Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গত বছর ইসরাইলকে ৩৮০ কোটি ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে কোনো সংশয় নেই। বরাবরই একে অপরকে বিভিন্ন সময় সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইসরাইলের জন্য কত সাহায্য যায় তা নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজের দলের ভেতর থেকেই বেশ কিছু কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। গাজায় লড়াই শুরু পর এই চাপ আরও বেড়েছে। ডেমোক্রেট পার্টির মধ্যে বাম ঘরনার সবচেয়ে সুপরিচিত রাজনীতিক সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন ইসরাইলকে পাঠানো টাকা কোথায় কিভাবে খরচ করা হচ্ছে সেদিকে গভীর দৃষ্টি দিতে হবে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে ৩৮০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে ইসরাইলকে দীর্ঘমেয়াদী যে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার অধীনেই এই সহায়তা গেছে। আর এই সহায়তার প্রায় পুরোটাই ছিল সামরিক সাহায্য। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা ইসরাইলের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন যার অধীনে ২০১৭-১৮ সাল থেকে তার পরবর্তী ১০ বছর ইসরাইল ৩৮ বিলিয়ন ডলার বা ৩৮০০ কোটি ডলার সামরিক সাহায্য পাবে। তার আগে দশ বছরের তুলনায় ঐ সাহায্য বেড়েছে প্রায় ছয় শতাংশ। এছাড়া গত বছর ইসরাইলে নতুন অভিবাসীদের পুনর্বাসনে যুক্তরাষ্ট্র ৫০ লাখ ডলার সাহায্য দিয়েছে। বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে ইহুদিরা ইসরাইলে গিয়ে বসতি গড়তে চাইলে তাকে স্বাগত জানানোর নীতি বহুদিন ধরেই সেদেশে রয়েছে। ইসরাইলকে অত্যাধুনিক একটি সামরিক শক্তিধর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর ধরে সাহায্য করছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র কেনার জন্য তহবিল যোগানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫০টি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনেছে যা দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো যায়। প্রতিটি বিমানের দাম প্রায় ১০ কোটি ডলার। ২৭টি বিমান ইতোমধ্যেই ইসরাইল পেয়ে গেছে। বাকিগুলো পাওয়ার অপেক্ষায়। গত বছর ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২৪০ কোটি ডলার ব্যয়ে আটটি কেসি-৪৬এ বোয়িং পেগাসাস বিমান কিনেছে। এই বিমান থেকে আকাশে এফ-৩৫ বিমানে জ্বালানি তেল ভরা যায়। ২০২০ সালে ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্র যে সহায়তা দিয়েছে, তার মধ্যে ৫০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। এর মধ্যে রয়েছে ‘আয়রন ডোম‘ ক্ষেপণাস্ত্র নিরাপত্তা যা দিয়ে ইসরাইল রকেট হামলা প্রতিহত করে। ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের আয়রন ডোম নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ১৬০ কোটি ডলার দিয়েছে। এছাড়াও, গাজায় গোপন সুড়ঙ্গ শনাক্ত করাসহ বেশ কিছু সামরিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তৈরিতে ইসরাইলকে তহবিল দেয়া ছাড়াও বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইল সরকার সমরাস্ত্র কেনা এবং সামরিক প্রশিক্ষণে বহু টাকা খরচ করে যার অনেকটাই আসে যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়া সাহায্য থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি সাহায্য পেয়েছে ইসরাইল। ইউএসএইডের দেওয়া পরিসংখ্যান মতে, ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য গেছে ইসরাইলে। আফগানিস্তানকে দেওয়া সাহায্যের সিংহভাগই খরচ হয়েছে সেদেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য মার্কিন সৈন্যদের বিভিন্ন চেষ্টার পেছনে। কিন্তু এখন যখন মার্কিন সৈন্যরা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাচ্ছে তখন চলতি বছর সেদেশের জন্য মাত্র ৩৭ কোটি ডলার সাহায্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি সাহায্য পেয়েছে ইসরাইল। এছাড়া মিসর এবং জর্ডান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সাহায্যের অন্যতম প্রধান দুই গ্রহীতা। এই দুই দেশের সাথেই অতীতে ইসরাইলের যুদ্ধ হয়েছে কিন্তু তারা দুই দেশই পরে ইসরাইলের সাথে শান্তি চুক্তি করেছে। ২০১৯ সালে মিসর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১১০ কোটি ডলার সাহায্য পেয়েছে। জর্ডানও একই পরিমাণ সহায়তা পেয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় এসে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া মানবিক সাহায্যের কিছুটা (২৩ কোটি ৫০লাখ ডলার) ছাড় করেছেন। ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সাহায্য বন্ধ করে দেন। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে এত সাহায্য দেয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি ঐতিহাসিক। ১৯৪৮ সালে ইহুদিদের জন্য ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে তার প্রতি অব্যাহত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। তাছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপ‚র্ণ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। আর এই দুই দেশের লক্ষ্য অভিন্ন এবং গণতান্ত্রিক ম‚ল্যবোধের প্রতি তাদের পারস্পরিক প্রতিশ্রুতি রয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের রিসার্চ সার্ভিস বলছে, এই সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে এবং জোরদার করতে মার্কিন সহায়তা গুরুত্বপ‚র্ণ ভ‚মিকা রাখছে। মার্কিন প্রশাসন এবং দেশটির অনেক রাজনীতিক বহুদিন ধরেই ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অত্যন্ত গুরুত্বপ‚র্ণ একটি সহযোগী হিসাবে বিবেচনা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য বিষয়ক সংস্থা (ইউএসএইড) বলছে, মার্কিন সাহায্যের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাচ্ছে ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি এই সংস্থাটি বলছে, আমেরিকান সাহায্যের উদ্দেশ্য ইসরাইল যেন যথেষ্ট নিরাপদ থাকতে পারে যাতে তারা ফিলিস্তিনিদের সাথে এবং বৃহত্তর একটি আঞ্চলিক শান্তি স্থাপনে আস্থা এবং উৎসাহ পেতে পারে। ইসরাইল যাতে মধ্যপ্রাচ্যে হুমকি মোকাবিলা করতে পারে তা নিশ্চিত করা বহুদিন ধরেই মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির মুখ্য একটি উদ্দেশ্য। রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেট পার্টি দুটো দলই দশকের পর দশক ধরে কোনো বিতর্ক ছাড়াই এই নীতি অনুসরণ করে আসছে। ২০২০ সালেও ডেমোক্রেট পার্টি তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় ইসরাইলের প্রতি লৌহ-বর্ম সমর্থনের প্রতিশ্রুত দেয়। কিন্তু স¤প্রতি দলের বাম এবং প্রগতিশীল একটি অংশ ইসরাইলের প্রতি এতদিনের প্রশ্নাতীত এই সমর্থন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। ইসরাইলকে ৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার ম‚ল্যের অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রির যে প্রস্তাব প্রেসিডেন্ট বাইডেন স¤প্রতি অনুমোদন করেছেন তা স্থগিত করার দাবি তুলেছেন সিনেটর স্যান্ডার্সসহ কংগ্রেসে ডেমোক্রেট পার্টির বেশ কয়েকজন সদস্য। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসরাইল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