শ্রমজীবীদের কপালে করোনার ঘা
করোনা মহামারি শ্রমিকের ললাটে প্রচন্ড আঘাত হেনেছে। করোনার প্রকোপ হিমালয়ের চূড়া থেকে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত
মে দিবসের দুই রূপ, বিশেষ করে পাশ্চাত্যে। একটা হলো হাসি-খুশির, অন্যটা বেদনা ভারাক্রান্ত। পাশ্চাত্যে ১লা মে থেকে বসন্তের প্রথম দিবস ধরে আনন্দ উল্লাস করা হয়। হয় নৃত্যগীত ও পিঠা খাবার ধুম। এদিন এক যুবতীকে ফুলে সজ্জিত করে বসন্ত রানী, মে কুইন ঘোষণা করা হয়। ‘মে-পেল’Ñ মে দিবসে এক দÐের চার দিক ঘিরে নৃত্যগীত করা হয়। অন্যদিকে এই পহেলা মে দিবসটি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী শ্রমিক দিবস। যাকে কেন্দ্র করে ১৮৮৬ সালে পহেলা মে ও তারপর কয়দিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে সংঘর্ষ ও পরবর্তীতে গুলি-বোমাবাজি ইত্যাদিতে আধা ডজনের বেশি শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়।
সমগ্র বিশ্বেই মজদুর-শ্রমিক থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকরা আন্দোলন করার রাজনৈতিক সামাজিক সুবিধা পায়। ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই শ্রমিকরা অমানুষিক খাটুনি করে চলছে। শিল্প মালিকরা প্রভূত লাভ করলেও, শ্রমিকের মানবিক অবস্থা ছিল না। উল্লেখ্য যে, পাশ্চাত্য তো শ্রমিকের অধিকার, ইসলামী আদর্শের শ্রমিকের অধিকার নিয়ে অবগত ছিল না। আধুনিক যুগে ইসলাম পেছনে চলে গেছে, সে তো নেতৃত্বে নেই। সাধারণ নর-নারী, দাস-দাসী যে সুলতান, সুলতানা, বেগম, উজির, জামাই, সমরনায়ক ইত্যাদি হতে পারে। পাশ্চাত্য তথা আধুনিক সভ্যতা সংস্কৃতি তাতে সহমত কমই ছিল। নবী (সা:) বলেছেন, ‘গৃহকর্মীদের তাই খেতে দেবে, যা তোমরা খাও, তাই পরতে দেবে, যা তোমরা পরো। তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ দেবে না, দুর্ব্যবহার করবে না। অতিরিক্ত কাজ হলে নিজেরা সাহায্য করবে।’ (বোখারী)। এ শুধু গৃহকর্মীদের অধিকার সংক্রান্ত নয়, মালিকের অধীনে সব কর্মীর অধিকার।
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার মেকানিকস ইউনিয়নকে বলা হয় পৃথিবীর প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন, যা ইংল্যান্ডে কোনো ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের দু’বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮২৭ সালে ফিলাডেলফিয়াতে কর্ম-ঘণ্টা নির্ধারণে কর্মবিরতি আন্দোলন হয়েছিল। এক তথ্যে দেখা যায় নিউ ইয়র্ক শহরে ১৮৩৪ সালে বেকার (রুটির কারখানার) শ্রমিকরা ১৮-২০ ঘণ্টা কাজ করত।
দশ ঘণ্টার কাজের জন্য আন্দোলন শুরু হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভ্যান বুরেন দশ ঘণ্টার কাজের আদেশ জারি করেছিলেন। তবে শ্রমিকরা পরে আট ঘণ্টার দাবি তোলে।
