Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউরোপের দরজায় কড়া নাড়ছে তুরস্কের নব্য অটোমান স্বপ্ন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

মার্চের শেষে ইউরোপীয় কাউন্সিল ইইউ-তুরস্ক সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে গ্রীস, সাইপ্রাস, আন্তঃককেশীয় দেশগুলো, মধ্য এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি আঙ্কারার নীতির বিস্তার করার কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, বিগত কয়েক বছর ধরে ইউরোপ এবং ইউরেশিয়ান মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের ক্রমবর্ধমান সাম্রাজ্যবাদি উচ্চাকাক্সক্ষার কারণে ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞ সম্প্রদায়গুলো দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করতে শুরু করেছে যে, ইইউ-তুরস্ক সম্পর্কের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশটি ইউরোপে তুরস্কের সুসংহত ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্প্রসারণের প্রতি আঙ্কারার প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে। শিক্ষাক্ষেত্র, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার মতো নরম শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বর্তমানে তুরস্কে তুর্কি সহযোগিতা ও সমন্বয় সংস্থা (টিআইকিএ) ২০টিরও বেশি দেশের জনগণের মধ্যে তুর্কিপন্থী বিশ্বদর্শন তৈরির জন্য কাজ করছে। যেমন, ফ্রান্সে মিনাউ কোয়ার্টারের স্ট্রসবার্গ মসজিদটি নিও-অটোমান স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি, যেখানে সর্বাধিক সংখ্যক তুর্কি বাস করেন। মজার বিষয় হচ্ছে, শহরটির সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মেয়র জ্যানে বার্সেঘিয়ানের অনুমোদন নিয়ে প্রকল্পটির অর্থায়ন আংশিকভাবে ফরাসী করদাতাদের উপর অর্পণ করা হয়েছিল।

জার্মানি, যেখানে বর্তমানে ৩ কোটিরও বেশি তুর্কি বাস করেন, সেখানে শহরগুলোতে তুর্কি সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব সম্প্রদায় তৈরি করে ইসলামী আইন এবং আধিপত্য বিস্তার করেছে। ব্রিটেনে সরকার শরিয়া আদালতের একটি বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছে।

অস্ট্রিয়ান শহর টেল্ফসে ধাতুশিল্প, পর্যটন এবং রেস্তোঁরা ব্যবসায় তুরস্কের ভাষণ শোনা যায়, তুরস্কের পণ্য স্থানীয় দোকানগুলোতে বিক্রি হয়। সেখানে অস্ট্রিয়ার দ্বিতীয় মুসলিম মসজিদ ‘এয়ুপ সুলতান’ খোলা হয়েছে এবং শহরটির রাজনৈতিক জীবন সম্পূর্ণরূপে তুর্কি বংশোদ্ভূত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

বেলজিয়ামের লিইজের নিকটবর্তী আর্দেনেসের পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত ফেমোনভিলে গ্রামটিকে ‘বেলজিয়ামের তুরস্ক’ বলা হয়। সেখানে বেলজিয়াম এবং ওয়ালোনিয়ার পতাকাগুলোর পাশে তুর্কি পতাকাও উত্তোলিত থাকে। ফেমোনভিলের বাসিন্দারা ঐতিহ্যবাহী তুর্কি পোশাক পরে, মুসলিম উৎসবে অংশ নেয় এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাসিন্দা ইসলাম গ্রহণ করেছে।

তুর্কি নৃবিজ্ঞানী আয়েশা চাওদার এবং সমাজবিজ্ঞানী কামাল বোজে নিশ্চিত যে, ইউরোপ ইতোমধ্যে শিশুদের পড়াশুনা থেকে শুরু করে পারিবারিক ঐতিহ্য পর্যন্ত জীবনের সকল ক্ষেত্রে এরদোগানের ইসলামি চেতনার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।

তুর্কি বংশোদ্ভূত অস্ট্রিয়ান অভিবাসী ইনান তুর্কম্যান তার ‘আমরা আসছি’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইউরোপীয়রা তা চাক বা না চাক, ইউরোপের ভবিষ্যত হ’ল তুরস্ক। তুর্কমেন জোর দিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা (ইউরোপীয়রা) আমাদের (তুর্কি) পছন্দ করুন বা না করুন, আপনারা আমাদেরকে গ্রহন করুন বা না করুন, আপনারা আমাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নে দেখতে চান, বা না চান, আমাদের প্রভাব ইউরোপে নিবিড়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আরও তরুণ, আরও অধিক এবং আরও উচ্চাভিলাষী। আমাদের অর্থনীতি দ্রুত হারে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা আরও শক্তিশালী।’ সূত্র : গ্রিক রিপোর্টার।



