Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান এরদোগানের

কদরের রাতে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ৯০ ফিলিস্তিনি আহত জেরুসালেমের সম্মান রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনা কেন্দ্র করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বিশ্ববাসীকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়েছেন। রোববার এক বিবৃতিতে এরদোগান বলেন, জেরুসালেম নিজেই একটি পৃথিবী এবং মুসলিমরা সেখানকার বাসিন্দা। টুইট বিবৃতিতে এরদোগান আরও বলেন, পবিত্র জেরুসালেমের সম্মান শ্রদ্ধা রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেখানকার মসজিদ আল-আকসায় হামলা করা মানে আমাদের ওপর হামলা করা। তিনি আরও বলেন, যে নিজেকে মানুষ মনে করে তিন ধর্মের পবিত্র স্থান জেরুসালেমের ওপর হামলা করার বিরোধিতা করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। তিনি মনে করেন, চুপ করে থাকা আর ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নেয়া একই কথা এবং ফিলিস্তিনির ওপর হামলায় সায় দেয়া। খবরে বলা হয়, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ড জেরুসালেমের মসজিদুল আকসায় রমজানের পবিত্র কদরের রাতের ইবাদতের জন্য শনিবার রাতে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ৯০ হাজার ফিলিস্তিনি মুসল্লি। কিন্তু ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা মোকাবেলা করেই রাত কাটলো তাদের। শুক্রবার রাতে সংঘর্ষের ঘটনার পরও কদরের রাত পালনে মসজিদুল আকসায় আসেন বহু ফিলিস্তিনি। ইসরাইলি চেকপোস্টের বাধা সত্তে¡ও তারা ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম এই স্থানে জড়ো হন। এশা ও তারাবির নামাজের পর ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা শুরু করে। এই সময় অনেক মুসল্লিকে গ্রেফতার করা হয়। অপরদিকে হামলায় অন্তত ৯০ জন আহত হয়েছেন বলে জানায় স্থানীয় চিকিৎসা কর্মীরা। এছাড়া জেরুসালেমের পুরনো দুর্গ শহরের দামিশক গেটের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও রাবার জড়ানো ধাতব গুলি, টিয়ার গ্যাস ও স্মোক গ্রেনেড নিয়ে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। অল্প কিছু দূরেই শেখ জাররাহ মহল্লায় ইসরাইলি আদালতের ফিলিস্তিনি পরিবার উচ্ছেদের আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের তৈরি শিবিরে তান্বড চালায় ইসরাইলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীরা। এর আগে শুক্রবার রাতে ইসরাইলি বাহিনী মসজিদুল আকসাসহ অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমের বিভিন্ন স্থানে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় অন্তত দুই শ’ পাঁচ জন আহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সূত্রে জানা যায়। গত ২৫ এপ্রিল জেরুসালেমের ইসরাইলি ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ছয় ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদ করে তাদের বাড়ি ইসরাইলি নাগরিকদের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন। এতে করে ১০ শিশুসহ ৪০ ফিলিস্তিনি বাসিন্দা তাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের বাস করা ঠিকানা থেকে উচ্ছেদের শঙ্কায় রয়েছেন। ইসরাইলি আদালতের ওই আদেশের পর থেকেই জেরুসালেমসহ পুরো ফিলিস্তিনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জেরুসালেমে ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে পশ্চিম তীর ও গাজায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। একইসাথে ইসরাইলে নাজারেথ ও জাফাসহ ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে মসজিদুল আকসায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় সমালোচনা ও নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় এক সমাবেশে ভাষণে তিনি ইসরাইলকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জেরুসালেমে হামলা সকল মুসলমানের ওপর হামলা এবং সকল মুসলমানের দায়িত্বই জেরুসালেমের সম্মান রক্ষা করা। এছাড়াও সউদী আরব, ইরান, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর জেরুসালেমে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। সোমবার ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর পুরো জেরুসালেম দখলের স্মরণে জেরুসালেম দিবস পালন করতে যাচ্ছে ইসরাইল। একই দিনে ইসরাইলি সুপ্রিম কোর্টের শেখ জাররাহ মহল্লায় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের আদেশের আপিলে রায় ঘোষণার দিন রয়েছে। বিবিসি জানায়, পুরোনো শহরের দামেস্ক গেটে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উদ্দেশে পাথর ছুড়ে মারে। জবাবে ইসরাইলী পুলিশ স্ট্যান গ্রেনেড ও পানিকামান ব্যবহার করে। ইহুদীবাদী পুলিশ জানায়, কমপক্ষে তাদের একজন কর্মকর্তা আহত হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের পূর্ব জেরুসালেমের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদের ঘটনায় সৃষ্ট ক্ষোভের কারণে পুরো রমজান মাস জুড়ে এ এলাকার সর্বত্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর আগে শুক্রবার জুমাতুল বিদার দিনে আল-আকসা মসজিদ এলাকায় মুসল্লিদের ওপর হামলা করে পুলিশ। ওই দিন দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়। ১৭ ইসরাইলী পুলিশ আহত হয়েছে বলেও দাবি করা হয়। শনিবার রাতে যখন মুসলমানরা পবিত্র শবে কদর পালন করছিল তখনই আবার হামলার ঘটনা ঘটে। আল-আকসা মসজিদ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অন্যতম শ্রদ্ধার স্থান, তবে এটি ইহুদিদের কাছেও একটি পবিত্র স্থান, যাকে তারা টেম্পল মাউন্ট হিসেবে জানেন। এই স্থানটিতে এর আগেও একাধিকবার ইহুদীবাদী পুলিশ হামলা চালিয়েছে। ইয়েনি শাফাক, আল-জাজিরা, মিডল ইস্ট আই, বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসরাইল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