Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনায় দিশেহারা মোদির গ্রামীণ ভারত

একদিনে রেকর্ড ৪৫২৯ জনের মৃত্যু

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২১, ১:১৪ পিএম

গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কঙ্কালসার চেহারা বের করে দিল কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, চিকিৎসা পরিষেবা নেই। কোভিড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। অসুস্থকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত নেই। সর্বশেষ মৃত্যু হলে সৎকারের লোক নেই। অগত্যা, গ্রামবাসীরা স্বজনদের মৃতদেহ হয় গঙ্গায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন, নতুবা ফাঁকা মাঠে সামান্য মাটি খুঁড়ে পুঁতে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। সবমিলিয়ে কোভিড মহামারীর মোকাবিলায় দিশাহারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গ্রামীণ ভারত।

এদিকে, ফের খানিকটা বাড়ল আক্রান্তের সংখ্যা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিন অনুযায়ী, ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৪ জন। ফের রেকর্ড গড়ল দৈনিক মৃত্যু। একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৪৫২৯ জনের। তবে আশা জাগাচ্ছেন করোনাজয়ীরা। একদিনে কোভিডমুক্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৮৫১ জন।
এখনও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দেশে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা। এই মুহ‚র্তে দেশটিতে চিকিৎসাধীন ৩২ লাখ ২৬ হাজার ৭১৯ জন। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় সাবধানবাণী শোনাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজেপির ডবল ইঞ্জিনে চলা উত্তরপ্রদেশের কথাই ধরা যাক। স¤প্রতি পঞ্চায়েত ভোট পেরিয়ে এসেছে যোগী-রাজ্য। সিংহভাগ পঞ্চায়েতে ভরাডুবি হয়েছে গেরুয়া শিবিরের। ফলে ওইসব পঞ্চায়েত এলাকায় কোভিড রোধে নাকি মন নেই স্থানীয় প্রশাসনের। এমনই অভিযোগ উঠেছে উত্তরপ্রদেশের বাসি পঞ্চায়েত থেকে। দিল্লি থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার পথ বাসি। গত কয়েকদিন ধরে কোভিডের বেয়াড়াপনা এখানে ভয়াবহ। আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৪০০। মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনেরও বেশি। এখনও প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। অথচ, চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাত গুটিয়ে স্থানীয় প্রশাসন। গ্রামে চিকিৎসকের দেখা নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অক্সিজেন নেই। বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই পড়ে থাকতে হচ্ছে আক্রান্তদের। কপালজোরে কেউ সুস্থ হচ্ছেন। কপাল মন্দ হলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন কেউ কেউ। গ্রামে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার পরিষেবাও পৌঁছয়নি। যাকে ব্যবহার করে অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘শহর ভারত’-এর কাছে সাহায্যের প্রার্থনা করবেন গ্রামবাসীরা। বাসিতে সদ্য নির্বাচিত ফার্মিং কমিটির সদস্য সঞ্জীব কুমার আক্ষেপের সুরে বলছিলেন, ‘গ্রামে কোভিড আক্রান্তদের মৃত্যুর বড় কারণ অক্সিজেনের অভাব। প্রবল শ্বাসকষ্টে মারা যাচ্ছেন বহু মানুষ।’
কোভিড বিধ্বস্ত গ্রামীণ ভারতে বাসি একটি উদাহরণ মাত্র। একইভাবে উত্তরপ্রদেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে গ্রামের পর গ্রাম। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশ সহ একাধিক রাজ্যের ছবিটা কমবেশি একই রকম। শহর ও শহরতলির সঙ্গে একরকম টেক্কা দিয়ে দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই কোনও না কোনও গ্রাম থেকে সক্রিয় আক্রান্ত কিংবা মৃত্যুর খবর আসছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’র রাস্তায় হাঁটছেন গ্রামবাসীরা। প্রশাসনের উপর ভরসা না রেখেই গ্রামে বাইরের লোকের প্রবেশের উপর অলিখিত ফতোয়া জারি করেছেন তারা। গ্রাম ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে বাঁশের ব্যারিকেড। কমিটি গড়ে রাত জেগে চলছে পাহারাও।

গ্রামে জনঘনত্ব বৃদ্ধির কারণেই দ্রæত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। তার উপর গ্রামের মানুষজনের কোভিড বিধি মানার ব্যাপারে গা-ছাড়া মনোভাবও অনেকাংশে দায়ি বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। ফলে, গ্রামীণ এলাকায় কোভিড রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি টিকাকরণের উপরও জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বাধ সাধছে ভ্যাকসিনের আকাল। গ্রামীণ ভারতে টিকার পর্যাপ্ত সরবরাহ করতে প্রতিমুহ‚র্তে ব্যর্থ হচ্ছে মোদির সরকার। বয়স্কদের টিকাকরণই বহু গ্রামে সম্প‚র্ণ হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে। তার উপর গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবায় এমন কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে পড়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদির সাড়ে সাত বছরের শাসনকাল। সূত্র : বর্তমান ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।



 

Show all comments
  • Monjur Rashed ১৯ মে, ২০২১, ৪:০৫ পিএম says : 0
    COVID-19 pandemic has revealed the actual scenario of India although the Indians take pride of being fourth largest economy in the world.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