 

Show all comments
  • মাওলানা মামূনুর রশীদ ২৩ মে, ২০২১, ১২:১০ এএম says : 0
    ওরা চায় ফু দিয়ে ইসলামের আলো নিভিয়ে দিতে। আল্লাহ ইসলামকে বিকশিত করবেন ই যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Latif Latif ২৩ মে, ২০২১, ১২:৫১ এএম says : 0
    ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • MD AshiQure Rahman ২৩ মে, ২০২১, ১২:৫২ এএম says : 0
    অক্টোবর যুদ্ধের(4th Arab israel War) সময় ইসরায়েলকে সমর্থনকারী পশ্চিমা দেশগুলিতে তেল পাঠানোর উপর সৌদির বাদশাহ ফয়সাল এবং অন্যান্য আরব মুসলিম নেতারা নিষেধাজ্ঞা দেয় যার কারণে ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় বাদশাহ জানিয়েছিলেন "আপনি সেই ব্যক্তি যারা তেল ছাড়া বাঁচতে পারবেন না। আমরা মরুভূমি থেকে এসেছি, আমাদের পূর্বপুরুষরা খেজুর, দুধ খেয়ে বেঁচে থাকতো। আমরা আবার সেই আগের জীবনে ফিরে যেতে পারি।" এই নিষেধাজ্ঞার ফলস্বরূপ,বিশ্বে প্রথমবারের মতো তেলের দাম প্রায় চারগুণ বেড়ে গিয়েছিল যা 'প্রথম তেল শক'(first Oil Shock) নামে ইতিহাসে পরিচিত। এক ভাষণে বাদশাহ ফয়সাল বলেছিলেন - "যদি সমস্ত আরব একত্রিত হয়ে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় তবুও আমরা তাদেরকে কখনোই স্বীকৃতি দিব না।" ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ বাদশাহ ফয়সালকে তার সৎ ভাইয়ের ছেলে ফয়সাল বিন মুসাইদ গুলি করে হত্যা করে।
    Total Reply(0) Reply
  • মেঘদূত পারভেজ ২৩ মে, ২০২১, ১২:৫৩ এএম says : 1
    ইনশায়াল্লাহ, অটোম্যান স্বপ্ন আবারও পূরণ হবে। তুরস্ক ইউরোপ শাসন করবে শিগগিরই।
    Total Reply(0) Reply
  • নূরুজ্জামান নূর ২৩ মে, ২০২১, ১২:৫৩ এএম says : 0
    েএরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্ক তার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে পাক সেই দোয়াই রইলো।
    Total Reply(0) Reply
  • জান্নাতুল নাঈম মনি ২৩ মে, ২০২১, ১২:৫৪ এএম says : 0
    আবারও মুসলমানরা ইউরোপ নিয়ন্ত্রণ করবে। সময়ে ব্যাপার মাত্র। এরদোগানকে আল্লাহ সেই শক্তি দান করুক।
    Total Reply(0) Reply
  • Mamun ২৩ মে, ২০২১, ৫:৫৫ এএম says : 0
    আল্লাহ মুসলিদের উপর রহমত করো।
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Mahmud ২৩ মে, ২০২১, ৭:১৬ এএম says : 0
    ইনশাআল্লাহ করবে
    Total Reply(0) Reply
  • Mutasim ২৩ মে, ২০২১, ৯:১৯ এএম says : 0
    মুসলমানদের বড় দুটি দুর্বলতা ১-অনৈক্য: ঘরোয়া অনৈক্যেকে পূজি করে আমরা বৃহৎ স্বার্থেও এক হতে চাই না।একজন অমুসলিমের সাথে আমরা যতোটুকু নতজানু হই,নম্রতা প্রদর্শন করি‌ ভিন্ন মতের একজন মুসলিম ভায়ের সাথে কি আমরা এর সিকি পরিমাণও নম্র আচরণ করি? আহ!আমাদের নবী একজন নিকৃষ্ট মোনাফেকের সাথেও কতো উত্তম আখলাক প্রদর্শন করে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।জিহাদে যাওয়ার সময় মোনাফেকদেরও সাথে নিয়েছেন, বৃহৎ স্বার্থে আহলে কিতাবদেরও এমন এক কালেমার ছায়াতলে ডেকেছেন যে কালেমার ব্যপারে তাদের সাথে কোন অনৈক্য নেই।এর থেকে বোঝা যায় ঐক্য একটি বড় শক্তি।আর এ শক্তি থেকে আমরা এখন যোজন যোজন মাইল দূরে। ২-সময় জ্ঞানহীনতা: সময়ের ভাষা বোঝাও একটি বড় শক্তি।এ বিষয়টাকে আমরা একদম পাত্তা দিতে চাই না। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সময়ের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক‌ সিদ্ধান্ত নিতেন।