Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শ্মশানগুলোতে নিভছে না দাহের আগুন, করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা গোপন করছে ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ৭:২৯ পিএম

করোনাভাইরানের দ্বিতীয় ঢেউ ক্রমেই ভারতকে একটি বিধ্বংসী সঙ্কটের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। অসহনীয়ভাবে জনাকীর্ণ হাসপাতালগুলি, অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি, চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা সুদীর্ঘ লাইনে করোনা মূমূর্ষদের মৃত্যু প্রমাণ করছে যে, দেশটিতে প্রকৃত করোনা মৃত্যুর সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত রিপোর্টে চেয়ে অনেক বেশি।

ভারতে সরকারী হিসাবে প্রতিদিন ৩ লাখেরও বেশি নতুন সংক্রমণ ঘটছে, যা একটি বিশ্ব রেকর্ড। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এই সংখ্যাটি যদিও আশঙ্কাজনক, কিন্তু এটি করোনা সংক্রমণের প্রকৃত মাত্রার মাত্র একটি অংশ উপস্থাপন করছে এবং প্রকৃত অবস্থা এই দেশটিকে জরুরি অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে হঠাৎ করোনার তীব্র বিস্তারে সম্ভবত এর একটি নতুন ও আরও মারাত্মক প্রজাতি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে, যা ভারতের সরকারী নথিভুক্ত প্রায় ২ লাখ কোভিড-১৯ জনিত মৃত্যুর সংখ্যার বিষয়ে সন্দেহ বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু সরকারী হিসেবেই দেশটিতে প্রতিদিন ২ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। দেশজুড়ে শ্মশানগুলোতে দাহের আগুন কখনও নিভছে না, যেগুলি সরকারী পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি মৃত্যুর চিত্র তুলে ধরছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, ভারতের রাজনীতিবিদরা এবং হাসপাতালগুলির প্রশাসকরা গদি বাঁচানোর তাগিদে এবং শোকগ্রস্ত পরিবারগুলি কোভিডের সাথে সম্পর্কিত থাকার লজ্জায় সম্ভবত সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর ঘটানাগুলি লুকাচ্ছেন এবং এই বিরাট দেশটির ১৪০ কোটি মানুষের বিভ্রান্তিকে আরও বাড়িয়ে তুলছেন। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারী বিশেষজ্ঞ ভ্রমর মুখার্জি বলেছেন, ‘এটি সম্পূর্ণভাবে তথ্যের হত্যাযজ্ঞ। আমরা যে মডেলিং করেছি, তা থেকে আমরা বিশ্বাস করি যে, সংখ্যাটি যা রিপোর্ট করা হচ্ছে, মৃত্যুর প্রকৃত তার চেয়ে দুই থেকে পাঁচগুণ বেশি।’

আহমেদাবাদের একটি বড় শ্মশানগুলির একটিতে কর্মরত সুরেশ ভাই মৃত্যুর কারণ হিসেবে করোনার উল্লেখ করেন না। তিনি জানিয়েছেন যে, করোনা মৃত্যুকে অসুস্থতাজনিত মৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করেন। কারণ তার কর্তাব্যক্তিরা তাকে এটা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিদিন তার শ্মশানে ১৫ থেকে ২০ টি করোনা মৃতের দাহ করা হয়।

এপ্রিলের মাঝামাঝি ১৩ দিনেরও বেশি সময় ধরে ভোপালের কর্মকর্তারা কোভিড-১৯ সম্পর্কিত ৪১ জন মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে শহরের প্রধান কোভিড-১৯ শ্মশান ও সমাধিস্থলগুলিতে যেখানে কঠোর প্রোটোকলের আওতায় মৃতদেহগুলোর সৎকার পরিচালিত হয়েছিল সেসব স্থানে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের জরিপে একই সময়ে মোট ১ হাজারেরও বেশি মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ছত্তিশগড়ের দুর্গ জেলার কর্মকর্তারা ১৫ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ১ শ’ ৫০ টিরও বেশি কোভিড-১৯ এর মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। টাইম্সকে দেয়া স্থানীয় গণমাধ্যগুলির পাঠানো বার্তা থেকে জানা গেছে, রাজ্যটি এই সংখ্যাটির অর্ধেকেরও কম সরকারী নথিভুক্ত করেছে।

