Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শ্রমজীবীদের কপালে করোনার ঘা

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০২১, ১২:০৩ এএম

করোনা মহামারি শ্রমিকের ললাটে প্রচন্ড আঘাত হেনেছে। করোনার প্রকোপ হিমালয়ের চূড়া থেকে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এই মরণব্যাধির কারণে মানুষের জীবন ও জীবিকা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। বৈশ্বিক মহামন্দা সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে, যার সর্বাধিক শিকার হয়েছে শ্রমিকরা। কোটি কোটি শ্রমিক কর্ম হারিয়েছে। আইএলও’র মতে, ‘করোনায় এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে ৮.১০ কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছে ২০২০ সালে।’ বিশ্বের অন্য অঞ্চলেও কম-বেশি একই অবস্থা হয়েছে। এই কর্মহারা শ্রমিকের অনেকেই বকেয়া পাওনাও পায়নি। এসব শ্রমিক চরম সংকটে পড়েছে। অথচ, এই সময়ে ধনীদের সম্পদ বেড়েছে অনেক। ফোর্বস’র হালনাগাদ তথ্য মতে, ‘বর্তমানে বিশ্বে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ২,৭৫৫ জন। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৩.১০ লাখ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৮ লাখ কোটি মার্কিন ডলার।’ অথচ, শ্রমিকরা কর্ম হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ফলে বৈশ্বিক দারিদ্র্য বেড়েছে। বৈশ্বিক খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়ে মূল্য অস্বাভাবিক হয়েছে। তাই শ্রমিকদের দিনাতিপাত দূরহ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা কতদিন চলবে তা বলা কঠিন। কারণ, করোনা সুনামি বন্ধ হয়নি। কবে বন্ধ হবে, তাও নিশ্চিত নয়। করোনা যতদিন থাকবে, মানুষের জীবন ও জীবিকার সংকট ততদিন চলবেই। করোনা শেষ হলেও এর আর্থিক ক্ষতির রেশ চলবে অনেক দিন, যার প্রভাব পড়বে শ্রমিকদের উপরই বেশি!

করোনার আগে শ্রমিকরা সংকটে পড়েছে বিশ্বায়নের কারণে। বিশ্বায়নে টিকতে না পেরে বহু দেশে বহু কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে অসংখ্য শ্রমিক কর্ম হারিয়েছে। এছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহারেও বহু শ্রমিক কর্ম হারিয়েছে। করোনা মোকাবেলা করতে গিয়ে লকডাউন দেয়া হয় বিশ্বব্যাপীই। তাতে সব কিছু বন্ধ থাকায় মানুষ জরুরি কাজসমূহ ঘরে বসেই করেছে প্রযুক্তির মাধ্যমে, যা সম্পন্ন হয়েছে খুব দ্রুত ও নিখুঁতভাবে। প্রযুক্তির সুফল মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়েছে সকলেই। এতে শ্রমিকের কর্ম সংকুচিত হয়ে পড়ছে। প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়ছে, শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা তত কমছে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলেছে, ‘২০২৫ সালের মধ্যে যন্ত্রের কাছে চাকরি হারাবে প্রতি ১০ জনের ৬ জন। তখন কর্মস্থলে মানুষ ও মেশিন প্রায় সমান কাজ করবে।’ অন্য এক আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র মতে, ‘২০৩০ সাল নাগাদ ৮০ কোটি শ্রমিক কর্ম হারাবে প্রযুক্তির কারণে।’ তবুও প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ হবে না। বরং বাড়তে বাড়তে বিশ্ব প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়বে। তখন শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা আরো কমে যাবে!

