Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শ্রমজীবীদের খোলাবাজারে চাল বিক্রির দাবি বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে চালের দাম লাগামহীন

| প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবুল কালাম আজাদ, বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে : শেখ হাসিনায় কইসলা ১০ টেকায় চাউল খাবাইবা, অখন খাইরাম ৫০ টেকায়। চাউল ও মাছর দাম যেলাখান বাড়ছে আমার মতো গরিব মানুষ না খাইয়া মরতো অইবো। হারা দিন কাম কইরা যে টেকা রুজি করি ই টেকা চাউল আর ডাইল কিনলেউ শেষ অই যায়। বাদবাকি খরচ করার টেকা থাকে না। এভাবেই সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বাজার মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা দুঃখের সাথে বললেন বালাগঞ্জের দিনমজুর আব্দুল করিম।
আব্দুল করিমের মতো হাজার মানুষ চালের দাম নিয়ে এমন দুশ্চিন্তায় আছেন। গত এক সপ্তাহে প্রতি বস্তা (৫০কেজি) দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ থেকে ৪শ’ টাকা করে। গতকাল বুধবার ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্নবাজারঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। তবে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক অনেক ক্রেতা জানান, ব্যবসায়িরা চাল মজুদ করে চালের মূল্য বাড়িয়েছেন। চালের আরো দাম বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ হিসেবে তারা দেখিয়েছেন, অকাল বন্যার কারণে বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়বে চলমান চালের উপর। অন্য দিকে সচেতন ব্যক্তিরা মনে করছেন বোরো ফসল ক্ষতি দেখিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
জানা যায়, চালের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে সীমাহীন ভুগান্তিতে পড়েছেন বালাগঞ্জের স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী ও মধ্য আয়ের লোকজন। গত কিছু দিন ধরে চাল দর ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ৪০-৫০টাকা দরে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে। চালের ঊর্ধ্বগতি মূল্য হতদরিদ্র পরিবার গুলোর অনাহার অর্ধাহারে জীবন চলছে। বেড়ে গেছে তাদের কষ্টের সীমা। বর্তমান পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্তরাও হিমসিম খাচ্ছেন।
দুই উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ১০লক্ষাধিক পরিবারের বসবাস। এসব পরিবারের মধ্যে অধিকাংশই নিম্ন আয়ের। দরিদ্র পরিবারের জন্য বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি চালু থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে মাত্র ২০-২৫ টি হতদরিদ্র কার্ডধারী থাকলেও সঠিকভাবে কোনো বরাদ্ধ নেই। এতে সাধারণ মানুষের কষ্টের মাত্রা বাড়ছে বৈ কমছে না। এমতোবস্থায় ১০টাকা দরের চাল সুবিধা ভোগীর সংখ্যা বাড়ানো খুবই জরুরি। অন্য দিকে খোলাবাজারে (ওএমএসের) চাল বিক্রির দাবি জানান উপজেলার ভুক্তভোগী মানুষরা। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজিতে চালের দাম দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। উপজেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে এ সমস্যাটা সৃষ্টি করেছে সিলেট শহরের বড় বড় ব্যবসায়ীরা। খোলাবাজারে চাল বিক্রির জন্য ব্যবস্থা করতে ঢাকায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
উপজেলার মাদরাসাবাজারের চাল ব্যবসায়ী আব্দুল খালিক, আক্তার আহমদ জানান, হঠাৎ করেই পাইকারী বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পায় যা এখনো অব্যাহত আছে।
দিন মজুর আব্দুস সবুরসহ আরো অনেকে জানান, চালের দাম সীমাহীন বেড়ে গেছে। অন্য দিকে বোরো ফসল সব শেষ তাতে আমাদের মত গরিবদের না খেয়ে মরতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের মত গবিরদের পরিবারে দুর্ভিক্ষ চলছে। আমাদের করুণ অবস্থা বিবেচনা করে সরকার খোলাবাজারে চাল বিক্রি করলে কিছুটা হলেও দুঃচিন্তা লাগব হবে। দেওয়ানবাজার ইউপির ১নং ওয়ার্ডের সদস্য আইয়ব উল্লাহ বলেন, আমার ওয়ার্ডে প্রায় ৫০০-৬০০ পরিবার রয়েছে যাদের অধিকাংশই গরিব। বর্তমানে মাত্র ২৩টি পরিবার ১০টাকা দরে চাল কেনার সুবিধা পাচ্ছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ জানান, কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। এটা আমার উপজেলায় নয়। এ সমস্যাটা সৃষ্টি করেছে সিলেটের বড় বড় ব্যবসায়ীরা। আমারা এ ব্যাপারে গতকাল বুধবার উপজেলা মিটিংয়ে আলোচনা করে সমস্যাটা সিলেট জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রমজীবী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