Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার মোকাবেলায় দেশের সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা আবশ্যক। নতুবা মানুষ কর্মক্ষম হবে না। সকলকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে তুললেও কোন লাভ হবে না। উন্নতির সিংহভাগ ব্যাধির গহবরে চলে যাবে। দ্বিতীয়ত: হেলথ ইজ ওয়েলথ। সুচিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রধান শর্ত সুস্বাস্থ্য। সর্বোপরি স্বাস্থ্যখাতের বিনিয়োগ ব্যাপক লাভজনক। হু’র পরিচালক ক্ষেত্রপাল বলেছেন, ‘করোনা মহামারীর কারণে একটা গুরুতর সত্য প্রকাশ হয়েছে। আর সেটা হচ্ছে, অর্থনীতির স্বাস্থ্য জনস্বাস্থ্যের ওপরই নির্ভরশীল। যথার্থ জনস্বাস্থ্য নির্ভর করে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যব্যয়ের ওপর। সাধারণ সময়ে স্বাস্থ্যখাতে মাত্র ১ ডলার ব্যয় অর্থনীতিতে ২-৪ ডলার হয়ে ফিরে আসে। উচ্চ ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে এই ১ ডলার ২০ গুণ বেশি ফিরে আসে’। স্বাস্থ্য সম্পর্কে এত কল্যাণকর দিক সত্তে¡ও দেশে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা তেমন নেই, যা প্রমাণিত হয়েছে করোনাকালে। এই সময়ে বহু রোগী একের পর এক হাসপাতালে ঘুরেছে ভর্তি হওয়ার জন্য। ভর্তি হতে পারেনি সিট না থাকায়। ঘুরতে ঘুরতে পথিমধ্যে মারাও গেছে কেউ কেউ। কেউবা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তার ব্যয় মেটাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। অন্যসব চিকিৎসাও ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। করোনার টেস্ট নিয়েও মানুষের চরম ভোগান্তি হয়েছে। দেশের হাসপাতালের এই দৈন্য দশা আগেও ছিল। তবে করোনাকালে ব্যাপক বেড়েছে। ফলে স্বাস্থ্য রক্ষা নিয়ে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছে। এই অবস্থায় দেশে ভারতীয় স্ট্রেইন ও ভয়ংকর ব্ল্যাক ফাঙ্গাস দেখা দিয়েছে। মানুষের মধ্যে নয়া আতংক সৃষ্টি হয়েছে।
অথচ, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের অবকাঠামো ভালো। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু সুচিকিৎসা নেই কোথাও। এর প্রধান কারণ, প্রয়োজনীয় জনবলের ঘাটতি। এ ব্যাপারে বগুড়া আর্মি মেডিকেল কলেজের প্রভাষক, ডা. আহম্মেদ জুবায়েরের বক্তব্য, ‘হুর নীতি হচ্ছে, ডাক্তার : জনসংখ্যা অনুপাত ১ : ১,০০০; নার্স : পেশেন্ট অনুপাত ১ : ৩ (টিচিং হসপিটাল) ও ১ : ৫ (জেনারেল হসপিটাল), ডাক্তার : নার্স অনুপাত ১ : ৪, নার্স : বেড অনুপাত ১ : ৪। কিন্তু বর্তমানে দেশে বিদ্যমান আছে, ডাক্তার : জনসংখ্যা অনুপাত ১ : ১৯০০, নার্স : জনসংখ্যা অনুপাত ১ : ৬৬৪২, ডাক্তার : নার্স অনুপাত ১ : ২, নার্স : বেড অনুপাত ১ : ১৩। অর্থাৎ বর্তমানে দেশে কর্মরত ডাক্তারের সংখ্যা-৯৬,৫৭২ জন আর নার্সের সংখ্যা ৫৬,৭৭৩ জন। ফলে বর্তমানে ৬০ হাজার ডাক্তার ও ২.৮০ লাখ নার্সের ঘাটতি আছে।’ এছাড়া, স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি আছে নার্সের চেয়েও বেশি। দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তেমন নেই। যারা আছেন তারা মূলত রাজধানীভিত্তিক। তাদের সিরিয়াল পাওয়াও দুঃসাধ্য। ভিজিটও ব্যাপক। এসব অবস্থা চলছে বহুদিন যাবত। তবুও প্রয়োজনীয় নিয়োগ হচ্ছে না স্বাস্থ্যখাতে। দেশের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট জনবলের মানও সন্তোষজনক নয়! মেশিনারিজও খুবই স্বল্প। যেটুকু আছে, তারও বেশিরভাগই ব্যবহার হয় না। হয় নষ্ট, না হয় অপারেটর নেই। ওষুধও ঠিক মতো দেওয়া হয় না। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অপচয়, দায়িত্বহীনতা, অপরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদির অন্ত নেই। টিআইবি বলেছে, ‘করোনা মহামারীকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির মহোৎসব হচ্ছে।’ এই হচ্ছে সরকারি চিকিৎসার চিত্র। বেসরকারি চিকিৎসা অবস্থা কিছুটা ভালো। তবে ব্যয় অত্যধিক, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তবুও নিয়ন্ত্রণ নেই। সর্বোপরি দেশে জটিল রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা তেমন নেই। যেটুকু আছে, তা মূলত: ঢাকা কেন্দ্রিক।এমনকি সব মেডিক্যাল কলেজে হৃদরোগ, ক্যান্সার ও কিডনি চিকিৎসায় কোনো বরাদ্দ নেই। চিকিৎসকের অবহেলায়/ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুও অনেক। ইপিআই’র মতে, করোনা মহামারির আগে ৫০% প্রসব হতো বাড়িতে, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭৩%। বাড়িতে প্রসব হওয়ার কারণে মা ও শিশুর অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তাই শতভাগ গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর সময়ের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা জরুরি। অতিরিক্ত ওষুধ, হাই পাওয়ারের ওষুধ ও টেস্ট প্রদান বেশিরভাগ ডাক্তারের ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। শহর ও গ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থার বৈষম্য ব্যাপক। বাজেটের সব টাকাও খরচ করতে পারে না স্বাস্থ্যখাতের কর্তারা। টাকা ফেরত যায়, অথবা বছর শেষে গোঁজামিল দিয়ে হিসাব মিলিয়ে ব্যয় দেখায়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হয়েছে বাজেটের মাত্র ২৬%!
করোনার টিকা ক্রয়ে শুধুমাত্র ভারত নির্ভরতার কারণে চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ভারত চুক্তি মোতাবেক টিকা দিচ্ছে না। তাই এ পর্যন্ত মাত্র ৩.৫% মানুষকে দুই ডোজের টিকা দেয়া হয়েছে। বাকী মানুষকে টিকা দেয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা নেয়ার ব্যাপক চেষ্টা চলছে। কোভ্যাক্সের ১.৬ লাখ টিকা এসেছে। কোভাক্সের মোট ৬.৮০ কোটি টাকা পাওয়ার আশা রয়েছে। চীনের সিনোফার্মের ১.৫ কোটি টিকা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা পাওয়া গেলে কল্যাণ হবে। চীন এটা দিতে চেয়েছিল এক বছর আগে। তা নেওয়া হয়নি তখন। হলে চলতি সংকট সৃষ্টি হতো না। সরকারের টার্গেট ৮০% মানুষকে টিকা দেয়া। সেটা পূরণ হবে কি-না সংশয় রয়েছে। দেশে করোনার চিকিৎসা অপ্রতুল। যে টুকু আছে, তাতে আইসিইউ শয্যা কম। অক্সিজেনেরও সংকট রয়েছে। দেশের চিকিৎসাখাতের কিছু সুখবরও আছে। করোনা মহামারিতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্তব্য পালন করেছেন। তাতে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে মারাও গেছেন। তবুও তারা দায়িত্ব পালন অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া, দেশে কিছু উঁচুমানের চিকিৎসক আছেন। কিছু জটিল অপারেশনও করছেন তারা সফলভাবেই।
লাইসেন্সহীন ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফার্মেসির ছড়াছড়ি দেশব্যাপী। নকল, ভেজাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি এবং অধিক মূল্য আদায় ও প্রেসক্রিপশন ছাড়া আন্দাজে ওষুধ বিক্রিও ব্যাপক। এতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওষুধনীতি কার্যকর না হওয়ায় এসব হচ্ছে। ওষুধনীতি অনুযায়ী মডেল ফার্মেসিও করা হয়নি তেমন। এটা পর্যাপ্ত হলে ওষুধের অনিয়ম অনেক কমে যেত। এ অবস্থায় মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের প্রত্যয় নিয়ে গত ২৭ মে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত আর্মি ফার্মা লি.। এটা খুবই কল্যাণকর পদক্ষেপ। ২০১২ সালে জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি) প্রস্তাবে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। ২০১৯ সালেও ইউএইচসির পক্ষে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অথচ, হু’র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রোগীদের পকেটের টাকায় চিকিৎসা ব্যয় বেশি। বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবায় সরকারের খরচ হয় ২৬%, আর ৭৪% খরচ রোগীদের নিজস্ব। ফলে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর ১.