বাংলাদেশের শ্রমিকের অবস্থাও তথৈবচ। বৈশ্বিক মহামন্দা ও গত বছর লকডাউনের কারণে বেসরকারি খাতের লাখ লাখ শ্রমিক কর্ম হারিয়ে বেকার হয়েছে। একজন অর্থনীতিবিদের মতে, করোনায় শুধু লকডাউনের কারণে মোট কর্মগোষ্ঠির ৫৯% কর্মহীন হয়েছে। এর ৪০% কাজ ফিরে পাবে না। এই কর্মহারাদের মধ্যে নারী বেশি। এছাড়া, যাদের কর্ম আছে, তাদেরও বেতন কমেছে অনেক। অন্যদিকে, করোনার কারণে কর্ম হারিয়ে প্রায় ৫ লাখ প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছে। তারাও বেকার হয়ে পড়েছে। আরও কয়েক লাখ প্রবাসী ফেরত আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। নতুন কর্মসংস্থান নেই। অভিবাসনও হ্রাস পেয়েছে ব্যাপক। এছাড়া, গত জুলাইয়ে সরকারি সব পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের বিদায় করে দেয়া হয়েছে। তারাও বেকার হয়েছে। এভাবে দেশে বর্তমানে বেকারত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এদিকে পণ্যমূল্য গগনচুম্বী হয়েছে। এতে গরীব ও শ্রমিকরা ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে অনেক শ্রমিককে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার সোয়া এক লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে গত বছরের মধ্য সময়ে, যা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব ব্যাংকের। ব্যাংক উক্ত প্যাকেজের ৬০% বাস্তবায়ন করেছে। ফলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হয়নি তেমন। তাই শ্রমিকরা কর্ম ফিরে পায়নি। এদিকে, করোনায় কর্মহারা শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ ও কর্মরত শ্রমিকদের প্যাকেজ মিলে ১,৯৩৪ কোটি টাকা অব্যবহৃত রয়েছে প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্য। এভাবে শ্রমিকরা অবর্ণনীয় সংকটে পড়েছে। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের জরিপ মতে, ‘করোনার কারণে দেশের ৮০% পরিবার খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে ও ৬০.৫% পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়েছে।’ এদের অধিকাংশই শ্রমিক। ফলে দারিদ্র বেড়ে ৪২%-এ দাঁড়িয়েছে। অথচ, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, করোনা মহামারির এক বছরে দেশে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১০,০৫১ জন। গত বছর শেষে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩,৮৯০টি। এই অবস্থায় দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, যার তীব্রতা ভয়ানক। তাই দেশব্যাপী নতুন করে লকডাউন দেয়া হয়েছে। এতে নতুন করে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। করোনায় দেশের ৬৬% মানুষের আয় কমেছে বলে এক গবেষণায় প্রকাশ। দু’দফায় কর্মহারা ও দরিদ্রদের যে সহায়তা দেয়া হয়েছে,তা অতি নগন্য। তাই কর্মহারা শ্রমিকরা অতি দরিদ্র হয়ে পড়ছে। সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি ও পরিমাণ সামান্য। যেটুকু দেয়া হয়, তার বেশিরভাগ পায় সচ্ছল ব্যক্তিরা। তাই এ তালিকা সংশোধন করে শুধু প্রকৃত লোকদের তালিকাভুক্ত করা এবং এর আওতা বৃদ্ধি ও আর্থিক পরিমান বৃদ্ধি করা দরকার।

দেশের শ্রমিকের ৮৫% শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের, যাদের কর্ম অস্থায়ী, মজুরীও সামান্য, তারা অসংগঠিতও। তাই তাদেরকে নিয়ে ভাবে না কেউই। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থা কিছুটা ভালো। কিন্তু মজুরীর কোনো নির্দিষ্টতা নেই। সরকারি, গার্মেন্ট, চা ইত্যাদি খাতের মজুরী ভিন্ন ভিন্ন। জাতীয় নিম্নতম মজুরী না থাকায় এটা হয়েছে। দেশে বিদ্যমান মজুরীর পরিমাণও খুব কম। আইএলও’র গ্লোবাল ওয়েজ রিপোর্ট-২০২০-২১ মতে, ‘ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায় ২০১৯ সালে মাসিক ন্যূনতম মজুরি ছিল বাংলাদেশে ৪৮ ডলার (বাংলাদেশে শোভন মজুরি প্রয়োজন ২৫২ মার্কিন ডলার), আর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গড় ৩৮১ ডলার। ২০২০ সালে করোনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবস্থা আরও নাজুক হয়েছে।’ অথচ, এই রিপোর্ট মতে, ‘বাংলাদেশের শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধি এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ-৫.৮%।’ তবুও এ দেশের শ্রমিকের মাসিক ন্যূনতম মজুরী এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। ভেরিস্ক ম্যাপেলক্রপটের মডার্ন স্লোভারি ইনেডক্স-২০২০ মতে, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থার অবনতি হয়েছে। প্রথম বারের মতো এই দু’টি দেশ ‘ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে।’ এই অবস্থায়ও বেসরকারি খাতের নারী শ্রমিকরা মজুরীর ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছে। অর্থাৎ একই কাজ করে পুরুষ শ্রমিক যে মজুরী পায়, নারী শ্রমিক তার চেয়ে অনেক কম পায়। সর্বোপরি কর্মক্ষেত্রে প্রসূতি ছুটি, শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র ও পৃথক স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই।

অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার বেসরকারি খাতে নেই বললেই চলে। যেটুকু আছে, তাও মালিকের পকেটস্থ। বেশিরভাগ নেতা অশ্রমিক। ব্যতিক্রম কিছু হলেই চাকুরিচ্যুতি, মামলা-হামলা নির্ঘাত। এমনকি গুলি করে হত্যাও করা হয়। সম্প্রতি চট্টগ্রামের বাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৭ জন ও আহত হয়েছেন বহুজন। এরূপ নির্মম ঘটনা অনেক রয়েছে। শ্রমিকদের এই নির্যাতনের ক্ষেত্রে প্রশাসন, রাজনীতিবিদ ও সুশীলরা নির্বাক। এরা মালিক শ্রেণিরই প্রতিভূ। অবশ্য দেশে কিছু শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি খাতে। তবে তা খুব কল্যাণকর নয়। কারণ, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই সংগঠন রয়েছে অনেক। সেগুলো বহু ধারায় বিভক্ত, যার বেশিরভাগই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট। তাদের মধ্যে সরকারি দল বড় ও শক্তিশালী হয় সব সময়। ফলে তারা শ্রমিকের কল্যাণ করার চেয়ে দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নেই ব্যস্ত থাকে বেশি। এছাড়া, আন্তঃইউনিয়ন কোন্দল, হয়রানি, হানাহানি, মামলা, চাকরিচ্যুতি ইত্যাদিও ব্যাপক। দুর্নীতি, অনিয়ম ও কাজ না করার অভিযোগও রয়েছে বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে, যা শ্রম নীতির পরিপন্থী!

সার্বিকভাবে দেশের শ্রমিকের অবস্থা শোচনীয়, মজুরী অত্যন্ত কম। নির্যাতন, শোষণ ও চাকরিচ্যুতি ইত্যাদি ব্যাপক। ট্রেড ইউনিয়নের অধিকারও তেমন নেই। অসুস্থ, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় আহত-নিহত হলেও তেমন খোঁজ খবর নেয় না কেউই। আর্থিক সহায়তাও করে না। এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ রানা প্লাজা ভবন ধস। এমনকি যে প্রবাসীদের রক্ত পানি করা শ্রমে দেশের উন্নতি ও রিজার্ভ স্ফীত হয়েছে, সেই প্রবাসীদেরও ভালভাবে দেখভাল করা হয় না। ফলে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকরা নানা নির্যতান ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। এমনকি বিদেশে মৃত্য-অপমৃত্যুতেও তাদের লাশ দেশে আসতে পারে না সঠিক সময়ে। দেশ-বিদেশে শ্রমিকরা বর্ণনাতীত দুর্দশায় নিপতিত হওয়ার পরও দেশে কার্যত কোনো শ্রমিক আন্দোলন নেই। অথচ, একদা স্কপ নামে শক্তিশালী একটি প্লাটফর্ম ছিল, যার মাধ্যমে বহুবার শক্তিশালী আন্দোলন হয়েছে। তাই মালিক-সরকার সর্বদা তটস্থ থাকতো। ন্যায্য দাবি মানতে বাধ্য হতো। সেই স্কপের কোনো কর্মসূচি এখন নেই বললেই চলে। সেক্টর বা অফিস ভিত্তিক শ্রমিক ইউনিয়নের অবস্থাও তথৈবচ। সম্প্রতি দেশ গরীব থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার সনদ পেয়েছে। কিন্তু সেই উন্নতির বিন্দুমাত্রও জোটেনি শ্রমিকের ভাগ্যে। উন্নতি সবটুকুই ভোগ করছে অন্যরা।

শ্রমিকের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হবে শ্রমিকদেরকেই। অন্য কেউ সেটা করে দেবে না। এটাই বাস্তবতা। তাই শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়নের চেষ্টা শ্রমিকদেরকেই করতে হবে এবং তাতে সফল হতে হবে। সে লক্ষ্যে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সব শ্রমিককে এক মঞ্চে শামিল হতে হবে এবং তা হতে হবে অরাজনৈতিক সব অসংগঠিত শ্রমিককে সংগঠিত করতে হবে সেই এক মঞ্চে। সর্বোপরি সব নেতা-কর্মীর রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা অফিসিয়ালি ছিন্ন করতে হবে। তবে, যতদিন এটা না হয়, ততদিন খাত ভিত্তিক এক মঞ্চে সমবেত হওয়া দরকার। যেমন: মিডিয়া, পরিবহন, পাট ইত্যাদি

সব শ্রমিককে প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও শ্রমিকদের দক্ষতা অর্জন করা দরকার। নতুবা এ ক্ষেত্রে ভুল-ত্রুটি শোষণ ধরা সম্ভব নয়। ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেলেও সফল হবে না। ইতোপূর্বে সরকারি কয়েকটি পাটকলে নো লাভ নো লস ভিত্তিতে পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিল শ্রমিকরা। তাতে তারা সফল হয়নি। দক্ষতা না থাকায় এটা হয়েছে। তাই শ্রমিকদের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও দক্ষ হওয়া দরকার। বিশেষ করে নেতাদের। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্যও শ্রমিকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দরকার। কারণ, গাভী বাঁচলে দুধ পাওয়া যায়। আর গাভী মরে গেলে কিছুই পাওয়া যায় না। তদ্রুপ প্রতিষ্ঠান বাঁচলে শ্রমিক বাঁচে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে শ্রমিকরা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। তাই প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে শ্রমিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। অবশ্য শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা মালিকদেরই প্রধান দায়িত্ব। কারণ, দক্ষ শ্রমিক ছাড়া প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হয় না। সংগঠিত শ্রমিক প্রতিষ্ঠানের জন্য কল্যাণকর। তাই সর্বত্রই অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করা দরকার। তাহলে কর্মীব্যবস্থাপনা সহজতর হবে, পরিবেশ স্থিতিশীল হবে ও মালিক-শ্রমিকের সম্পর্কোন্নয়ন হবে। প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য এটা অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে সরকারেরও বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ, শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা হলে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট থাকে। তাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ে। এতে দেশের উন্নতি ঘটে। তাই মালিক, সরকার ও শ্রমিকের সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করে তার মাধ্যমে সব কর্মস্থলেই ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা দরকার। তাহলেই সর্বত্রই কর্মোপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হবে ও উন্নতি ঘটবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রমজীবী


আরও
আরও পড়ুন