অস্ট্রেলিয়াতেও আট ঘণ্টার দাবি ওঠে। সরকার ১৮৫৬ সালে তা মানে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৬১-৬৫ সালে গৃহযুদ্ধ হয় দাস ব্যবসা নিয়ে। ১৮৬৬ সালে ২০ আগস্ট বাল্টিমোড়ে শ্রমিকরা সমবেত হন তরুণ শ্রমিক নেতা ইউলিয়াম সিলভিসের নেতৃত্বে। তিনি লন্ডনের ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল নামক বামপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তিনি তার আন্দোলনে ৮ ঘণ্টার কাজের দাবি তোলেন। তার আন্দোলনে ‘প্রলিটারিয়েট’ (কমুনিস্ট) প্রভাব ছিল। সিলভিস কম বয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হলে এই আন্দোলনে ভাটা পড়ে। যাই হোক ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল সংগঠন আট ঘণ্টা কাজের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করেছিল এ সময়। শ্রমিক আন্দোলনেই ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কিং মেনস অ্যাসোসিয়েসন (আইডবিøউএ ১৮৬৪-১৮৭৬)-কেই বলা হয় ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল। এই সংস্থা দুনিয়ার সব বাম শক্তি, সমাজতন্ত্র, কমুনিস্ট, এনারকিস্টদের রাজনৈতিক গোষ্ঠীসমূহ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে যারা সবাই শ্রমিক অধিকার ও শ্রেণী সংগ্রামে বিশ্বাস করে, এক মঞ্চে আনে। এই সংগঠন ২৮ মে, ১৮৬৪ সালে লন্ডনের সেন্টমার্টিন হলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর প্রথম কংগ্রেস হয় জেনেভাতে ১৮৬৬ সালে। সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো শ্রমিক শ্রেণীর পক্ষ নেয়া, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে শ্রেণীসংগ্রাম করা এবং সোস্যালিস্ট সমাজ গঠন। বিশ্বব্যাপী এর সদস্যসংখ্যা পাঁচ থেকে আট মিলিয়ন অর্থাৎ পঞ্চাশ লক্ষ থেকে আশি লক্ষ পর্যন্ত ছিল এক সময়। এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কার্ল মার্কস, এঞ্জেলস, বাকুলিন (রুশ বিপ্লবী) প্রমুখ নেতা।
এই সংগঠনের মাধ্যমেই মার্কস সামনে আসার সুযোগ পান, ১৮৬৪ সালে প্রতিষ্ঠার দিনের সভাতে তিনি লন্ডনের সেই হলেই ছিলেন। সেই সভাতে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্রিটিশ এলিটারিয়েটদের এই অর্জন জাতীয় পর্যায়ে নেবে’। মার্কস সংগঠনটির জেনারেল কাউন্সিলের সদস্য এবং জার্মানি শাখার সেক্রেটারি ছিলেন। ১৮৬৯ সালে সংগঠনটির ছিল আট লক্ষ সদস্য।
১৮৬৭ সালের কথা। কমুনিস্ট বিপ্লবী নেতা কার্ল মার্কস এই আট ঘণ্টা কাজের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেন। তিনি তার ‘ক্যাপিটাল’ নামক গ্রন্থের প্রথম খÐে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়নের আট ঘণ্টার দাবির প্রতি পাঠকের মনোযোগ আকৃষ্ট করেন। তিনি লেখেন যে, আট ঘণ্টার আন্দোলন দ্রæতগতিতে আটলান্টিক থেকে প্যাসিফিক মহাসাগর পর্যন্ত, নিউ ইংল্যান্ড থেকে ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি লেখেন যে, সে সময়ে দু’সপ্তাহের ভেতর যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোড়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্কারস কনভেনশনে আট ঘণ্টার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয় এবং জেনেভাতে ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেসে একই রকমের সিদ্ধান্ত হয়। তিনি পুরো আন্দোলনকে ‘ওয়ার্কারস মুভমেন্ট’ (শ্রমিক আন্দোলন) বলেন।
