পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সেক্টরগুলোর মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা সবথেকে বেশি হুমকির মুখে। বেশ কিছু প্রশ্ন এখন সবার মনে। দেশের অচল হয়ে যাওয়া শিক্ষা ব্যবস্থা আদৌ পুনরুদ্ধার হবে কিনা? নাকি এভাবে চলতে থাকবে বছরের পর বছর? এভাবে চললে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী? শিক্ষার্থী, অভিভাবক থেকে শুরু করে সকল স্তরের জনগণের ভিতর এখন এসব প্রশ্ন সারাক্ষণ প্রাধান্য পায়। সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের ছুটি বর্ধিত করা এমন ইঙ্গিত বহন করে যে, করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালুর সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ। তবে লাগাতার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিসঙ্গত সেটাও নীতি নির্ধারকদের ভেবে দেখা উচিৎ। কেননা, বিশ্বের কেউই জানে না, এই ভাইরাস পুরোপুরি নির্মূল হতে কতদিন সময় লাগবে। ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ ইতোমধ্যে সকলকে হুঁশিয়ার করেছে যে, করোনা ভাইরাসের সাথে খাপ খাইয়ে, যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েই সবাইকে চলতে হবে। কবে পৃথিবী এই ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পাবে, সেটার সুচিন্তিত টাইমলাইন কারও জানা নেই। এই সব হুঁশিয়ারি এমনই ইঙ্গিত দেয় যে, আমাদের বেঁচে থাকার তাগিদে যাবতীয় মৌলিক বিষয় মহামারির ভিতরেই বিকল্প বেছে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তা না হলে মানব সভ্যতা হুমকির মুখেই পড়বে, সেটা অনুমেয়। তাই নীতি নির্ধারকদের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শূন্যের কোটায় নেমে আসার পরেই শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় সচল হবে, এই ভাবনাটা পুরোপুরি যৌক্তিক নয়।
যদি সরকার তার সিদ্ধান্তে পুরোপুরি অটল থাকে এবং মনে করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের এখনো খুলে দেওয়ার সময় আসেনি, তাহলে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা উচিৎ। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা যদি চালিয়ে যেতেই হয় তাহলে বেশ কিছু বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। কেননা একজন গরীব, খেটে খাওয়া দিনমজুরের সামর্থ্য নেই তার ছেলেমেয়ের জন্য একটা স্মার্ট ডিভাইস কিনে তাকে ইন্টারনেটের খরচ যুগিয়ে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার। সে ক্ষেত্রে সরকারের সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করে তবেই অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় গতি আনা যেতে পারে। সেই সাথে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা নিয়েও ভাবা উচিৎ। কেননা, ধীরগতির ইন্টারনেট সেবার নিম্নমান কখনো অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের পক্ষে সহায়ক নয়। দেশের বহু প্রত্যন্ত অঞ্চল আছে, যেখানে ইন্টারনেটের গতি খুবই নাজুক। এসকল বিষয় মাথায় নিয়ে সুচিন্তিত মতামতের ভিত্তিতে বর্তমানে অচল হয়ে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল করতে হবে।
অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম কখনো ক্লাসে স্ব-শরীরে ছাত্র-শিক্ষকের সামনাসামনি পাঠদানের বিকল্প হতে পারে না। তাই কিছু নিয়ম কানুন মেনে, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি অবলম্বন করে সকল শিক্ষার্থীর নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরার ঘোষণা দিলে অবশ্যই শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী সেটা করতে বাধ্য। বছরের পর বছর শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে থাকায় সবার মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা। এছাড়া মানসিকভাবেও অনেকেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের যার যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা আবশ্যক। প্রতিটা শিক্ষার্থী আজ দিশেহারা। ছোট ক্লাসের সকল কোমলমতি শিক্ষার্থীর মন যেমন ভেঙে গেছে, তেমনি তাদের সাথে বই পুস্তকের ব্যাপক ফারাক তৈরি হয়েছে। কিশোর বয়সের শিক্ষার্থীরা