বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শ্যামপুর রি-রোলিং মিলে কাজ করতেন লিটন মিয়াজী। মাইনা পেতেন হপ্তা ধরে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির পর বন্ধ করে দেয়া হয় কারখানা। কাজ নেই, তাই বেতনও নেই। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে সংসার। টিনশেড একটি রুমে বসবাস জুরাইন আলমবাগে। গ্রামের বাড়ি শিবচরের চরাঞ্চলে। কারখানা বন্ধের পর একবার গ্রামে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। লকডাউনের কারণে যেতে পারেননি। গ্রামে গেলেই বা খাবেন কি? জমি-জিরাতও নেই কিছু।
হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া লিটন মিয়াজী দিশেহারা হয়ে যান। দিন পনেরো কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় কাটিয়ে দেন। হাতে যা নগদ টাকা ছিল তাও শেষ। পরে স্ত্রীর পরামর্শে দুটি কানের দুল বন্ধক রাখেন। বাড়িওয়ালির কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা কর্জ নেন। এ টাকায় একটি ভ্যানগাড়ি ভাড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। যাত্রাবাড়ি আড়ত থেকে কাঁচা শাক-সবজি কিনে ঢুকে পড়েন মহল্লায়। শুরু করেন ফেরি করে বিক্রি। লিটনের সঙ্গে কথা হয় পশ্চিম ধোলাইপাড় ডেল্টা হসপিটালের সামনে। বললেন, কি আর করব! পেট তো চালাতে হবে। পরিজন নিয়ে বাঁচতেতো হবে!
করোনার প্রকোপে এভাবেই কারখানার শ্রমিক লিটন মিয়াজী হয়ে যান রাজধানীর ‘তরকারি ওয়ালা’। এরকম একজন লিটন মিয়াজীই নন। করোনা প্রকোপে দিশেহারা রাজধানীর জুরাইন, কদমতলী, শ্যামপুর, পোস্তগোলা, বালুর মাঠ এলাকার লক্ষাধিক শ্রমজীবী মানুষ।
স্থানীয় সূত্রমতে, কদমতলী ও শ্যামপুরে দুটি শিল্পাঞ্চল রয়েছে। কদমতলী বালুর মাঠ নামক ১ নম্বর শিল্প এলাকায় ৩শ’টি শিল্প প্লট রয়েছে। এর মধ্যে ২শ’ ১৫টি শিল্প প্লটে স্থাপিত কারখানা করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। শ্যামপুরের ২ নম্বর শিল্প এলাকায় বন্ধ হয়ে গেছে ১৪৫টি কারখানা। এর মধ্যে ডায়িং, গার্মেন্টস, আসবাবপত্র, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, সিমেন্ট ও রি-রোলিং মিল রয়েছে। শিল্প প্লটের বাইরেও বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
শ্যামপুর, কদমতলী বালুর মাঠ, পোস্তগোলা ও জুরাইন এলাকায় বন্ধ হয়েছে ২ শতাধিক রোলিং মিল ও ঢালাই কারখানা। ডায়িং কারখানা বন্ধ হয়েছে ৪ শতাধিক। এছাড়াও পোস্তগোলা আলীবহর, ঈগল বক্স, শশ্মান ঘাট আয়রন মার্কেট, ফায়ার সার্ভিস গলি, ঢালকানগর লেন, বাহাদুরপুর লেন, আইজি. গেট, আরসিন গেট, ফরিদাবাদ এলাকায় ১১টি তামার কারখানা, ৩৩টি ফ্যানের কারখানাসহ বন্ধ হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ছোট-বড় ৩৬০টি কারখানা। এর ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার ২ লক্ষাধিক শ্রমজীবী।
শিল্পকারখানা সংলগ্ন আশপাশের এলাকায়ই এদের বসবাস। তাদের মধ্যে যার পক্ষে সম্ভব সেই আপাত: বেছে নিচ্ছে ভিন্ন পন্থা। স্থায়ী পেশা ছেড়ে জীবন ধারণের তাগিদেই আপদকালে বেছে নিচ্ছেন খÐকালিন এ কাজ। এটিও মন্দের ভালো। কিন্তু ভেতরকার চিত্র অত্যন্ত নাজুক। যাদের হাতে দু’চার হাজার টাকাও নেইÑ পরিবার পরিজন নিয়ে গভীর সঙ্কটে নিপতিত হয়েছেন সেই সব শ্রমজীবী মানুষ। গতর খাটিয়ে যারা পয়সা উপার্জন করতেনÑ তাদের সবাই অন্যের কাছে হাত পাততে পারছেন না।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সেসব ত্রাণ তৎপরতা চলছে-সেসবও প্রান্তিক শ্রমজীবী অবধি স্পর্শ করছে না। অনাহারে অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন। একই সঙ্গে তাদের দু’টি শত্রæর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। করোনাভাইরাস এবং ক্ষুধা। কিন্তু এ পরিস্থিতিও আর ধরে রাখা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। করোনার পাশাপাশি ক্ষুধায়ও মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কা তাদের।
‘ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকনোমিক রিসার্স’র (এনবিইআর) চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ ‘ইনকিলাব’কে বলেন, কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের জন্য দ্রæত ‘ইমার্জেন্সি প্যাকেট ফুড প্রোগ্রাম’ (ইপিএফপি) চালু করতে হবে। এটি সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। স্কয়ার, প্রাণ, আকিজ, এস.আলম গ্রæপের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্ব দিতে হবে। না হলে শ্রমজীবী মানুষকে বাঁচানো সম্ভব নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।