলাব নীতির ব্যাপারে আপোষ না করলেও ডিজিটালাইজেশনের যুগে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। কাগজে মূদ্রিত পত্রিকার পাশাপাশি অনলাইন ভার্সন প্রকাশ করেছে। অনলাইন ভার্সনে পত্রিকাটি পাঠক মহলে সমাদৃত হয়েছে। ইনকিলাব পাঠক মহলে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে তা বিভিন্ন খবর প্রচারের পর সেসব খবর নিয়ে পাঠকদের মতামত প্রকাশে বোঝা যায়।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে গুগলে গেলেই যখন পৃথিবীর চালচিত্রের খবর পাওয়া যায়; তখনো পাঠকরা ইনকিলাবের পাতায় পাতায় পাঠক নিজস্বতা খুঁজে পান; পাতার পরতে পরতে দেখেন দেশবিদেশের খবরের পাশাপাশি ভ‚গোল, ইতিহাস, সমাজচিত্রসহ বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জ-শহর-বন্দরের প্রসারিত রূপ। হাজারো গণমাধ্যমের ভীড়ে খবর প্রকাশ ও প্রচারে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে ঠিকই; কিন্তু তাল মেলাতে গিয়ে কখনো খেই হারায়নি; নিজস্বতাকে বিসর্জন দেয়নি। সরকারের অন্ধ সমর্থক ও অন্ধ বিরোধিতা নয়; বরং ভাল কাজের প্রশংসা এবং মন্দ কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করার সম্পাদকীয় নীতি গ্রহণ করেছে। এটা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছে। ইনকিলাব সম্পাদক ও কর্মরত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এখনো অনেক মামলা আদালতে রয়েছে। এতো জুলুম-নির্যাতনেও সম্পাদকীয় নীতির ক্ষেত্রে ইনকিলাব এক চুলও ছাড় দেয়নি।
রাজনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কট এবং বৈশ্বিক অতিমারী করোনাকালেও ইনকিলাব দেশের মানুষকে দেখিয়ে যাচ্ছে পথের দিশা। এর আগে জঙ্গি দমনে সরকারকে উৎসাহিত করেছে এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে ইনকিলাব যেমন সচেতন করেছে; তেমনি করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা, স্বাস্থ্যবিধি মানতে পাঠকসহ দেশের মানুষকে উৎসাহিত করে যাচ্ছে।
দেশের পরিবর্তনশীল রাজনীতির বাঁকে বাঁকে ইনকিলাব কার্যত ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। খবর প্রচারে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে প্রাধান্য দিয়েছে; সমাজ, ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-নৃতাত্তি¡ক-রাজনৈতিক-দেশজ সংস্কৃতিক পরিচিতি, গণতান্ত্রিক শাসন, মানবিকতার প্রতি সম্মান জানিয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়েই সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা, সরকারের ভাল কাজে উৎসাহিত করা এবং খারাপ কাজে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছে গঠনমূলকভাবেই। শুধু খবরাখবর প্রচারের সংবাদপত্র নয়; ইনকিলাব প্রমাণ করেছে গণমাধ্যম মানে পাঠকদের কাছে আরো শিক্ষণীয় কিছু। যা ইনকিলাবের পরতে পরতে দৃশ্যমান।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন ‘চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়’। ইনকিলাব হয়তো সেই দশায় পড়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে বিজ্ঞাপন সঙ্কট, চলমান আর্থিক সঙ্কট, পৃষ্ঠা সঙ্কট চিরকাল থাকবে না। রাতের অন্ধকারের পর দিনের সূর্য্য উঠবেই। তখন পত্রিকার পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়বে, আরো উন্নত কাগজে ছাপা হবে। তবে সব সময় ইনকিলাবের পাশে রয়েছেন পাঠকরা। দেশ-বিদেশের হাজার মিডিয়ার ভীড়ে অগণিত পাঠকের সিক্ত ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস ইনকিলাবের অন্তহীন এই কর্ম-প্রচেষ্টার চলার পথে আরো সাহস-প্রেরণা যোগাবে। ইনকিলাব একটি আদর্শের নাম। কোনো কর্পোরেট হাউজ বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়। টাকা আয়ের মেশিন হবে এমন চিন্তা থেকে ইনকিলাব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইনকিলাব ‘শুধু দেশ ও জনগণের পক্ষে’ ছিল, আছে, থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।