১৪ কোটির বেশি মানুষ দরিদ্র হচ্ছে বাংলাদেশের! বাংলাদেশে প্রতি ১৪ লক্ষ মানুষের জন্য একটি মেডিকেল কলেজ রয়েছে, যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় আছে মাত্র একটি (আরও দু’টি করা হচ্ছে)। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তেমন তৈরি হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত: দেশের মেডিকেল শিক্ষা সেকেলে। শিক্ষার মানও খারাপ। তাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর মূল্যায়ন খুব কম। ভর্তির আসন সংখ্যাও কম। গবেষণাও হয় না তেমন। অথচ, বিশ্বে অনবরত নতুন নতুন ভয়ংকর ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে। তৎপ্রেক্ষিতে নতুন ওষুধ আবিষ্কৃত হয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তিও ব্যবহার হচ্ছে চিকিৎসায়। এমনকি ৫জি পর্যন্ত। টেলি মেডিসিনও চালু হয়েছে। এসবের সাথে সমন্বয় করে মেডিকেল শিক্ষা আধুনিক করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপীই। কিন্তু তার ধারে কাছেও নেই বাংলাদেশ!
দেশের ওষুধ শিল্পের ঈর্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। অভ্যন্তরীন চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ হয়ে ১৫০টি দেশে রফতানি হচ্ছে। এলডিসিভুক্ত দেশ হিসাবে পেটেন্ট সুবিধা পাওয়ায় এটা হয়েছে। তবে দেশে দামী ওষুধ উৎপাদনের হার খুব কম। তাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দ্বিতীয়ত করোনার টিকা উৎপাদন করার মতো সক্ষম কোম্পানির সংখ্যা খুব বেশি নেই। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর ওষুধের পেটেন্ট সুবিধা বন্ধ হবে। তখন চরম প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে। তাতে সফল হওয়ার জন্য ওষুধ কোম্পানিগুলোকে সক্ষমতা অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে এখন থেকেই।
আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ করা অগ্রাধিকারযোগ্য। কিন্তু বিশ্বে যত রকমের দূষণ আছে, তার সবই রয়েছে এ দেশে এবং তা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। দেশে যে পরিমাণ বনাঞ্চল থাকা দরকার তার অর্ধেকও নেই। মানহীন খাদ্যেরও অন্ত নেই দেশে। মাদকেও সয়লাব সারাদেশ। উপরন্তু নিত্য নতুন ভয়ংকর মাদক যুক্ত হচ্ছে, যার সর্বশেষ সংযোজন এলএসডি। ইয়াবা দেশের বহুল আলোচিত ও ব্যবহৃত মাদক। মাদকে যুব সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। উপরন্তু বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। দেশে নানা ধরনের দুর্ঘটনায়, বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহতের হার বিশ্বে সর্বাধিক। তামাকজাত পণ্য ব্যবহারেও বিশ্বসেরা। সুপেয় পানি ও মৌলিক স্যানিটেশন সুবিধার বাইরে রয়েছে বহু মানুষ। এসব কারণে বহু মানুষ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়তই। অনেক ব্যাধি মরণঘাতি। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিবার প্রতি একজন ডাক্তারের ব্যবস্থা করা হলেও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা হবে না। সার্বিকভাবে দেশের সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা চরম ভঙ্গুর। জবাবদিহি না থাকা, সরকারি বরাদ্দ স্বল্প এবং দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভাবেই এটা হয়েছে। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কম। তাই ধনী ও কর্তা ব্যক্তিরা বিদেশে চিকিৎসা করাচ্ছে। এতে প্রতি বছর দেশের প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য সচিব জানিয়েছেন। আর গরিব মানুষের বেশিরভাগ চিকিৎসাহীন থাকছে। ফলে নানা রোগে ভুগছে। অনেকের অকাল মৃত্যু হচ্ছে! উৎপাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় নিত্য নতুন ভয়ংকর ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে। তাতে জনজীবন বিপর্যুদস্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উন্নতি। তাই সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা জোরদার করা আবশ্যক।
দেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিকল্প নেই। তাই অবিলম্বে দেশের স্বাস্থ্যখাতের আমূল পরিবর্তন করে প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ করা অপরিহার্য, যার অন্যতম হচ্ছে, অতি দ্রুত চিকিৎসা খাতের সব দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দূর, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, ওষুধ ও মেশিন সরবরাহ, মানসন্মতভাবে ব্যাধিভিত্তিক চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট তৈরি, চিকিৎসায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও ওষুধনীতি পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা। তবে অগ্রাধিকারমূলক হচ্ছে, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, যার ভিত্তি হিসেবে সব ইউনিয়ন পরিষদ অফিস চত্বরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে সার্বক্ষণিক প্রাথমিক সুচিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করা। সেটা কমিউনিটি ক্লিনিক নামেও হতে পারে। কারণ, এটা কল্যাণকর ব্যবস্থা। এর খুব পরিচিতি আছে। হুও স্বীকৃতি দিয়েছে। এরপর উন্নত চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে উপজেলা পর্যায়ে। এরপর সব ব্যাধির চূড়ান্ত সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে জেলা পর্যায়েই, যাতে চিকিৎসার জন্য কাউকে ঢাকায় আসতে না হয়। স্বাস্থ্য খাতের সব নীতি পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য দেশব্যাপী নিয়মিত তদারকি করতে হবে, যা বিশাল কর্মযজ্ঞ। ফলে কেন্দ্রীয়ভাবে করা কঠিন। তদারকির দায়িত্ব স্থায়ীভাবে জেলা পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। বেসরকারি খাতের চিকিৎসা ব্যয় নির্ধারণ করা দরকার। রোগ প্রতিরোধ করার জন্য সব দূষণ, মাদক, ভেজাল, মানহীন খাবার বন্ধ, অপুষ্টি দূর করতে হবে। দেশের মেডিকেল শিক্ষাকে আধুনিক ও বিশ্ব মানের করতে হবে।
কাজগুলো খুবই ব্যয়বহুল। তাই স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ বাড়িয়ে কমপক্ষে জিডিপির ৬% করা দরকার জাতীয় বাজেটে। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ২০১২ সালে ২০ বছর মেয়াদি একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে। সে মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমিয়ে ৩২% করা হবে। এছাড়া, সর্বজনীন স্বাস্থ্য রক্ষা এসডিজির অন্যতম লক্ষ্য। এসব করার জন্য স্বাস্থ্যখাতের ব্যয় দ্বিগুণ করা অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞ ও নিরপেক্ষ লোক দিয়ে স্থায়ী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হেলথ কমিশন গঠন করা কল্যাণকর। দেশের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে সব কর্ম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে হবে। স্বাস্থ্যখাতের সকলের জাতীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি নিষিদ্ধ করতে হবে। নিয়মিতভাবে ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিতে হবে।এসব হলে স্বাস্থ্যখাতের সংকট ব্যাপক হ্রাস পাবে এবং অনেক উন্নতি হবে। সুচিকিৎসার সাথে মানুষের মরা-বাঁচা সম্পর্কিত। তাই চিকিৎসার সাথে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব অন্য পেশার মানুষের দায়িত্ব থেকে আলাদা, মহান। এ মহান দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা তাদের মানবিক কর্তব্য। স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। দেশে বিশ্বমানের বড় হাসপাতাল নির্মাণ করতে চীন, তুরস্ক ও সৌদি আরব প্রস্তাব দিয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে মানসম্মত চিকিৎসা সংকট হ্রাস পাবে। দেশীয় হাসপাতালগুলোও প্রতিযোগিতায় পড়ে মান বাড়াতে ও ব্যয় কমাতে বাধ্য হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন