এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারীরাও
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লিঙ্গ সমতার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি
জান্নাতুল মুমিনা
আদিম যুগের কৃষিকাজ থেকে শুরু করে বর্তমানের নির্মাণ সভ্যতা গড়ে ওঠার পেছনে পুরুষের পাশাপাশি বহু নারীর অক্লান্ত শ্রম ও সাধনা রয়েছে। সংসার ও সন্তান পালনের পাশাপাশি এসব নারীরা সভ্যতা নির্মাণে অংশগ্রহণ করলেও পুরুষের সমমর্যাদা তারা কখনোই পায়নি। শুধু নীরবে জাতীকে দিয়ে যায় তার শ্রমের ফসল। এরকমই এক নারী শ্রমিক সেলিনা হোসেন। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ। সেলিনার স্বামী মারা যায় আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। দুই ছেলে আর গর্ভে এক সন্তানকে নিয়ে সেলিনা তখন দিশেহারা কিন্তু জীবনতো আর থেমে থাকে না। সেলিনা তখন শুরু করে কৃষিকাজ। দৈনিক পাঁচ ঘণ্টা করে সে কাজ করতো। ধান লাগানো থেকে শুরু করে ধান কাটা, মাড়াইসহ সব কাজ করতো। মজুরি বাবদ সে দৈনিক ২০০ টাকা করে পেত। যা দিয়ে চারজনের খাওয়া খরচ চালাতেই কষ্ট হয়ে যেত। উপায়ন্ত না পেয়ে সেলিনা চাকরির আশায় তিন সন্তানসহ ঢাকায় আসে। হয়তো ঢাকায় সে পর্যাপ্ত মজুরি পাবে যা দিয়ে ছেলে দুটিকে পড়াতে পারবে। ঢাকায় সে কাজ পায় ভবন নির্মাণ কাজে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের নির্মাণ কাজে সে জুগালি হিসেবে কাজ নেয়। এখানে সে পুরুষের সাথে সমানতালে কাজ করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, মাথায় সমান সংখ্যক ইট নেয়া, সম পরিমাণ বালির হাজি(ডালি) নেয়াসহ সব কাজ করে পুরুষের সমান কিন্তু দিন শেষে তার পুরুষ সহকর্মীরা ৩৫০ টাকা করে পেলেও সে পায় ২৭০ টাকা করে। সে এখানে প্রায় ১৮ মাস ধরে কাজ করছে, তার সাথে আরো অনেক নারী শ্রমিকও কাজ করতো তারাও এই মজুরি বৈষম্যের শিকার হতো। যে নারী পুরুদের গর্ভে ধারণ করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ত্যাগ স্বীকার করলো আর সেই পুরুষ জাতিই দেয় না তাকে ন্যায্য মজুরি। সেলিনা আজ যে বৈষম্যের কারণে প্রতিদিন ৮০ টাকা করে কম পায় তা দিয়ে তার ছেলে দুটির স্কুলে যাওয়ার খরচ চালাতে পারতো। কিন্তু সে যে টাকা পায় মজুরি হিসেবে তা দিয়ে বাসা ভাড়া দিয়ে চারজনের সংসারের খাবার জোগানোই কষ্ট। ফলে তার সন্তান তিনটি আজ শিক্ষা ও মৌলিক অধিকার বঞ্চিত। এছাড়া সেলিনা নিজেও পাঁচ বছর যাবৎ গলগ- রোগে ভুগছে। যা চিকিৎসা করার টাকা সেলিনার নেই। আজ সেলিনার পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত তবুও সে হারভাঙা খাটুনি খেটে যাচ্ছে দুমুঠো ভাতের জোগানের জন্য। তার মত এমন হাজারো নারী পরিশ্রম করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমরা কজনের খোঁজ রাখি আর কজনকেই বা তাদের শ্রমের মর্যাদা দিয়ে থাকি। অথচ তাদেরই হাতে গড়া আমাদের জাতি ও সভ্যতা।
লেখক : শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।