Inqilab Logo

সোমবার, ০৩ জুন ২০২৪, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অক্সিজেন ও টিকার সঙ্কট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:১৪ এএম

দেশে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের হার অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ গত বছরের প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালগুলোতে শয্যার সংকট, আইসিইউ বেডের সংকটের পাশাপাশি এখন অক্সিজেনের সংকটের কথাও উঠে আসছে। দু’দিন আগে উচ্চ আদালতে একটি রিটের জবাবে দেশে অক্সিজেনের কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। কিন্তু গতকাল বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের সংকট থাকা এবং সামনের দিনগুলোতে এই সংকট আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশিত হয়েছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় সংকট নিরসনে জরুরি উদ্যোগ না নিলে সামনের দিনগুলোতে করোনা রোগীদের চাহিদার চারভাগের একভাগ অক্সিজেনও সরবরাহ করা সম্ভব হবে না বলে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে। একদিকে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে দেশে অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান লিন্ডের দু’টি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কার পাশাপাশি ভারত থেকে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এহেন বাস্তবতায় দেশের কোভিড চিকিৎসা ক্ষেত্রে এলার্মিং অবস্থা সৃষ্টি করছে।
গত বছর করোনা সংক্রমনের শুরুতেই দেশের হাসপাতালগুলোতে নানাবিধ সংকটের চিত্র উঠে আসে। একটি অস্বাভাবিক অনিশ্চিত মহামারির সময়ে যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয়-তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলা করছে তখন আমাদের দেশে হাসপাতালের শয্যা, আইসিইউ এবং অক্সিজেনের মতো অতি জরুরি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ নতুন বৃহত্তম করোনা হাসপাতাল চালু করা হলেও রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে সিরিয়াস রোগীদের বাঁচাতে এসব উদ্যোগ তেমন কোনো কাজে আসবে না। তবে অল্প সময়ের মধ্যে বিশালাকৃতির নতুন হাসপাতাল চালুর উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যে নতুন আশাবাদের সঞ্চার হয়েছে, তাতে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনায় অক্সিজেন সংকট উত্তরণ অসম্ভব নয়। এ জন্য লিন্ডের যেসব ইউনিট বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তা দূর করতে হবে, অক্সিজেন উৎপাদনের সাথে জড়িত অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যমান বাস্তবতায় বুঝা যাচ্ছে, মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিকল্প নেই। ভারতে কোভিড সংক্রমণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ভারতীয় উৎস থেকে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রে আগেই থেকেই বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। করোনাকালীন বাস্তবতা মোকাবেলায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা অনেক কথাই বলেছেন। শেষ পর্যন্ত তাদের সে সব বক্তব্য অসার-ফাঁকাবুলিতে পরিণত হয়েছে।
নিত্যপণ্যসহ জরুরি সামগ্রীর চাহিদা পূরণে ভারতনির্ভরতা যে কোনো সময় আমাদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বিশেষ সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে বাংলাদেশে চাল বা পেঁয়াজ রফতানিতে অস্বাভাবিক রাজস্ব আরোপ বা বন্ধের ঘোষণা দিয়ে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির উদাহরণ অতি সাম্প্রতিক ঘটনা। ভারতের গরু রফতানি বন্ধের পর বাংলাদেশের কৃষক ও খামারিরা গরুর গোশতে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এটা সম্ভব। করোনা সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন দেশসমূহের সম্মিলিত উদ্যোগের উপর জোর দিচ্ছে, তখন করোনার টিকা এবং অক্সিজেনের মতো জরুরি উপাদান সরবরাহে ভারতের নিষেধাজ্ঞা বা অপারগতার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। কোভিড মহামারি মোকাবেলায় সব মানুষকে টিকাদান নিশ্চিত করাই হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। এক্ষেত্রে ভারতনির্ভরতার অপপ্রভাবের শিকার হতে যাচ্ছি আমরা। সেরাম ইনস্টিউটের কাছ থেকে প্রথম দফায় তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়া নিয়ে প্রথম থেকে যে সংশয় দেখা দিয়েছিল তা এখনো কাটেনি। গতকাল সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সময়মত ভারতের টিকা আসছে না। এ ক্ষেত্রে ভারতের সিদ্ধান্ত নিরবে মেনে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। চুক্তি অনুসারে সময়মত টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়াসহ সম্ভাব্য সব উৎস থেকে টিকা আমদানির জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। কোভিড রোগীদের অক্সিজেনের সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজন হলে শিল্পকারখানায় অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ রাখতে হবে। সেই সাথে মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিকল্প উৎস থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। শুধুমাত্র হাইফ্লো অক্সিজেনের অভাবে অনেক রোগী মারা যাচ্ছে। এ সময় ক্রমবর্ধমান কোভিড রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই হতে পারে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অক্সিজেন


আরও
আরও পড়ুন