গুজরাটের শিল্প শহর সুরাটে শবদাহের জন্য ব্যবহৃত গ্রিলগুলি বিরামহীন ব্যবহৃত গ্রয়ার কারণে কোথাও কোথাও লোহাগুলি গলে গেছে। ১৪ এপ্রিল সুরাট ও গান্ধী নগরের কোভিড-১৯ জন্য নির্ধারিত শ্মশানগুলি থেকে দ্য টাইমসকে জানানো হয়েছে যে, তারা একদিনে ১ শ’ ২৪ জনের শবদাহ করেছে, যেখন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে, পুরো রাজ্যে কোভিড-১৯ ৭ ৩ জন মারা গেছেন।

ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজ্য কানপুরে কয়েকটি পার্কে এখন শবদাহ করা হচ্ছে; শ্মশানে জায়গা নেই। একই ঘটনা লখনৌ এবং মির্জাপুরের বড় শহরগুলি এবং গুজরাট জুড়ে ঘটছে। গুজরাটের শ্মশান এবং সমাধিস্থলগুলিতে সাংবাদিকদের পাঠিয়ে রাজ্যটির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র সন্দেশের সংকলিত করোনা মৃত্যুর একটি বিশদ গণনা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, মৃত্যু সংখ্যাটি প্রতিদিন ৬ শ’ ১০ এর কাছাকাছি। ভারতের বৃহত্তমতম সংবাদপত্রগুলিও এই তারতম্যগুলি তুলে ধরেছে। ‘গুজরাটে কোভিড-১৯-এ মৃত্যু সরকারী পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি’ সম্প্রতি দ্য হিন্দুর প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম সেগুলি এভাবেই প্রকাশ পেয়েছে।

কিছু বিশ্লেষকের মতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে পরিচালিত ভারতীয় জনতা পার্টির নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলি দলীয় চাপে পড়ে তথ্য গোপন করছে। করোনার তথ্য প্রসঙ্গে ডক্টর মুখার্জি বলেন, ‘অগ্রগতি প্রদর্শন করার জন্য রাজ্যসরকারগুলির উপর কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র চাপ রয়েছে।’ তিনি মোদির ২০১৯ সালে বেকারত্বের হার বৃদ্ধির চিত্র উপাত্ত লুকানোর কেলেঙ্কারীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, ঠিক এখনকার মতো করেই তখনও মোদির সরকার তথ্য গোপন করার চেষ্টা করেছিল। সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।



 

