২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
সারা বিশ্বে রোজাদার ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। তবে তাদের রোজা রাখা নিয়ে নানা বিভ্রান্তি আছে। যেমন-তাদের দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা ঠিক কিনা, ইনসুলিন কীভাবে নেবেন বা গ্লুকোমিটার দিয়ে শর্করা মাপলে রোজা ভেঙে যাবে কিনা ইত্যাদি।
যাদের জন্য রোজা ঝুঁকিপূর্ণ ঃ চিকিৎসকরা কয়েক ধরনের ডায়াবেটিস রোগীর জন্য রোজা রাখা ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচনা করে থাকেন। এরা হলেন-টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগী, ডায়াবেটিস গর্ভবতী ও দিনে তিন-চারবার ইনসুলিন গ্রহণকারী। এছাড়া যাদের সা¤প্রতিক সময়ে মারাত্মক হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করাস্বল্পতা) বা কোমা রক্তে শর্করা আধিক্যজনিত অজ্ঞাত হওয়া হয়েছে, যারা হাইপোগ্লাইসেমিয়া সম্পর্কে সচেতন নন, ডায়াবেটিসের সঙ্গে যাদের কিডনি, যকৃত, হৃদযন্ত্রের জটিলতা আছে বা ডায়ালাইসিস করেছেন, তারাও অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন। ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় আরও পড়ে ইনসুলিন ও সালফোনিলইউরিয়া ওষুধ ব্যবহারকারীরা। বাকিরা সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করলে রোজা রেখেও সুস্থ থাকতে পারেন।
খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামে পরিবর্তন- রমজান মাসে খাদ্যাভ্যাস ও খাবার সময়সূচিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। যেহেতু ডায়াবেটিক রোগীর সুনিয়ন্ত্রিত ও সঠিক সময়সূচির খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হয়, তাই তাদের এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের বেলা লক্ষ্য করা দরকার-
১. দৈনন্দিন ক্যালোরির পরিমাপ আগের মতোই থাকবে, কেবল সময়সূচি বা খাদ্য উপাদান পরিবর্তিত হতে পারে।
২. শেষরাতে সেহরি খাওয়া আবশ্যক ও তা গ্রহণ করতে হবে যথাসম্ভব দেরি করে। সেহরিতে জটিল শর্করাসহ সবধরনের উপাদান রাখতে হবে। কেননা, এই খাবারই দিনভর শক্তি জোগাবে। ইফতারে একসঙ্গে প্রচুর খাবার না খেয়ে ধাপে ধাপে খেতে হবে। মিষ্টিজাতীয় ও ভাজাপোড়া তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন। যেমন-কাঁচা বা সেদ্ধ ছোলার সঙ্গে শসা-টমাটোর স্যালাড, চিঁড়া-টক দই, ঘুগনি বা চটপটি, স্যুপ, ফল ইত্যাদি। শরবতের বদলে ডাবের পানি বা লেবুপানি। একটি কিংবা দুটি খেজুর খাওয়া যেতে পারে।
৩. ইফতার ও সেহরির মধ্যে নৈশভোজে রুটি বা অল্প ভাত খাওয়া যেতে পারে। ভাত খাওয়া যেতে পারে।
৪. রোজা রেখে দিনের বেলা বেশি ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম না করাই ভাল। সন্ধ্যার পর চাইলে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। তারাবির নামাজ নিয়মিত পড়লে অতিরিক্ত ব্যায়াম না করলেও চলবে।
সতর্ক থাকুন- ১) ডায়াবেটিস রোগীর এ সময় চার ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্তে হঠাৎ শর্করাস্বল্পতা বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া, রক্তে শর্করা আধিক্য বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া, কিটোনিউরিয়া বা প্রস্রাবের সঙ্গে কিটোন নির্গত হওয়া এবং পানিশূন্যতা। ঝুঁকিগুলো এড়াতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে- ২) রোজা রেখে দিনের বেলা গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তে শর্করা পরিমাপ করুন। আলেমরা মত দিয়েছেন, গ্লুকোমিটার দিয়ে শর্করা মাপলে রোজা ভাঙে না। ইফতারের এক ঘন্টা আগে ও দু’ঘন্টা পরে এবং মাঝে-মধ্যে দুপুরে রক্তে শর্করা দেখুন। দিনের বেলা কখনও রক্তে শর্করা চার মিলিমোলের কম বা ১৬.৭ মিলিমোলের বেশি হয়ে গেলে রোজা ভাঙতে হবে। ৩) সন্ধ্যার পর একসঙ্গে অনেক খাবার খাবেন না। এতে হঠাৎ করে শর্করা বেড়ে যেতে পারে। পানিশূন্যতা এড়াতে সন্ধ্যার পর বেশি করে পানি, ডাবের পানি, জলীয় অংশ বেশি এমন খাবার গ্রহণ করুন। ৪) রমজানে ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা ও সময়সূচি সম্পর্কে রোজার আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ওষুধ বা ইনসুলিন বিষয়ক পরিবর্তন-৫) রোজায় ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা ও সময়সূচিতেও পরিবর্তন আসবে। নতুন খাদ্যসূচির সঙ্গে মিলিয়ে এই পরিবর্তন করা যায়। ৬) যারা মেটফরমিন, গ্লিনাইড, ডিপিপ গোত্রের ওষুধ খান, তাদের তেমন কোনও পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। কেবল ওষুধের সময়টাকে পাল্টে নিন। ৭) যারা সালফোনিল ইউরিয়া গোত্রের ওষুধ, যেমন-গ্লিক্লাজাইড, গ্লিবেনক্লেমাইড, গ্লিমেপেরোইড, গ্লিমেপেরোইড ইত্যাদি ওষুধ খান তারা সকালের ডোজ পূর্ণমাত্রায় ইফতারে এবং রাতের ডোজ অর্ধেক মাত্রায় শেষ রাতে গ্রহণ করতে পারেন। ৮) যারা দু’বেলা ইনসুলিন নেন, তারাও সকালের ডোজ পূর্ণমাত্রায় ইফতারে এবং রাতের ডোজ অর্ধেক মাত্রায় সেহরিতে গ্রহণ করতে পারেন। ৯) যারা আধুনিক বেসাল-বোলাস ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তারা বেসাল বা দীর্ঘ সময় কার্যকর ইনসুলিন আগের মাত্রায় আগের সময়ে (যেমন রাত ১০ টায়) গ্রহণ করবেন। আর বোলাস বা দ্রুত কার্যকরী ইনসুলিন গ্রহণ করবেন ইফতারে, নৈশভোজে গ্রহণ না করলে ওই সময় ইনসুলিন না নিলেও চলবে। ১০) চিরায়ত বা কনভেনশনাল ইনসুলিনের তুলনায় আধুনিক অ্যানালগ ইনসুলিন যেমন-ডেটেমির, ডেগলুডেক, গ্লারজিন, লিসপ্রো, অ্যাসপার্ট বা গ্লালাইসিন জাতীয় ইনসুলিনে শর্করাস্বল্পতা হওয়ার ঝুঁকি কম। ১১) ওষুধের মাত্রার এই পরিবর্তন অনেকটাই রক্তে শর্করার পরিমাণ ওঠা-নামার ওপর নির্ভর করবে। তাই রক্তে শর্করা পরিমাপ করুন ও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।