১৮৭০ সালের ফ্রান্স-জার্মানির যুদ্ধের পর ফ্রান্সের পরাজয়ের পর প্যারিসের ক্ষুব্ধ বিপ্লবীরা শুধু প্যারিস দখল করে প্যারিস কম্যুন ঘোষণা করে। এই খুদে সরকারের পেছনে ছিলেন কার্ল মার্কস। এই কম্যুন মাত্র আড়াই মাস (৭২ দিন) রাজত্ব করে। তারপরে তারা ধ্বংপ্রাপ্ত হয়। পৃথিবীর সর্বপ্রথম এলিটারিয়েটের একনায়কত্বের সরকার এটা। টিকেছিল ১৮-মার্চ-২৮ মে ৭১ পর্যন্ত। মার্কস নিহত বিপ্লবীদের সম্পর্কে বলেন, শ্রমিক শ্রেণীর হৃদয়ে এই সব শহীদের স্মৃতি সদা জাগ্রত থাকবে। আর এঞ্জেলস এই স্বল্পকালীন সরকার সম্পর্কে বলেন, ‘এলিটারিয়েটদের ডিক্টেটরশিপের এমন উদাহরণ প্যারিস কম্যুন।’ এঞ্জেলসই ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনালের দফতর লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্কে নেন। তার ধারণা হয়তো ছিল যে, ইহুদি সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে কম্যুনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
পাশ্চাত্যে শ্রমিকরা কাজের ভারে ন্যুব্জ। সূর্য ওঠা থেকে অস্ত পর্যন্ত কাজ। কখনও কখনও পনের-বিশ ঘণ্টা কাজ। শিকাগো শহরের শ্রমিকরা দাবি করল আট ঘণ্টা কাজের। নবী (সা:) বলেছিলেন, সাধ্যের অতীত কাজ না দিতে। বেশি কাজ দিলে, মালিককেও সেই কাজে হাত দিতে হবে। এর চেয়ে সাম্য আর কোনো সমাজে হতে পারে?
যাই হোক যদিও পাশ্চাত্য নিয়ন্ত্রিত সমগ্র বিশ্বে শ্রমিকদের পশুর মতো খেটে নেয়া হতো, শিকাগোর শ্রমিকরা কাঁধের জোয়াল ফেলে বিদ্রোহ করল আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে। এখানে একটা কথা বলতে হবে যে, যারা এই আন্দোলন শুরু করে তারা সহজ-সরল শ্রমিক ছিল না। তাদের অনেকেই, বিশেষ করে তাদের নেতৃবৃন্দ জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের বিপ্লবীদের দ্বারা ছিল অনুপ্রাণিত। ইউরোপে এ সময় কম্যুনিস্ট আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল। যাই হোক শিকাগোর শ্রমিক আন্দোলনের ভেতর সাধারণ শ্রমিক, কম্যুনিস্ট সোস্যালিস্ট, এনারকিস্ট (অরাজকত্ববাদী) যাদের যোগাযোগ ছিল সেকেন্ড ইন্টারন্যাশন্যাল নামক উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে। এসবের কারণে শিকাগোর শ্রমিক আন্দোলন শুধু আন্দোলন, বিক্ষোভ ছিল না, ‘রায়ট’ রক্তারক্তিও ছিল এতে যা কম্যুনিস্ট আন্দোলনে স্বাভাবিক।
