পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর পল্লবীতে প্রকাশ্যে সাহিনুদ্দিন (৩৩) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তিনি এই হত্যাকান্ডের মূলপরিকল্পনাকারী ছিলেন। বৃহস্পতিবার ভোরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান। অন্যদিকে এ হত্যা মামলায় আরো দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. সুমন বেপারী (৩৩) ও মো. রকি তালুকদার (২৫)। এ দু’জনই প্রকাশ্যে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে বলে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জমিজমার বিরোধে গত ১৬ মে দুপুরে মো. সাহিনুদ্দিনকে সন্তানের সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যা মামলার ১নং আসামি ছিলেন এম এ আউয়াল। তাকে ভৈরবে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সাবেক এমপি আউয়াল তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব। ২০১৮ সালের নভেম্বরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলে পরের বছর ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি নামে একটি দল গঠন করেন। বর্তমানে তিনি দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে তরিকত ফেডারেশনের হয়ে সংসদ সদস্য হন এম. এ. আউয়াল। দলীয় গঠনতন্ত্রের ২৪ এর উপধারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নিয়ম বহিভর্‚ত কর্মকান্ডের কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিরপুর-১২ নম্বরের সিরামিকের মধ্যে এক বিঘার বেশি জমির মালিক ছিলেন নিহত যুবক মো. সাহিনুদ্দিন ও তার স্বজনেরা। জমিটির কিছু অংশ দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছিলেন সাবেক এমপি আউয়ালের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘হ্যাভিলি প্রপার্টি’। জমির মালিক একসময় তার জমি বিক্রির জন্য সাইনবোর্ড দেন। এসময় জমিটি কেনার জন্য আউয়ালের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের কথাবার্তাও হয়। কিন্তু দামে বনিবনা না হওয়ায় জমির মালিক তা বিক্রি করেননি। পরবর্তী সময়ে জায়গাটি আউয়াল জোর করে দখল করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে নিহত সাহিনুদ্দিন ও তার ভাই মাইনুদ্দিনকে প্রায়ই হুমকি-ধামকি দিচ্ছিলেন। সবশেষ তাদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলাও দেন। সেই মামলায় সাহিনুদ্দিন ও তার ভাই মাইনুদ্দিন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন। গত ২৭ রমজান তারা জামিনে মুক্ত হন। ঘটনার দিন ১৬ মে জমির মীমাংসার কথা বলে সাহিনুদ্দিনকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ওই যুবককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সাবেক এমপি আউয়ালের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তিনি কম মূল্যে এই জমি কিনে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন জমির মালিকের সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছিল না। এই ঘটনার পরই সন্ত্রাসীরা খুন করে সাহিনুদ্দিনকে।
নিহতের মা আকলিমা সাংবাদিকদের বলেন, জমির বিরোধেই তার ছেলেকে হত্যা করেছেন আউয়াল। তিনি (আউয়াল) চেয়েছিলেন, ছেলে হত্যা করলে জমি দখল করা তাদের জন্য সহজ হবে। ছোট ছেলেকে হত্যার পর এখন বড় ছেলে ও আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। যাতে আউয়ালের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নেই।
তিনি আরো জানান, পৈত্রিকভাবে মিরপুর সিরামিকসের ভেতরে এক বিঘার বেশি পরিমাণ জমির মালিক ছিলেন তার শ্বশুর। পরবর্তী সময়ে মালিক হন তার স্বামী জৈনুদ্দিন। স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেরাই জমি দেখভাল করছিলেন। আর আউয়াল কম টাকায় এই জমি কিনে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় তার দুই ছেলের নামে চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, মাদক মামলা দেয়া হয়। সবকিছুর জন্য তিনি সাবেক এমপিকে দায়ী করেন।
আকলিমা বলেন, গত বছর আউয়াল ১০ কাঠা জমি কিনতে আমাদেরকে তার অফিসে ডেকে নিয়েছিলেন। তখন আমরা বলেছিলাম, জমির ন্যায্য দাম দেন, জমি দিয়ে দেব। কিন্তু তিনি সব সময় গায়ের জোরে আমাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে চেষ্টা করেন। যতটুকু জানি, আউয়াল টাকা দিয়ে ২০/২৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী পালেন। যারা সব সময় আমাদের জমি দখল করতে মরিয়া ছিল। আমার স্বামী মারা যাবার আগে তার নামেও সাতটা মামলা দিয়েছিল আউয়ালের লোকজন। এসময় তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান।
জানা গেছে, ঘটনার দিন জমির বিরোধ মীমাংসার কথা বলে সাহিনুদ্দিনকে ডেকে নিয়ে যান সুমন ও টিটু নামে দুজন। পরে পল্লবীর সেকশন-১২ বøক-ডি এর ১২ নম্বর এলাকার একটি গ্যারেজে ঢুকিয়ে তাকে রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই দৃশ্য কেউ একজন মোবাইলে ধারণ করে। যা দেখে মনে হবে- সেই বিশ্বজিতের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি।
এই মামলায় এজাহারনামীয় ২০ আসামি হলেন- সাবেক এমপি আউয়াল, আবু তাহের, মো. সুমন, মো. মুরাদ, মো. মানিক, মো. মনির, মো. শফিক, মো. টিটু, আব্দুর রাজ্জাক, মো. শফিক, কামরুল, কিবরিয়া, মো. দিপু, মরন আলী, লিটন, আবুল, সুমন ওরফে নাটা সুমন, কালু ওরফে কালা বাবু, বাবু ওরফে বাইট্টা বাবু এবং বাবু ওরফে ইয়াবা বাবু।
দুই যুবক গ্রেফতার : ডিএমপির মিডয়া উইংয়ের এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর পল্লবী ও রায়েরবাগ এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা মিরপুর জোনাল টিম। রোববার (১৬ মে) বিকেল ৪টায় সন্ত্রাসীরা জায়গা-জমির বিরোধের বিষয়ে মীমাংসার কথা বলে সাহিনুদ্দিনকে সেকশনের ডি-বøকের একটি বাড়ির সামনে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। প্রকাশ্য দিবালোকে রোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভিকটিমের মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করা হয়। গত বুধবার থেকে মামলাটির তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা মিরপুর জোনাল টিম। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকা থেকে হত্যার পরিকল্পনা ও নেতৃত্বদানকারী সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। সুমনের দেয়া তথ্য মতে, পল্লবী থানার স্কুল ক্যাম্প কালাপানি এলাকা থেকে অপর অভিযুক্ত রকিকে গ্রেফতার করা হয়।
খুনের পর এমপি আউয়ালকে সুমন বলেন, স্যার ফিনিশ : রাজধানীর পল্লবীতে জমি সংক্রান্ত দন্দ্বের জেরে সন্তানের সামনেই কুপিয়ে হত্যা করা হয় স্থানীয় বাসিন্দা সাহিনুদ্দীনকে। পরে হত্যাকারী মো. সুমন বেপারী লক্ষীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান মো. আউয়ালের মোবাইলে কল করে বলেন, স্যার ফিনিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ১৬ মে রাজধানীর পল্লবীতে নিজ সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দীনকে সন্ত্রাসীরা চাপাতি, রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ওই ঘটনায় ১৭ মে নিহতের মা মোসা. আকলিমা রাজধানীর পল্লবী থানায় ২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা হওয়ার পর থেকে র্যাব এ ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে। হত্যাকান্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়।
তিনি আরও বলেন, সাহিনুদ্দিনের শরীরের উপরের অংশ এবং হাঁটু ও হাত-পায়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে মনির ও মানিক। ওই সময়ে বাবুসহ বেশ কয়েকজন আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে লুকআউট ম্যান হিসেবে নজরদারি করে। হত্যাকান্ডটি পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে সংঘটিত হয়। ঘটনা শেষে সুমন হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আউয়ালকে মোবাইলে ফোন করে জানায়, স্যার ফিনিশ। তাদের আরও অল্প কিছুক্ষণ কথা হয়। এরপর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতরা দেশের বিভিন্ন স্থানে গা ঢাকা দেয়।
আউয়াল সাহিনুদ্দীনকে কেন হত্যা করিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হত্যাকারী সুমন আউয়ালের বিভিন্ন ব্যবসা, জমি দখলের সঙ্গে জড়িত ছিল। আউয়ালের সঙ্গে সাহিনুদ্দীনের জমি নিয়ে যখন বনিবনা হচ্ছিল না, তখন সুমনসহ আউয়ালের অন্য অনুসারীরা একটি সাহিনুদ্দীনকে মেরে ফেলতে বলে। সাহিনুদ্দীনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ হত্যাকান্ডে ৩০ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।