পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলি দখলদারদের তান্ডবের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসছে মুসলিম বিশ্ব। মসজিদের ভেতর নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সউদী আরব, ইরান, তুরস্ক, বাংলাদেশসহ প্রায় সব মুসলিম দেশ। তবে এই ইস্যুতে অনেকটাই নমনীয় সুর পশ্চিমাদের। মসজিদে ইসরাইলি তান্ডব নিয়ে বেশি কিছু না বললেও তারা সরব হয়েছে ইসরাইলের দিকে হামাসের রকেট ছোড়া নিয়ে। এ বিষয়ে প্রায় একই ধরনের কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো। জেরুসালেমের শেখ জাররাহ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে জোর-জবরদস্তি চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। সোমবার ভোরে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ঢুকে তান্ডব চালানোর পর সন্ধ্যায় গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে তারা। এতে প্রাণ হারিয়েছে শিশুসহ অন্তত ২২ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরাইলিদের এই বর্বর আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন।এদিকে, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার চলমান সংঘর্ষ থামাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাধার কারণে ওই বৈঠকের পর কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়া হয়নি। ক‚টনীতিকেরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ধারণা করছে, এই বৈঠক নিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যে খসড়া বিবৃতি তৈরি করা হয়েছে, তা বার্তা সংস্থা এএফপির হাতে এসেছে। তা থেকে জানা গেছে, পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ ও ইসরাইলের নতুন বসতি স্থাপন বন্ধের আহবান জানানো হবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে। এ ছাড়া পশ্চিম তীরে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে বিবৃতিতে। ক‚টনীতিকেরা বলেন, এই আলোচনার জন্য প্রথম খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছিল নরওয়ে। ওই প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত হতে পারে। নরওয়ের এই খসড়া প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে তিউনিসিয়া ও চীন। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘর্ষের শুরু চলতি সপ্তাহের শুরুতে। আল-আকসায় পবিত্র জুমাতুল বিদা আদায়কে কেন্দ্র এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। বলা হচ্ছে, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় সংঘর্ষের ঘটনা। এ সংঘর্ষের পর ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট মঙ্গলবার বলেছে, ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৭০০ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল সোমবার গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এই হামলায় কমপক্ষে ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৬৫ জন। এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া সংঘর্ষ থামাতে দুই পক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছে তারা। এদিকে গতকালের বৈঠক নিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির সঙ্গে কথা বলেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন ক‚টনীতিক। তাদের মধ্যে এক কুটনীতিকের মতে, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, পরিস্থিতি শান্ত করতে এই বৈঠক ‘পর্দার পেছনে থেকে কাজ’ করার মতো। তবে এটা ঠিক নিশ্চিত নয়, এই সময় বিবৃতি কোনো কাজে আসবে কি না। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন ক‚টনীতিক জানিয়েছেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি নিয়ে আরও আলোচনার পর একটি যৌথ বিবৃতি আসতে পারে সহিংসতা বন্ধের জন্য। জাতিসংঘের মিশনে যুক্ত একজন ক‚টনীতিক বলেন, উত্তেজনা প্রশমনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যেকোনো পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ওতপ্রোতভাবে কাজ করছে। গাজায় ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর কথা শোনার পর ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আসন্ন ঈদ উদযাপন বাতিল করে এদিন শুধু ধর্মীয় আচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সরকারি বার্তা সংস্থা ডবিøউএএফএতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে। নিহতদের ‘শহীদ’ আখ্যায়িত করে শোক পালনের জন্য তিনি পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। সহিংসতা থামাতে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মিসর, কাতার ও জাতিসংঘ হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। ইসরাইল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখল করে নেওয়া প‚র্ব জেরুসালেমকে নিজেদের ভূখণ্ড আত্মীকরণ করে নিলেও তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি, কিন্তু তারপরও পুরো জেরুসালেমকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে দেখে দেশটি। অপরদিকে ইসরাইল অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখন্ড নিয়ে রাষ্ট্র গড়তে চাওয়া ফিলিস্তিনিরা প‚র্ব জেরুসালেমকে তাদের রাজধানী করতে চায়। আরব নিউজ, ডেইলি সাবাহ, রয়টার্স, এএফপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।