Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

ঘূর্ণিঝড় যশ মোকাবিলা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

ঘূর্ণিঝড় যশের প্রভাবে সাগরে প্রবল ঢেউ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকায় মাছ ধরা ট্রলারগুলো উপক‚লে ফিরতে শুরু করেছে। বরিশাল-খুলনা উপকূলে সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা খুব কম। তবে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী করণীয় নিয়ে নোয়াখালীতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় যশ বরিশাল-খুলনা উপকূলে সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা খুব কম। তবে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো ইতোমধ্যে প্রাক-প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। রেড ক্রিসেন্টের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) প্রায় ৭৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল আহসান বাদল বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন। সভায় কমিটির সদস্য পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি, মহানগর পুলিশ কমিশনার, সব জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা যোগ দেন। সভায় উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা, সম্ভাব্য প্রাক-প্রস্তুতি, দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপড়তা নিয়ে আলোচনা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে সিপিপির ৭৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবকদের সাইরেন, মেগাফোন ও বিপদ সঙ্কেত সূচক পতাকা নিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলের ১৩টি জেলার ৪১টি উপজেলার ৩ হাজার ৭০১টি ইউনিটের ৭৪ হাজার ২০ জন স্বেচ্ছাসেবকের সাথে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৭টি আঞ্চলিক কেন্দ্র ও ঢাকার সদর দফতর থেকে নিজস্ব বেতার ব্যবস্থায় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিটকে মেগাফোন ও সাইরেন বাজিয়ে সতর্কতা জারির প্রস্তুতি ছাড়াও ৪ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত জারি হলে লালের মাঝে কালো রঙের প্রতীকসহ ১টি পতাকা উত্তোলন করতে বলা হয়েছে। একইভাবে ৫ থেকে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের জন্য ২টি এবং ৮ থেকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতের জন্য ৩টি পতাকা উড়িয়ে উপক‚লবাসীকে সতর্ক করতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও প্রয়োজনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি সরকারি স্থাপনাতেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে নিরাপদে রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে বয়স্ক পুরুষ ও নারী ছাড়াও শিশু ও গর্ভবতীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হবে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, ঘূর্ণিঝড় যশের প্রভাবে সাগর প্রবল ঢেউ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকায় মাছ ধরা ট্রলারগুলো উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে। গতকাল ভোর থেকে আতঙ্কে উপকূলীয় এলাকায় তীরের কাছে বিভিন্ন খালে ও নদীতে মাছ ধরা শতাধিক ট্রলার আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বঙ্গোপসাগরের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় যশ আগামীকাল আঘাত হানার কথা থাকলেও ইতোমধ্যে সাগর উত্তাল থাকায় দুর্যোগের মুখে পড়েছে অনেক মাছ ধরা ট্রলার। যশের প্রভাবে রাত থেকেই গভীর সমুদ্রে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ফিরে আসা জেলেরা।
বঙ্গোপসাগর থেকে ফিরে আসা জেলে আবুল হাসান বলেন, চার-পাঁচদিন সাগরে জাল ফেলেছি, মাছ নেই। হঠাৎ করে গত রোববার সন্ধ্যায় নদীর পানি খুব উত্তাল হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হলে আমরা দ্রুত ক‚লের দিকে চলে আসি। আরও অনেক জেলে এরকম ঝড়ের কবলে পড়েছে। ট্রলারের মাঝি হারুন শেখ বলেন, রেডিওতে ঝড়ের খবর শুনছিলাম। কিন্তু হঠাৎ মেঘ এবং ঢেউ শুরু হলে আমরা দ্রুত উপকূলে ফিরে আসতে বাধ্য হই। আমাদের মত অনেক ট্রলার ফিরে আসছে। সুন্দরবনের ভেতরেও অনেক ট্রলার আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় যশকে সামনে রেখে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন হতে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার মুন্সিগঞ্জে একটি অস্থায়ী কন্টিনজেন্ট মোতায়ন করা হচ্ছে। কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সকল অপারেশনাল বোট উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও ১টি বলগেট ও ১০টি ইঞ্জিনচালিত কাঠের বোট ভাড়া করা হয়েছে। বিসিজি বেইস মংলা ও মুন্সিগঞ্জ ১টি করে মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণের জন্য সমুদ্রে বিসিজিএস মনসুর আলী, কয়রা এলাকার জন্য বিসিজিএস স্বাধীন বাংলা, গাবুরা এলাকার জন্য বিসিজিএস তামজীদ এবং নলিয়ান এলাকার জন্য এইচপিবি গড়াই প্রস্তুত রয়েছে।
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, ঘূর্ণিঝড় যশ পরবর্তী করণীয় নিয়ে নোয়াখালীতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার দুপুরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান জানান, জরুরি অবস্থা মোকাবেলার জন্য উপকূলীয় এলাকার স্কুলগুলোর চাবি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধগুলো দেখভাল করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় যশ থেকে নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীদের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় ৩৯০ সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে উপজেলা গুলোতে সর্বমোট ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা মজুদ রাখা হয়েছে। দুর্যোগের আগে ও পরে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে মেডিকেল টিম গঠন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার জন্য জেলা-উপজেলা প্রশাসন, জেলা-থানা পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগের হটলাইন নম্বরগুলো ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। নম্বরগুলো জনসাধারণের জন্য প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