Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভূমিকম্প হলেই টনক নড়ে সিসিকের

৫ বছর আগের উদ্যোগ, ভাঙা হয়নি ঝুঁকিপূর্ণ ৩২টি ভবন : ভবন ভাঙলে শেষ, রক্ষার বিনিময়ে আর্থিক ফায়দা নেন সিসিক সংশ্লিষ্টরা

ফয়সাল আমীন: | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

সিলেটে ভূমিকম্প হলেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে শুরু হয় সিসিকের তোড়জোড়। কিছুদিন দৌড়ঝাঁপ চললেও তারপর আবার নীরবতায় ঢেকে যায় সব আয়োজন। নৈপথ্যে পকেট ভারি করেন সিসিক সংশ্লিষ্টরা। গত ৫ বছর পূর্বেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছিল সিসিক। কিন্তু মাঝপথে সংস্কারের ধোঁয়া তুলে নির্লিপ্ত হয়ে যায় তারা। গত শুক্র ও শনিবার দফায় দফায় ভূমিকম্পের পর সিলেট জুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় বিপদের পূর্বাভাস এমন অভিমত বিশেষজ্ঞদের। সে কারণে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কিছুটা তৎপরতা হয়ে উঠছে প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোও চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এবার সেই তালিকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কোন ব্যবস্থা হবে নাকি পূর্বের মতো নীরব হয়ে যাবে সিসিক সেই প্রশ্ন সচেতন মহলে। ইতোমধ্যে নগরীর ২৫টি ভবনকে চিহ্নিত করেছে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে সিসিক। এরমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৬ মার্কেট ১০ দিনের জন্য বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
গতকাল সকাল থেকে আগামী ৯ জুন পর্যন্ত এ সকল মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে গত রোববার বিকেলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। মেয়রের নির্দেশনার পর এই বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বৈঠকে বসেন মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা। এদিকে, সিলেটে দফায় দফায় ভূমিকম্পের কারণ জানতে বিশ্লেষকদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠক ডেকেছে সরকার। আজ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ভার্চুয়ালি। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অফিসার মো. সেলিম হোসেনের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার বেলা তিনটায় ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও সচেতনতা বৃদ্ধি কমিটির জরুরি সভা করা আহ্বান হয়েছে। এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন কমিটির সভাপতি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালযয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরবর্তীতে করণীয় নির্ধারণে আলোচনা করা হবে সভায়।
জানা যায়, ২০১৬ সালে ভূমিকষ্পে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নগরের ৩২টি ভবনকে চিহ্নিত করে সিসিক। সে সময় ওই ভবনগুলো ‘অতি দ্রুত’ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় সিলেট সিটি করপোরেশন। মালিকপক্ষ না ভাঙলে নিজেরাই ভবনগুলো ভেঙে দেবে বলে জানায় সিসিক। এরমধ্যে দু’একটি ভবন ভাঙার কাজ শুরুও করে সিসিক। তবে এরপরই আটকে যায়। ভাঙার উদ্যোগ পরিণত হয় মেরামতে। সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা অন্যান্য ভবন হলো- কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ভবন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়, কাস্টমস ও ভ্যাট অফিস ভবন, সিলেট জেলা এসএ রেকর্ড অফিস, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, কারিগরী ইনস্টিটিউট, সিলেট সরকারী অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, মদিনা মার্কেট এলাকার কিছু বাসা-বাড়ি, আজমীর হোটেল, মাহমুদ কমপ্লেক্স এর পিছনের বাসা, সিটি সুপার মার্কেট বন্দরবাজার, জিন্দাবাজারের রহমান প্লাজা, মিতালী ম্যানশন, সিলেট মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, শেখঘাটের পুরাতন পাসপোর্ট অফিসের সাথের বাসা, সিলেট মদন মোহন কলেজের নবনির্মিত ভবন, পূর্ব শাহী ঈদগাহের খান কুঞ্জ, কালাশীল এলাকার মান্নান ভিউ, শুভেচ্ছা-২২৬ শেখঘাট, চৌকিদেখীর সরকার ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প ২৬/এ নম্বর বাড়ি, ভাতালিয়ার ১১৮ নম্বর বাসার সীমানা দেয়াল, পুরান লেনের কিবরিয়া লজ, ভার্থখলার বাবর ট্রাভেলস ও খার পাড়া মিতালী আবাসিক এলাকার ৭৪ নম্বর বাড়ি।
এরপর ২০১৯ সালের আরেক জরিপে জানানো হয় নগরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে ২৫টি। সেগুলো হলো- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উত্তর পাশের কালেক্টরেট ভবন-৩, জেল রোডস্থ সমবায় ব্যাংক ভবন, একই এলাকায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দরবাজারস্থ সিটি সুপার মার্কেট, জিন্দাবাজারের মিতালী ম্যানশন, দরগাগেইটের হোটেল আজমীর, বন্দরবাজারের মধুবন সুপার মার্কেট, টিলাগড় কালাশীলের মান্নান ভিউ। এছাড়া, নগরের শেখঘাট এলাকায় শুভেচ্ছা-২২৬ নম্বর ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প ২৬/এ বাসা, চৌকিদেখির ৫১/৩ সরকার ভবন, জিন্দাবাজারের রাজাম্যানশন, পুরানলেনের ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জাজাঙ্গাল মেঘনা এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ির একতা ৩৭৭/৭ ওয়ারিছ মঞ্জিল, একই এলাকার একতা ৩৭৭/৮ হোসেইন মঞ্জিল, একতা-৩৭৭/৯ শাহনাজ রিয়াজ ভিলা, বনকলাপাড়া নূরানি-১৪, ধোপাদিঘীর দক্ষিণ পাড়ের পৌরবিপণী মার্কেট ও ধোপাদিঘীরপাড়ের পৌর শপিং সেন্টার। এর মধ্যে পুরানলেনের ৪/এ কিবরিয়া লজটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। গত শুক্র ও শনিবার কয়েকদফা ভূমিকম্পের পর রোববার এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিদর্শনে যায় সিসিক। পরিদর্শন শেষে সিসিকের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন/ইমারতের তালিকায় থাকা সুরমা মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেট, সমবায় মার্কেট, মিতালী ম্যানশ্যান ও রাজা ম্যানশন মার্কেট আগামী ১০ দিনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়। এদিকে জিন্দাবাজারের জেন্টস গ্যালারী নামক একটি দোকান ও ফনিটুলার একটি আবাসিক ভবন ১০ দিনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়। সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন এবং ফায়ায় সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাছ থেকে নকশা অনুমোদন না করিয়ে এবং মাটির পরীক্ষা ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে এসব বহুতল ভবন। এ ছাড়া প্রায় শতাধিক ভবন রয়েছে যেগুলো নির্মাণ করা হয়েছে দীর্ঘদিন আগে। এসব ভবন এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে ফাটল ধরা এসব ভবনে ঝুঁকি নিয়েই চলছে বসবাস। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবনের ব্যাপারে এত দিন অনেকটাই উদাসীন ছিল সিলেট সিটি করপোরেশন।
উদ্যোগ নিয়েও কেনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভাঙা হয়নি এমন এক প্রশ্নের জবাবে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ভাঙার কাজ শুরু হলে, পরে বিশেষজ্ঞরাই ভবনগুলো না ভেঙে পরামর্শ দেন সংস্কারের। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, ভবন ভাঙার উদ্যোগ নেয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছিল সিসিক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিসিক

৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