সে সময়ে অমুসলিমদের অনিষ্টতা থেকে বাঁচতে সর্বাত্মক সামরিক শক্তি প্রস্তুত রাখতেন। তাঁর পরবর্তী খলিফাগণ সে সময়ের সর্বাধুনিক সমরাস্ত্র মুসলমানদের মজুদে রাখতেন।কোন কুফ্ফার শক্তি মুসলমানদের দিকে বাঁকা চোখে তাকানোর সাহসটুকু পেতো না‌,কারণ মুসলমানরা‌ ছিল সে সময়ের পরাশক্তি।বাহ্যিক‌ এ শক্তির অপরিসীম প্রয়োজনীয়তার কথা মহান রাব্বুল আলামীন কুরআনে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা দিয়েছেন-'কাফের জন্য তোমরা সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি অর্জন করো'। কুরআনের এই আয়াত অনুযায়ী বেশিরভাগ মুসলিম দেশ আমল করে না। যতোটুকু করে সেটা‌ও ভিন্নমতের মুসলিমদের দমন করার জন্য। সর্বোপরি মুসলমানদের আসমানী শক্তির বিকল্প কিছুই হতে পারে না। রব্বে কারীম মুসলিম খেলাফতের গৌরবোজ্জ্বল দিনগুলো আবারও ফিরিয়ে দিন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ শামসুল আলম ২৩ মে, ২০২১, ৯:২০ এএম says : 0
    মহৎ উদ্দেশ্য যা-ই থাক, কুটনৈতিক শিষ্টাচারের অভাব, কৌশলী আচরণের অভাব, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্কের অভাব এবং রগচটা মনোবৃত্তির কারনে এমনিতেই এরদোগান তার দেশকে বন্ধুহীন করে ফেলেছেন এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগলোকে (hostile) শত্রুভাবাপন্ন করে তুলেছেন; নিজদেশের বিদ্রোহীদের তিনি দমনকরতে চান,অথচ সিরিয়ার বিদ্রোহীগোষ্ঠী এবং কথিত জেহাদি সন্ত্রাসীদেরকে তিনি লালন করে চলেছেন। এটা এক সময় তার দেশের জন্য বুমেরাং হবে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে উচ্ছেদ করে বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোকে ক্ষমতায় বসালে দেশটির অখন্ডতা একদিনও টিকবে না। সিরিয়া তখন অসংখ্য উপদলে বিভক্ত হয়ে লিবিয়া-ইরাক-আফগানিস্তানে পরিনত হবে; এটিই ইসরাইল ও পশ্চিমা শক্তি চাচ্ছে। দৃশ্যপটে রাশিয়া এসে যাওয়ায় পশ্চিমাদের আকাংখা বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। ইসরাইলকে আরো সুরক্ষিত করতে পশ্চিমারা ইরাকের মতো সিরিয়াকে বিদ্রোহীগোষ্ঠীর মাধ্যমে নিজেদের নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা এটেছিল। এরদোগান তাদেরকে প্রত্যক্ষ ইন্দন যুগিয়েছে; যখন পশ্চিমাশক্তি ও ইসরাইল কর্তৃক কুর্দী বিদ্রোহীদের সাপোর্ট করার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে তখন এরদোগানের হুশ হলো, কিন্তু এর পরেও সিরিয়ার বিদ্রোহীদের পক্ষেই তিনি কাজ করছেন। শক্তিশালী কৌশলী কূটনীতি গ্রহন করা না হলে তুরস্কের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবু রায়হান ২৩ মে, ২০২১, ১১:১১ এএম says : 0
    ইনশাআল্লাহ,যে যাই বলুক না কেন মুসলমানরা অতি শীঘ্রই সারা বিশ্ব শাসন করবে।সেটা এরদোয়ানের মাধ্যমেও হতে পারে অথবা অন্য কারো মাধ্যমেও হতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • Waresh ali ২৩ মে, ২০২১, ১:১০ পিএম says : 0
    Muslim population in Germany in 2021 is 47.50 lak
    Total Reply(0) Reply
  • Ali+Hussain ২৩ মে, ২০২১, ১:৫০ পিএম says : 0
    7 million Turkish live in Germany, not 30 million.
    Total Reply(0) Reply
  • Aminul islam ২৬ মে, ২০২১, ১১:৩৩ পিএম says : 0
    I love turkey
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তুরস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