অনেকটা বেপরোয়া হয়ে গেছে। তাদের ভিতর দিনে দিনে তৈরি হচ্ছে খারাপ মনোভাব। যে সময়টা তারা স্কুল-কলেজ বা বই পুস্তকের পিছনে ব্যয় করত, সেটা তারা পার করছে মোবাইল বা টেলিভিশনের পিছনে অথবা বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডা দিয়ে। প্রতিটা অভিভাবক তাদের সন্তান নিয়ে অনেকটা ভীত ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিনাতিপাত করছেন। তারা ভাবছেন অনিয়মিত ও উদাসীন জীবন তাদের ছেলেমেয়েদের উৎশৃঙ্খল করে তুলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভিতর এই হতাশার পাল্লাটা অনেক বেশি। সকল শিক্ষার্থীর কাছে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সময় এবং তার পরবর্তী সময়টুকু জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর মাথায় সব সময় শিক্ষা জীবন শেষ করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের একটা চাপ থাকে। কিন্তু প্রায় দেড় বছর ধরে একরকম হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা তাদের হতাশা অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলেছে। প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে চাকরি পাওয়াটা এক সোনার হরিণের মতো। তার সাথে কোনো রকম আউট পুট ছাড়া অলস বসে থাকা তাদের অনেকটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বাধ্য হয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অনেকে বেছে নিচ্ছে মাদকের মতো ঘৃণ্য কাজ।
তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে সকল শিক্ষার্থীর লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া অত্যাবশ্যক। যদিও বিগত সময়ে যে অপূরণীয় ক্ষতি শিক্ষার্থী তথা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় হয়েছে সেটাকে পুষিয়ে নিতে বহু সময়ের দরকার। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমে গতি আনলে সেই অপূরণীয় ক্ষতির কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। সে উদ্দেশ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নিজের কিছু মতামত শেয়ার করছি। দেশের নীতি নির্ধারকরা বিষয়গুলো ভেবে দেখতে পারেন।
আমার জানা মতে, দেশের প্রতিটা স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরে প্রতিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশ দ্বারে কিছু গার্ড দায়িত্ব পালন করতে পারে। তাদের কাজ হবে কেউ যেন মাস্ক ব্যতীত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না পারে। প্রবেশের সময় সকলকে বাধ্যতামূলক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাসে উপস্থিত হতে হবে। প্রতিবার প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশের সময় সকলের তাপমাত্রা মেপেই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। প্রতিটা ক্লাস রুমে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠ দান শুরু করা যেতে পারে। পুরো ক্লাসের শিক্ষার্থীদের দুই শিফটে ভাগ করে প্রতি বেঞ্চে এক জন করে বসিয়ে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই যাদের পরীক্ষা আসন্ন তাদের প্রাথমিকভাবে প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে বাকিরা স্থান পাবে। ক্লাস রুমগুলোতে পর্যাপ্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করে প্রতিনিয়ত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সেগুলো ব্যবহারের জন্য তদারকি করার জন্য একজন থেকে দুইজন ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। তদারকি করার জন্য আলাদা লোক নিয়োগের কোন দরকার নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পিয়ন বা করনিক এই দায়িত্ব পালন করতে পারে। এগুলো খুবই কঠিন কোন দায়িত্ব না। গেল এক বছরের বেশি সময় ধরে সকল শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থী থেকে দূরে আছেন। দুই শিফটে ক্লাসের ব্যবস্থা করলে হয়ত শিক্ষকদের উপর একটু বাড়তি চাপ পড়বে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সকল শিক্ষককেও সেটা বিবেচনা করতে হবে।
যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল আছে সেগুলোও খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিচরণের স্থান বিশেষ করে ক্যান্টিন, ডাইনিং রুম, টিভি রুম, পেপার রুমের মতো স্থানগুলোতেও একই পদ্ধতি ব্যবহার করে সবাইকে প্রবেশে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে ক্যাম্পাস খোলার সাথে সাথে ছোট খাট সচেতনতামূলক সেমিনারের ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করার মতো পদক্ষেপ প্রাথমিকভাবে নেওয়া যেতে পারে। এই সচেতনতামূলক সভা বা সেমিনারে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সভা বা সেমিনার প্রতি সপ্তাহে বা ১৫ দিনে একবার সকল ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের প্রতিটা ভবনের প্রবেশদ্বারেও এক থেকে দুইজন গার্ড তদারকি করবে। তারা সবাইকে তাপমাত্রা মেপে, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তবে ক্লাস রুমে প্রবেশের অনুমতি দেবে। এক্ষেত্রে অনেকেই মাস্ক পরতে ভুলে গেলে বা মাস্ক কাছে না থাকলে সেখানে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে তাৎক্ষণিকভাবে মাস্ক সরবরাহ করার জন্য। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রবেশের সময় বাধ্যতামূলক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের খরচ প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় বা স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ বহন করবে। এগুলো খুব বেশি ব্যয়বহুল না। শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় পুরো জাতির যে ক্ষতি তার কাছে এই সামান্য অর্থ একেবারে নগন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট ম্যাচিউর। তারা নিজেরাই সচেতন। তাদের নিয়ে যদি সচেতনতামূলক সংক্ষিপ্ত সেমিনার দু’য়েকবার করা যায়, তাহলে বাড়তি সচেতনতা তাদের ভিতর কাজ করবে। এই বিষয় গুলো চীনারা অহরহ করে থাকে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে চীনারা সবসময় সচেতনতামূলক ভিডিও, সেমিনার করেই চলে। আর সেসব কারণেই চীনে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সকল শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। তাদের সচেতনতামূলক বিষয়ের ভিতর আরও কিছু বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হয়। সকল শিক্ষার্থী প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাদের অ্যাপে প্রতিদিনকার স্বাস্থ্য বিষয়ক আপডেট দেয়। কোন রকম কফ, কাশি এগুলো আছে কিনা। শরীরের তাপমাত্রা কত সেটাও নিজেরা মেপে অ্যাপে তথ্য দেওয়া লাগে। আমাদের ক্ষেত্রে অ্যাপ চালু করা না গেলেও যেকাউকে ভলেন্টেয়ারি দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলের প্রতিটি ফ্লোরে দুই বা তিন জন ভলেন্টিয়ার অন্যদের তাপমাত্রা প্রতিদিন রেকর্ড করবে এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীর নাম সম্বলিত নির্দিষ্ট লিস্টে সেগুলো প্রতিদিনকার আপডেট লিখে রাখবে। কারও ক্ষেত্রে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দেখলে তার টেস্টের ব্যবস্থা করে যদি পজেটিভ কেজ হয় তাহলে সাথে সাথে আইসোলেশন করে পর্যবেক্ষণে রাখা বা উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়া আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের চলাচল সীমিত রাখার ব্যাপারে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা যেতে পারে। ক্লাসের বাইরে অন্যান্য জায়গায় না যাওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে। যেমন প্রতিটি শিক্ষার্থী আবাসিক হলের গেট থেকে বের হওয়ার সময় নির্দিষ্ট লগ বইতে নিজের নাম, রুম নম্বর, মোবাইল নম্বর, স্টুডেন্ট আইডি সহ কোথায় যাচ্ছে, ফেরার সম্ভাব্য সময় এবং ফিরে প্রকৃত সময় লিপিবদ্ধ করার বিষয়টিও প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। যেগুলো দেশের অনেক ট্রেনিং প্রতিষ্ঠানে বহু আগে থেকেই চালু আছে। এগুলো চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিয়মিত সেটার তদারকি করতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে যত্রতত্র না চলে একটা জবাবদিহির ভিতর থাকবে এবং তাদের চলাচল সীমিত থাকবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে এসব নিয়ম কানুন সুচারুভাবে পালন করে ভেঙে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার ছাড়া আদৌ কোন বিকল্প পথ সামনে আছে বলে মনে হয় না। আমাদের দেশের ইন্টারনেটের গতি, সার্বিক ব্যবস্থাপনা, কোনভাবেই অনলাইন শিক্ষার উপযুক্ত নয়। আর অনলাইন শিক্ষা কোনভাবেই ক্লাসে স্বশরীরে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বিকল্প হতে পারে না, সেটা ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষক, অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা বুঝে গেছেন। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তো কোনভাবেই সম্ভব নয়। কেননা প্রাথমিকের স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে সামাল দেওয়াই শিক্ষকদের অনেকটা দুরহ হয়ে পড়ে, সেখানে তাদের অনলাইনে পাঠদান কতটা ফলপ্রসূ হবে, সেই বাস্তবতা আমারা সবাই অনুমান করতে পারি। সেইসাথে এই দুর্দিনে দেশের সকল মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সামর্থ্য কতটুকু সেটাও ভেবে দেখা উচিৎ।
করোনা আতঙ্ক দেশের মানুষের এখন অনেকটা সয়ে গেছে। তাই অনেকেই করোনাকে এখন তেমন তোয়াক্কা করে না। সেটা ভালোভাবে প্রমাণিত হয়েছে গেল ঈদে, সকল নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মার্কেটগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যখন চলছে মৃত্যুর মিছিল, অক্সিজেন সংকট, চিকিৎসা সামগ্রীর জন্য হাহাকার, তখন আমাদের দেশের জনগণ ছিল শপিংয়ে ব্যস্ত। কোন নিষেধাজ্ঞা তাদের শপিংকে দমাতে পারেনি। সরকার বহুভাবে বহু নিয়ম প্রয়োগ করেছে, কিন্তু তেমন কোন ফল দেখা যায়নি। মানুষ ঠিকই সকল বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে তাদের প্রয়োজন মিটিয়েছে। আমাদের দেশের জনগণকে কোন বিধিনিষেধ দিয়ে ঠেকানো সম্ভব নয়। আর সেটি সম্ভব নয় বলেই করোনা সংক্রমণ পুরোপুরি শূন্যের কোটায় আনাও অনেক সময়ের ব্যাপার। অন্ততপক্ষে ছয় মাসের ভিতর নয়।
শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের অন্য সব কিছু কথিত ‘সীমিত আকার’ বা যে গতিতেই হোক স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে নিশ্চয়ই বাধা থাকার কথা না। নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে ভেবে দেখা উচিৎ। খোলার পরে যদি কোনো খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সেটি স্থগিত করা খুব কঠিন কাজ নয়। দেশের অন্য সব সেক্টর যখন পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে বর্তমানে স্বাভাবিক হয়ে গেছে, সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারেও এই পরীক্ষামূলক পদ্ধতি চালানো যেতে পারে। অন্ততপক্ষে সবার জন্য না করে যাদের শিক্ষা জীবন সমাপ্তির পথে স্নাতক শেষ পর্বের বা স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে চালু করে দেখা যেতে পারে।
পরিশেষে এটুকু বলতে চাই, রাজনৈতিক কারণ, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নায্য দাবি আদায়ের কারণসহ অন্যান্য বিভিন্ন কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অপ্রত্যাশিত বন্ধ শিক্ষার্থীদের অনেক পিছিয়ে দেয়। সেশন জটে ভুগতে থাকে বছরের পর বছর। যেটা শিক্ষার্থীদের নিজের দেশে চাকরির আবেদনসহ বাইরের উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষা গ্রহণের আবেদনের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। শুধুমাত্র ‘সেশন জটের’ ওই জাতাকলে পড়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পিছিয়ে পড়তে হয় অনেক নায্য অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা থেকে। যেগুলো একটি জাতির উন্নতির প্রধান অন্তরায়গুলোর মধ্যে অন্যতম। সেই সাথে বাড়তি উপদ্রব হিসেবে বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান পরিস্থিতি এই সেশন জটের পাল্লাকে অনেক ভারী করবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিটি শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখে সুন্দর, সুখী, সমৃদ্ধ দেশ, জাতি ও সমাজ গঠনের। তাই দেশের নীতিনির্ধারকদের উচিৎ, চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা।
লেখক: গবেষক, ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ফুজো, ফুজিয়ান, চীন।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।