Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

ভূত্বাত্ত্বিক গঠন এবং শক্তির রূপান্তরের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ ও বর্হিভাগের কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটে চলেছে। ভূমিকম্প বা ভূকম্পনের মধ্য দিয়ে ভূঅভ্যন্তরে শক্তি ও রূপান্তরের গাঠনিক প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়ে থাকে। বিশ্বের সাতটি প্রধান টেকটনিক প্লেটের মধ্যে তিনটি সক্রিয় প্লেটের সন্ধিস্থলে অবস্থিত হওয়ায় বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্প ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। সেটেলাইট ও অবজারভেটরি থেকে ঘূর্ণীঝড়, সাইক্লোন, গ্রহ-নক্ষত্র ও মহাজাগতিক বস্তুরাজির গতিবিধি সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব হলেও বিশ্বের কোনো দেশ অদ্যাবধি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। হাজার বছর ধরে ভূমিকম্প মানব সভ্যতার জন্য অন্যতম ভয়ঙ্কর ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। যেহেতু এর কোনো পূর্ব সতর্কতার বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা নেই, অতএব উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পসহিষ্ণু স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মান এবং দুর্যোগকালীন প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার প্রস্তুতিই হচ্ছে ভূমিকম্প মোকাবেলায় এখনকার করণীয়। বলা হয়ে থাকে, টেকটনিক প্লেটগুলোর সঞ্চরণ ও শক্তির স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় শতবছর পর পর বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি থাকে। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বিগত শতাব্দীর প্রথম দিকে বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতে বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল। ইন্ডিয়ান প্লেটের উত্তর-পূর্বে, ইউরেশিয়ান প্লেটের দক্ষিণে এবং বার্মিজ প্লেটের দক্ষিণে অবস্থিত বাংলাদেশ এখন আরেকটি বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে ভূত্বত্ত্ববিদদের ধারণা।
গত কিছুদিন ধরে সিলেটে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। সম্প্রতি সিলেটে টানা ৬ দফা ভূমিকম্পে এক ধরণের আতঙ্ক ও উত্তেজনা তৈরী হয়েছে। একে বড় ভূমিকম্পের সতর্কসঙ্কেত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইন্ডিয়ান প্লেটের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত আসামের ডাউকি ফল্টে বড় ধরনের চ্যুতি এবং শক্তির সঞ্চয় রয়েছে, ডাউকি ফল্টের সন্নিকটবর্তী হওয়ায় সিলেটে ভ‚মিকম্পের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আয়তন ও ঘনবসতিসহ সামগ্রিক বিবেচনায় পুরো বাংলাদেশই প্রবল ভূমিকম্পঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষত রাজধানী ঢাকা শহরের লাখ লাখ পুরনো,জীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন উচ্চমাত্রার যে কোনো ভূমিকম্পে অনেক মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এখন সিলেট ও ঢাকায় ভূমিকম্প সতর্কতা ও প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে মনোযোগ দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। বন্যাপ্রবণ বাংলাদেশে বন্যা ও সামৃদ্রিক জলোচ্ছাসের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে অভ্যস্থ হলেও সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। ঢাকা, সিলেট বা চট্টগ্রামের মত শহরে বড় ভূমিকম্পের বিপর্যয়ের পর অগ্নিকান্ড, উদ্ধার ও পুনর্বাসনের বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রস্তুতি ও মহড়া নিশ্চিত করতে এখনই কর্মপন্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
টেকটনিক প্লেটগুলোর নিচে শত শত বছর ধরে রাসায়নিক শক্তি জমা হচ্ছে। মাঝে মাঝে মৃদু ভূকম্পনের আলামত সেই শক্তির ইঙ্গিত বহন করছে এবং এসব মৃদু ভূমিকম্পকে যে কোনো মুর্হুতে বড় ভূমিকম্পের সংকেত হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে। অন্য সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিজ্ঞানভিত্তিক পূর্বাভাস দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও ভূমিকম্পের জন্য সে ধরণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বড় ভূমিকম্পের সম্ভাব্য অবস্থাকে বিবেচনায় রেখে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। নতুন ভবন ও স্থাপনাগুলোকে সম্ভাব্য ভূমিকম্পসহনীয় প্রযুক্তিসমৃদ্ধ করে নির্মাণের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে পরিকল্পিত উপায়ে ডি-কমিশন করার উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকাসহ সারাদেশে ১৭ লাখের বেশি বহুতল ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিগত দশকে জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা, চীনের শিচুয়ান, ফিলিপাইন এবং আজারবাইজানে ৬ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে হাজার হাজার ভবন ও স্থাপনা ধসে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ও মানবিক বিপর্যয় দেখা গেছে। বড় ভূমিকম্পের পর নিকটবর্তী সমুদ্রোপকুলে প্রলয়ঙ্করী সুনামিতে কয়েক মিটার উচ্চতার জলোচ্ছাসে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এসব বিষয়কে সামনে রেখে আমাদেরকে নিজেদের লজিস্টিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের প্রস্তুতি নিতে হবে। ভূমিকম্পের সময় সাধারণ নাগরিকদের করণীয় নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ, ধ্বংসস্তুপ অপসারণ, অগ্নিনিবার্পন এবং অবকাঠামোগত পুনর্গঠনের প্রস্তুতি থাকলে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। এ ক্ষেত্রে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সেবাখাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোকে নতুনভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। ভূমিকম্পের সম্ভাব্যতা নিরূপণে আধুনিক গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগসহ পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে এ ধরণের দুর্যোগের উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার উপযোগী ও সক্ষম করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভূমিকম্প

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন