Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ফাটল কেন?

| প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে গৃহহনীদের জন্য সেমিপাকা ঘর। এটা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহের একটি উদ্যোগ, যা বিভিন্ন মহলে বিশেষভাবে প্রশংসা অর্জন করেছে। অথচ, এই মহৎ উদ্যোগ প্রশ্নের সন্মুখীন হয়েছে দুর্নীতির কারণে। ঘরের মান ও স্থায়ীত্ব নিয়ে গুরুত্বর প্রশ্ন উঠেছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলায় বেশ কিছু গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ঘর বুঝিয়ে দেয়ার পর দুই মাসের মধ্যে ঘর দেবে যাওয়া, দেয়ালে ফাঁটল ধরাসহ নানাবিধ সমস্যা ও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ভুক্তভোগীরা। হরিপুর উপজেলার বজ্রমতলি গ্রামের শান্তির নীড় প্রকল্পে ১৩৩টি ঘর গত ফেব্রæয়ারিতে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এসব ঘর পেয়ে গৃহহীন মানুষগুলো খুবই খুশি হয়েছিল। কিন্তু সামান্য ঝড়ো হাওয়ায় প্রকল্পের বেশ কিছু ঘরের দেয়াল ও মেঝেতে ফাটল দেখা দেয়ায় তাদের কপালে এখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। মওসুমের সম্ভাব্য কালবৈশাখী ঝড়ে এসব ঘরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে গৃহহীনদের নিশ্চিন্ত নিরাপদ জীবনযাপন করার কথা, সেখানে তারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। কেউ কেউ এসব ঘর ছেড়ে অন্যত্র থাকছে বলেও প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়।

যেনতেন প্রকারে তড়িঘড়ি করে ঘর নির্মাণ করে হস্তান্তর করার সংশ্লিষ্টদের দায়সারা ভূমিকার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো দ্রæত মেরামতের আশ্বাস দেয়া হলেও এসব ঘরে বসবাসে আশ্বস্ত হতে পারছেন না আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিবাসীরা। তথ্য অনুসারে, প্রতিটি ঘর নির্মাণে প্রায় পৌনে দুইলাখ টাকা খরচ হলেও যথাযথ নির্মাণ সামগ্রী ও নির্মাণশৈলীর প্রতি নজর না দিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ার কারণেই দুই মাসের মাথায় ঘরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে। একটি পাকা বা সেমিপাকা ঘর দু-এক বছরের জন্য নির্মাণ করা হয় না। যথাযথ প্রক্রিয়া ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করলে ১০-২০ বছরের মধ্যেও এতে ফাটল ধরার কথা নয়। নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী ও যথাযথ নির্মাণ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় প্রধানমন্ত্রীর সাধের এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা এখন অনাকাক্সিক্ষত বিড়ম্বনার সম্মুখীন হলো। প্রধানমন্ত্রী নিজে এই প্রকল্প উদ্বোধন করেছিলেন এবং গৃহহীন মানুষ নতুন ঘর পেয়ে যারপরনাই খুশি হয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেছিলেন। তাদের দোয়া এবং খুশি এখন যেন ভীতি ও বদদোয়ায় পরিণত হতে চলেছে।

ইতিপূর্বেও বেশ কয়েকটি স্থানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। মুজিববর্ষের বিশেষ প্রকল্প হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াসের সদিচ্ছা, সৌন্দর্য ও লক্ষ্য কিছু দুর্নীতিবাজ, মুনাফালোভী মানুষের কারণে ব্যর্থ বা বদনামের ভাগী হতে পারে না। যাদের দুর্নীতি বা তদারকির ব্যর্থতার কারণে নি¤œমানের ও ঝুঁকিপূর্ণ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পুরো প্রকল্পকে ঘিরে যে সব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু ফাটল মেরামত করেই এর সমাধান সম্ভব নয়। নি¤œমানের অপর্যাপ্ত সিমেন্ট ও সামগ্রী দিয়ে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলো পুনরায় নির্মাণ করে দিতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং দুর্নীতিÑ অনিয়মের সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বা জরিমানা আদায় করতে হবে। দেশের গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এই প্রকল্পে বিশেষ জোর দেয়ার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর যে সদিচ্ছা ও শুভচিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে তার মযার্দা ও লক্ষ্যকে সমুন্নত রাখতে হবে। একই সঙ্গে জনগণের টাকার নির্বিচার লুটপাটের প্রবণতা চিরতরে বন্ধ করতে হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের যে সব স্থানে মানহীনতা ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা দেখা দিয়েছে এবং যেখানে এখনো অভিযোগ উঠেনি, সবগুলোকেই তদন্ত ও তদারকির আওতায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে শৈথিল্য বা ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

 

 



 

Show all comments
  • Jack Ali ২২ এপ্রিল, ২০২১, ৫:০৭ পিএম says : 0
    In Islam the ruler will live like a common people, but our ruler they use our hard earned money as if the money belongs to them and they live like king and Queen where we the majority people poor, don't get any support as a result we suffer to much on a daily basis.. We liberated country for what???????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন