পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিটিসিএল-এর অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলে সমস্যা দেখা দেয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে স্বয়ংক্রিয় চেক নিষ্পত্তি ও অনলাইন অর্থ স্থানান্তর বা ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফার। গত মঙ্গলবার এ বিপত্তি ঘটে। লকডাউনের জরুরি পরিস্থিতিতে এ ধরনের বিপত্তিতে গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি সার্ভারের একটির সংযোগে বিপত্তি ঘটায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনলাইনে অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি সার্ভার রয়েছে। একটি মতিঝিল ও অন্যটি মিরপুরে ব্যাংকের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, লকডাউনে ব্যাংক বন্ধ থাকবে, এমন ঘোষণায় সার্ভার বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এ কারণে ত্রুটি দেখা দেয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভার সিস্টেম এতটা নাজুক ও দুর্বল যে, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় তা সক্ষম নয়। পুরো সিস্টেম চালু এবং বন্ধ করার সময় তা বিকল হয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা দুর্বল, তা বিভিন্ন সময়ে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা দেখেছি, ব্যাংকটির সার্ভার হ্যাক করে শত শত কোটি টাকা লুটে নিয়ে যেতে। এটা কল্পনাও করা যায় না, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক নিরাপত্তা সিস্টেম এত নাজুক অবস্থায় থাকবে। শুধু সিস্টেম দুর্বলতা নয়, ব্যাংকের অর্থ লুটপাটের যে চিত্র পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে তাতে এ ব্যাংকের অভিভাবক বলে কেউ আছে কিনা সন্দেহ। তা নাহলে, একের পর এক নানা বিভ্রাট ঘটবে কেন? সার্ভার হ্যাকিং বা ত্রুটির মতো ঘটনা ঘটবে কেন? অবস্থা পরিদৃষ্টে মনে হওয়া স্বাভাবিক, এখানে নিরাপত্তা এবং জবাবদিহি বলতে কিছু নেই। যেকোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলে নানা অজুহাত দেখিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব শেষ করে। ঘটনা প্রতিকারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল বিপ্লব ঘটে গেলেও বাংলাদেশ ব্যাংক যেন তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। ব্যাংকটি যেন সেই অ্যানালগ যুগে পড়ে আছে। যেখানে বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক পাল্লা দিয়ে গ্রাহক সেবা ও সুবিধা দেয়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, সেখানে সরকারি ব্যাংকগুলো যেন পেছনের দিকে হাঁটছে। এ কথা সবার জানা, সরকারি ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগই নানা অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। মাদার ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। কর্মকর্তাদের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সার্ভার হ্যাক করে যে শত শত কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এর জন্য যারা দায়ী আজ পর্যন্ত তাদের কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এই বিশাল দুর্নীতির কোনো প্রতিকার না হওয়ায় ব্যাংকটিতে দুর্নীতি যেন শেকড় গেঁড়ে বসেছে। যেসব দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বুঝতে অসুবিধা হয় না, এখানে দুর্নীতির সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। সার্ভার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা চুরির পর ধারণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা অধিক শক্তিশালী এবং আধুনিক করে গড়ে তোলা হবে। দেখা যাচ্ছে, নতুন গভর্নর আসার পরও নিরাপত্তা পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
দেশের যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি, এমনকি যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা রাখতে হয়। দেশে করোনা পরিস্থিতি জরুরি অবস্থা ধারণ করেছে। এর মধ্যেই সরকার অর্থনৈতিক কর্যক্রম গতিশীল এবং লেনদেন অব্যাহত রাখতে সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রতিপালনে সরকারি ব্যাংক, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারেনি। এক্ষেত্রে ব্যাংক বন্ধ বা খোলা রাখা নিয়ে দ্বিধা থাকলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি এবং সব ধরনের টেকনোলজি আপডেট রাখা। করোনার এ সময়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ওপর। ফলে টেকনোলজিনির্ভর এ সেবাটি যাতে মসৃণ এবং নির্বিঘ্ন থাকে তা আগে থেকেই নিশ্চিত করা উচিত। এক প্রক্রিয়ার একাধিক বিকল্প ব্যবস্থা রাখাও আবশ্যক। বাংলাদেশ ব্যাংক এ কাজটি করতে পারেনি। অথচ, জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় সব ধরনের সমস্যা মাথায় রেখে একাধিক ব্যবস্থা রাখা দরকার ছিল। এটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও উদাসীনতা। এতে গ্রাহকরা চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে এবং ব্যাংকের কার্যক্রমের বিশৃঙ্খলা প্রকাশিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।