Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

স্বামীকে ৬ টুকরোর নেপথ্যে দ্বিতীয় বিয়ে-প্রতিহিংসা

স্ত্রী ফাতেমা ৫ দিনের রিমান্ডে হত্যাকাণ্ডের বীভৎস বর্ণনা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাজধানীর মহাখালীর পৃথক জায়গা থেকে উদ্ধার করা ময়না মিয়ার ছয় টুকরো লাশের রহস্য উদঘাটন করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দ্বিতীয় বিয়ের কারণে প্রথম স্ত্রী তাকে কুপিয়ে হত্যার পর ছয় টুকরো করে ফেলে দেন। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত প্রথম স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী শুনানি শেষে রিমান্ডের এ আদেশ দেন। গত সোমবার ছয় টুকরার মধ্যে দেহ পড়ে ছিল মহাখালীর আমতলী সড়কে। দুই হাত ও দুই পা পুলিশ উদ্ধার করে মহাখালীর এনা বাস কাউন্টারের সামনের সড়ক থেকে। আর মাথা উদ্ধার করা হয় বনানীর-১১ নম্বরের লেক থেকে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফাতেমা খাতুনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ উত্তর বিভাগের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ঘটনার রহস্য উন্মোচন করা হয়। সে সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের একমাত্র আসামি নিহতের প্রথম স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে হারুন-অর-রশীদ বলেন, গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের আমতলী এলাকায় একটা নীল রঙের ড্রামের মধ্যে বনানী থানা পুলিশ একজন পুরুষ ব্যক্তির মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে। এক ঘণ্টা পর ১১টার পর মহাখালী বাস টার্মিনালের এনা কাউন্টারের কাছে একটা ব্যাগের মধ্যে উরু থেকে খণ্ডিত দুইটি পা এবং কাঁধ থেকে খণ্ডিত দুইটি হাতের অংশ উদ্ধার করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল পুলিশ।

এ বিষয়ে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ইউনিটের সঙ্গে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ ভিকটিমের পরিচিতি শনাক্ত করার জন্য চেষ্টা চালায়। আর ডিবির গুলশান বিভাগের একটি টিম নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তার স্বামী নিখোঁজ হওয়ার বিষয় নিশ্চিত হয়।

ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, নিহত ব্যক্তি বনানীর কড়াইল এলাকাতে তার প্রথম স্ত্রী ফাতেমার সঙ্গে কয়েকদিন ধরে বসবাস করছিলেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ বনানী থানার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির কোম্পানি অফিস থেকে আসামি ফাতেমা খাতুনকে গ্রেফতার করে।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে মশিউর রহমান বলেন, গ্রেফতার ফাতেমা জানান, গত ২৩ মে থেকে তার স্বামী নিহত ময়না মিয়া কড়াইল এলাকায় তার বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। পারিবারিক কলহ, টাকা-পয়সা বণ্টন ও একাধিক বিয়েকে কেন্দ্র করে ময়না মিয়ার সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। এক পর্যায়ে ফাতেমা পরিকল্পনা করে তার স্বামীকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে নিস্তেজ করেন এবং পরবর্তীতে জবাই করে লাশ গুম করেন।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক কড়াইল এলাকা থেকে ফাতেমা দুই পাতা ঘুমের ট্যাবলেট কিনে শুক্রবার রাতে জুসের সঙ্গে স্বামীকে খাইয়ে দেন। সারারাত ও পরদিন তার স্বামী ঘুমে অচেতন থকার পর সন্ধ্যার দিকে কিছুটা সম্বিত ফিরে পেয়ে স্ত্রীকে বকাবকি করে মারধর করতে গিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়েন।

এ সময় ময়না মিয়া পানি পানি বলে আর্তনাদ করলে ফাতেমা ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো জুস আবার তার মুখে ঢেলে দেন। এক পর্যায়ে ময়না মিয়া নিস্তেজ হয়ে খাটে পড়ে গেলে ফাতেমা তার ওড়না দিয়ে স্বামীর দুই হাত শরীরের সঙ্গে বেঁধে মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেন। এরপর তার বুকের উপরে বসে বাসায় থাকা নতুন ধারালো স্টিলের চাকু দিয়ে স্বামীর গলা কাটা শুরু করেন।

তিনি আরো বলেন, একপর্যায়ে ফাতেমার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে ময়না মিয়া নিজের হাত মুক্ত করে ফাতেমার হাতে খামচি এবং কামড় বসিয়ে দেন। এতে ফাতেমার রাগ আরও বেড়ে যায়। ফের ধস্তাধস্তিতে দু’জনেই খাট থেকে পড়ে গেলে ময়নার বুকের উপরে উঠে তার গলার বাকি অংশ ফাতেমা কেটে ফেলেন। সকাল হলে লাশ শুম করার জন্য ফাতেমা ধারালো চাকু দিয়ে ময়না মিয়ার হাতের চামড়া ও মাংস কাটেন এবং ধারালো দা দিয়ে হাড় কেটে খণ্ডিত অংশকে তিনটি ভাগে রাখেন।

ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ফাতেমা একটি লাল রঙের কাপড়ের ব্যাগে মাথা, শরীরের মূল অংশকে একটি নীল রঙের পানির ড্রামে এবং খণ্ডিত দুই পা ও দুই হাতকে একটি বড় কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখেন। এরপর তেরোশো টাকায় রিকশা ভাড়া করে প্রথমে আমতলী এলাকায় শরীরের মূল অংশ ফেলে দেন। পরবর্তীতে মহাখালী এনা বাস কাউন্টারের সামনে খণ্ডিত দুই হাত, দুই পা ভর্তি ব্যাগ রেখে দিয়ে চলে আসেন বাসায়। সেখান থেকে খণ্ডিত মাথা রাখা ব্যাগটি নিয়ে বনানী ১১ নম্বর ব্রিজের পূর্ব পাশ থেকে গুলশান লেকে ফেলে দিয়ে বাসায় আসেন ফাতেমা। গ্র্রেফতারের সময় ফাতেমার কাছ থেকে বোরকা, নিহতের রক্তমাখা জামাকাপড়, ধারালো ছুরি, ধারালো দা, বিষাক্ত পেয়ালা ও শীল-পাটা উদ্ধার করে পুলিশ।



 

Show all comments
  • নুরজাহান ২ জুন, ২০২১, ২:০৫ এএম says : 0
    এত ভয়ংকর মহিলা হতে পারে ?
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ+দুলাল+মিয়া ২ জুন, ২০২১, ৩:১২ এএম says : 0
    যেহেতু প্রমান হয়েছে দুই তিন দিনের ভিতর এই ভয়নকর মহিলাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হউক। যেহেতু অন্য কেউ এই সাহস না করতে পারে।এই মহিলা কে জেলে রাখবে রাষ্ট্রের লোকসান, ............টিকে খাওয়া না দেওয়াই ভালো হবে। অন্য দিকে কোট কাচারিতে নিয়ে যাওয়া কি দরকার এতে ঝামেলার। কারন পৃথিবীতে এমন পাপি নেই, মানুষ কে মানুষ এই অবস্থা করে।বিষয়টি ভয়নকর।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Sirajullah, M.D. ২ জুন, ২০২১, ৩:২১ এএম says : 0
    She is very skillful and intelligent. It looks like Police is much more clever to open up the secret.
    Total Reply(0) Reply
  • Fareya Islam ২ জুন, ২০২১, ৭:১৭ এএম says : 1
    নীতি কথা বলার মানুষ পাওয়া যায় কিন্তু উচিৎ যখন নিজের উপর পরে তখন কারোই ভালো লাগে না, এটা পুরুষ হোক আর নারী , এখন বিচার করতে কত মানুষ আসে যখন মহিলা স্বামী হারার কষ্টে ছিল তখন তো কেউ পাশে আসেনি
    Total Reply(0) Reply
  • Reshma Faruk ২ জুন, ২০২১, ৭:১৭ এএম says : 0
    এ রকম হাজার মা বোন আছে,জীবনে নীরবে সব হজম করে যাচ্ছে। কেউ স্টেপ নিতে পারে না। না ছাড়া যায়,না থাকা যায়! কেউ কেউ নিজেকে শেষ করে দেয়। কারণ, অবহেলা খুব ভয়ানক জিনিস।
    Total Reply(0) Reply
  • মিষ্টি মনি ২ জুন, ২০২১, ৭:১৮ এএম says : 0
    মারার কি দরকার। ছেড়ে দিলেই হত। অত্যাচার নির্যাতন কেন সহ্য করবেন? চাকরি করেন। বিন্দাস লাইফ চলত।
    Total Reply(0) Reply
  • Popy Chowdhury ২ জুন, ২০২১, ৭:২১ এএম says : 1
    কি পরিমাণ ঘৃণা আর ক্ষোভ জন্মাইলে এমন ভয়ঙ্কর কিছু মানুষ করতে দুঃসাহস করে!
    Total Reply(0) Reply
  • Shuptika Chowdhury ২ জুন, ২০২১, ৭:২৯ এএম says : 0
    ওই মহিলা এতোটা জঘন্য কাজ না করে ব্যাপারটা অন্যভাবে সমাধান করতে পারতো।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ এমদাদুল হক ২ জুন, ২০২১, ১১:১৭ এএম says : 0
    এমন জঘন্য মহিলা জগতে কম আছে।এর ঘুর রহস্য উদঘাটন করা হোক। আরো কেউ জড়িত আছে কিনা।পরে সকলের সুষ্ঠু বিচার করা হোক। তবে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি তাকে আল্লাহ জান্নাত দান করুক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