পহেলা মে, ১৮৮৬-তে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের তের হাজার শিল্প ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তিন লাখের বেশি শ্রমিক কাজ থেকে বিরত থাকল। তবে কেন্দ্রবিন্দু হলো শিকাগো শহর। উল্লেখ্য যে, শিকাগো এলাকাতে কৃষ্ণকায়া মার্কিনিরা প্রচুর পরিমাণে বসবাস করে। তারা আগে থেকেই শ্বেতাঙ্গদের ওপর ক্ষিপ্ত। কৃষ্ণ আফ্রিকা থেকে এই সাবেক মুসলিমদের ধরে এনে যুক্তরাষ্ট্রে দাস শ্রমিক ও খ্রিষ্টান বানানো হলো। অথচ যিশুর দেয়া অধিকার তারা পেল না। শিকাগো শহরে উগ্রবাদী নৈরাজ্যবাদী নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে প্রায় চল্লিশ হাজারের মতো শ্রমিক কাজ থেকে বিরত থাকল। শিকাগোর হে মার্কেট চত্বরে শ্রমিকরা সমবেত হলো। চলল বিক্ষোভ করে ক’দিন। সেই সঙ্গে রক্তারক্তি রায়ট।
দাবি বিস্তৃত হতে লাগল। বর্ধিত মজুরি চাই। শ্রমিক সংগঠন করার অধিকার চাই। কর্মসময়ের হ্রাস দাবি। খুবই যৌক্তিক ছিল। ১৮০৬ সালে এক ষড়যন্ত্র মামলায় প্রকাশ পায় যে, শ্রমিকদের ১৯-২০ ঘণ্টা খেটে নেয়া হয়। তখন অবশ্য দশ ঘণ্টা কর্মসময়টা মানা হয়, যা কর্মই পালিত হয়।
সে সময়টায় সোস্যাইলিজমের একটা ঢেউ বয়ে যাচ্ছিল সর্বত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ সর্বত্র। আদর্শটা ছিল নতুন ও কারো কারো নিকট আকর্ষণীয়, বিশেষ করে গরিবের কথা, শ্রমিকের কথা বলার জন্য। শ্রমিকরা মনে করল এমন ব্যবস্থা হলে তারাই নিয়ন্ত্রণ করবে সব উৎপাদন মাধ্যম ও তার পণ্যের বিতরণ। আসলেই কি তাই? নিয়ন্ত্রণ থাকবে সর্বোচ্চ একটা গ্রæপের হাতে- পলিট ব্যুরো বা যে নামই দেয়া হোক না কেন। তবুও উনিশ শতকের দ্বিতীয় অর্ধে হরেক রকমের সমাজতান্ত্রিক সংগঠন গড়ে উঠল। এতে এলো এনারকিস্ট নৈরাজ্যবাদীরা পর্যন্ত। আর শ্রমিক সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণে রইল এনারকিস্ট ও সোস্যাইলিস্টরা।
যুক্তরাষ্ট্রে এনারকিস্টদের দি এলারম নামক পত্রিকায়, স্যামুয়েল ফিল্ডম্যান লিখলেনÑ ‘একজন আট ঘণ্টা-দশ ঘণ্টা কাজ করুক। সে তবুও দাসীÑ ¯েøভ’।
পহেলা মে, ১৮৮৬-এর সামান্য পূর্বে বিপ্লবীদের এক ছাপানো ইশতেহারে ঘোষণা করা হয় :
(১) শ্রমিকরা অস্ত্র হাতে নাও।
(২) প্রাসাদগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ, কুঁড়েঘরে শান্তি এবং আলসে বিলাসী ধনীদের হোক মউত।
(৩) দুনিয়ার দুংখ-কষ্টের একমাত্র কারণ হলো মজুরির ব্যবস্থা। মজুরি ব্যবস্থা ধনিক শ্রেণী দ্বারা সমর্থিত। একে খতম করতে হয় ধনিককে শ্রম দিতে বা মরতে বাধ্য করতে হবে।
(৪) এক বুশেল ওজনের ব্যালট কাগজ অপেক্ষা এক পাউন্ড ডিনামাইট বেশি ভালো।
আট ঘণ্টার কাজের দাবি করো, হাতে অস্ত্র নিয়ে, রক্তপিপাসু পুঁজিপতি, পুলিশ ও সশস্ত্র মিলিশিয়াতে সঠিকভাবে মোকাবেলা করো।
পহেলা মে’র শ্রমিক আন্দোলন যা শিকাগোতে হয়। ছিল খুবই উগ্র। শিকাগোই এ সময়ে মিলিটান্ট বামপন্থী শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল। এটা শ্রমজীবীদের শুধু জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য লড়াই ছিল না, এটা পূঁজিবাদী ব্যবস্থা বিলোপেরও লড়াই ছিল। একটা সমিতিও গড়ে ওঠে এইট আওয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামে। সমস্ত বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন এই সমিতিকে পূর্ণ সমর্থন দেয়।
১লা মে, ১৮৮৬ সোস্যালিস্ট লেবার পার্টি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো শিকাগোতে পঁচিশ হাজার শ্রমিককে জমায়েত করে। তবে ৩ মে ছয়জন নিহত হলো। ৪ মে হে মার্কেট চত্বরে সাত পুলিশ ও চার শ্রমিক নিহত হয়। ৪ মে ১৮৮৬-এর সমাবেশে হে মার্কেকে একটা বোমা এসে পড়ে। এতে সাতজন পুলিশ নিহত হয়। পুলিশের গুলিতে কয়েকজন ক্রমিকও নিহত হলো। অন্য এক তথ্যে বলা হয়, মাত্র একজন পুলিশ নিহত হয়। আর চার বা সাত বা আটজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়। তবে পরবর্তী দিনগুলোতে আর কিছু মানুষ নিহত হয়। হতাহতের সংখ্যা নিয়ে শ্রমিক নেতা ও কর্তৃপক্ষ বিপরীতমুখী তথ্য দেয়। যাই হোক পরবর্তীতে বিচারে কিছু শ্রমিক নেতার এই দÐও হয়। ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল দপ্তর ১৮৭২ সালে লন্ডন যেকে নিউ ইয়র্কে নিলে এটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কারণ, স্বাভাবিক মার্কিন মুলুকের প্রভাবে। তবে সংগঠনটি ১৮৭৬ পর্যন্ত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে।
১৮৮৯ সালে সেকেন্ড ইল্টারন্যাশনাল নামে ফ্রান্সের প্যারিসে উপরোক্ত সংগঠন নতুনভাবে আবির্ভূত হলো। তারা শিকাগোর ১৮৮৬ এর পহেলা মে’র আন্দোলনকে কবর থেকে টেনে তুলল এবং তাদের এ প্রভাবিত রাজনৈতিক ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলো এটা পালন করতে লাগল। নির্দেশ গেল সর্বত্র আট ঘণ্টার কাজের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। উল্লেখ্য যে, আট ঘণ্টার দাবির মূল কেন্দ্র ছিল যুক্তরাষ্ট্রের লিকাগো।
১৪ জুলাই ১৮৮৯ ফরাসি বিপ্লবের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যাসটিল দুর্গের পতনের শতবার্ষিকীতে পহেলা মে দিবসকে আন্তর্জাতিক মে দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হলো। এদিন প্যারিসে বহু দেশের মার্কসবাদী বিপ্লবী এ্রলিটরারিয়েট আন্দোলনের নেতারা সমবেত হন আর একবার একটা আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন করতে যেমনভাবে তাদের নেতা ও শিক্ষক মার্কস পঁচিশ বছর আগে শুরু করেছিলেন। এক তথ্য অনুসারে ৬৬টি দেশে মে দিবস সরকারিবভাবে উদযাপিত হয়। আর আরো বহু দেশে বেসরকারিভাবে এটা পালিত হয়। তবে এটা যুক্তরাষ্ট্রে তেমনভাবে পালিত হয় না যদিও শিকাগোর হে মার্কেট স্কোয়ার ছিল যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম রেড স্কোয়ার। মার্কিন সরকার মে দিবসের গুরুত্ব হ্রাস করতে এবং এটা জনগণের মন থেকে মুছে ফেলতে পহেলা মে দিবসকে আইনশৃঙ্খলা দিবস (ল এন্ড অর্ডার ডে) হিসেবে ঘোষণা দেয়। মার্কিন জনগণ মে দিবস সম্পর্কে বর্তমানে কমই অবগত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেন যাওয়ার ১৯৫৮ সালে পহেলা মে’কে ‘লয়ালিটি ডে’Ñ আনুগত্য দিবস হিসেবে ঘোষণা দেন।
লেখক : ইতিহাসবিদ ও প্রবন্ধকার
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।