Show all comments
  • Abu Rayhan ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৪৮ পিএম says : 0
    গতবছর ফ্রেব্রুয়ারীতে দিল্লীর আকাশে কালো ধোঁয়া ছিলো। পুড়িয়ে দেওয়া হয়ছিলো অনেক মসজিদ! মসজিদের মিনারে টাঙ্গানো হয়েছিলো গেরুয়া পতাকা! ৮০ বছরের বৃদ্ধা মুসলমানকেও ছাড় দেয়নি ওরা.. এমন কি কোন মুসলিম শিশুকেও না!! পুড়িয়ে মেরেছিলো আমাদের মুসলিম ভাইদের। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়ছিলো তাদের বসতি,দোকানপাট। এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলো কয়েক হাজার মুসলমান। সময় পালটায়,আসমানী গজব নেমে আসে। আজ দিল্লীর আকাশে আবারও কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে!! চিতা জ্বলছে! মুশরিকদের দেহ দুনিয়ায় থেকে আগুনে জ্বলছে!! এ যেন জাহান্নামের আগুনেরই পূর্ব প্রস্তুতি। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেননা! --আমি কাফেরদেরকে কিছু অবকাশ দিয়েছি। এরপর তাদেরকে পাকড়াও করেছি। অতএব কেমন ছিলো আমার শাস্তি! (আর'রাদ-৩২)
    Total Reply(0) Reply
  • কবি আল আমীন ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৪৯ পিএম says : 0
    ভারতের সরকারের গোয়ার্তমি আর খামখেয়ালীর ফসল আজ ভারতের মানুষ ভোগ করছে!! মৃত্যুগুলি দুঃখজনক এভাবে না পোড়ায়ে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া দরকার যাহাতে বায়ুমন্ডল দূষিত হতে রক্ষা পায়। আমার এ মতামত কেউ ধর্মীয় দৃষ্টিতে বিতর্কিত করতে চাইবেন না। ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • আমার সোনার বাংলা ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৫০ পিএম says : 0
    আমাদের প্রতিবেশী ভারতসহ পৃথিবীর সকলস্তরে করোনায় আক্রান্ত ভাই ও বোনদের প্রতি সমবেদনা ও দোয়া জানাচ্ছি। আমার বড়ই কষ্ট হচ্ছে এই জন্য যে, মানুষ বুঝতে চাচ্ছেন না যে মহামারী হচ্ছে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহর নিকট থেকে একটি গজব। মহান আল্লাহ্ কোরআনে বলেছেন কোন জাতির সামষ্টিক পাপের শাস্তি হিসাবে তিনি বিভিন্ন প্রকার মহামারী দিয়ে থাকেন যেন বান্দাগণ অনুতপ্ত ও সতর্ক হয়। যেহেতু বর্তমান বিশ্ব একটি গ্লোবাল ভিলেজ বা গ্রাম এবং বিভিন্ন পাপাচার সামষ্টিকভাবে করছে, এই জন‍্য বতর্মান মহামরীও সামষ্টিক ভাবে দেখা দিয়েছে। এই মহামারী থেকে বাচতে হলে অবশ্যই সবাইকে সম্মিলিতভাবে ও সামষ্টিকভাবে কৃত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়ে দয়াময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেই হবে। কোন বিকল্প নাই। করোনা হচ্ছে মহামারির বাহক। মানুষ অনুতপ্ত না হলে এই মহামারী প্রতিরোধে তাদের সকল প্রচেষ্টা ব‍‍্যর্থ হতে পারে। করোনা নিত্য নতুনভাবে তাদের রূপ পরিবর্তন করতে পারে। সকলকে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Humayon Kabir ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৫০ পিএম says : 0
    অবশ্যই এগিয়ে আসা উচিৎ। সাহায্যের হাত বাড়ালে শত্রুতা মুহুর্তেই ধ্বংস হয়ে যাবে! পৃথিবীতে সকল মানুষের প্রতি মানুষের মায়া মমতা ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক!
    Total Reply(0) Reply
  • Muntasirul Islam Uzzal ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৫০ পিএম says : 0
    আল্লাহ তুমি করোনা মহামারি থেকে আমাদের সকলকে হেফাজত করো।
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Kalam Chow ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৫০ পিএম says : 0
    কোন মৃত্যুই সুখের নয় সমবেদনা জানাচ্ছি, ভারতীয় জনসাধারণের প্রতি ।
    Total Reply(0) Reply
  • Alamgir Hossain ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৫১ পিএম says : 0
    রাজধানী দিল্লির এ ভিডিও দেখলে গা শিউরে ওঠবে যে কারোরই। সারি সারি জ্বলছে চিতা। মরদেহ সমাহিত করার জায়গা খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দিশেহারা শ্মশানে কর্মরত মানুষগুলো। জ্বলন্ত গণচিতার ভিডিও দেখার পর থেকে খুব খারাপ লাগছে। হে আমার রব, এরকম দৃশ্য কাউকে দেখিয়োনা, পৃথিবীটাকে শান্ত করে দাও। মানুষের ভুলগুলো ক্ষমা করে নতুন করে আলোর মুখ দেখাও। পৃথিবীর সবাই আলোর মুখ দেখার জন্য তাকিয়ে আছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান আর মুসলিম সবই যে তোমারই দেয়া প্রান। হে আল্লাহ তুমি রহমত করো,সমস্ত মানব জাতীকে রহমত করো।
    Total Reply(0) Reply
  • Abire Sabil ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৫১ পিএম says : 0
    আমাদের দেশে ও সত্যকে যে ভাবে গোপন করে আলেম ওলামাকে শহীদ করে পবিত্র রমজান মাসে গ্রেফতার করে কষ্ট দিচ্ছে কখন যানি আজাব চলে আসে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