পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রত্যেকেই তার নিজ ব্যক্তিত্বে অসাধারণ। একটু সাহায্য ও সহানুভূতি পেলে যে কেউ তার মেধার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম। তবে এ জন্য দরকার ব্যক্তির আগ্রহ এবং চেষ্টা। যদি চেষ্টা না থাকে, তাহলে হবে না কিছু করা। এখন প্রশ্ন: কীভাবে নিজেকে বিক্রি করা সম্ভব? আমার ভাবনা থেকে কিছু তথ্য এখানে শেয়ার করছি।
বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়। এখন সেই ফল খেতে কেমন বা তার গুনাগুণ কেমন, তা নির্ভর করছে যে বা যারা এই ফল খাবে তাদের ওপর। গাছের কৃতিত্ব খুব কমই শুনেছি জীবনে। তবে ফলের প্রশংসা শুনেছি অনেক। এটা প্রকৃতির একটি বিশেষ নিয়ম।
শিক্ষা ঠিক তেমনই একটি বিষয়, যার মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, এমনকি মহাদেশের গুনাগুণ ফুটে ওঠে। মনে পড়ে গেল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা। তিনি ছিলেন বাঙালি এবং অবিভক্ত ভারতবাসী। বাংলা ভাষায় তার গীতাঞ্জলী গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯১০ সালে এবং নোবেল পুরস্কার পান ১৯১৩ সালে। শিক্ষার আলোতে আলোকিত হয়েছিল একজন ব্যক্তি, একটি ভাষা, একটি জাতি, একটি দেশ এবং একটি উপমহাদেশ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু লেখালেখি করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি তার লেখাকে ইংরেজদের সাহায্যে অনুবাদ করেন। পরবর্তীতে গীতাঞ্জলীর ওপর নোবেল পুরস্কার এবং বিশ্ব দরবারে তাকে বিশ্বকবি হিসাবে বিক্রি করেন। আমরা নিজেরাও কিন্তু প্রতিদিন আমাদেরকে বিক্রি করতে চেষ্টা করছি জানা বা অজানা অবস্থায়। এখন বিক্রি করতে গিয়ে যেন ভারসাম্য হারিয়ে না ফেলি সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বাংলাদেশে ৩০ বা ৩৫ বছর বয়সসীমা পার হলে সরকারি চাকরি করা যাবে না। এটা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। ইট ডাজেন্ট মেইক অ্যানি সেন্স। দেশকে সোনার বাংলা করতে হলে জনগণের বয়স নয়, বরং নজর দিতে হবে তাদের দক্ষতা এবং তারা যে কাজের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে সেটা আছে কিনা। চাকরিতে বয়সের মেয়াদ নির্ধারিত শুধু সেখানেই প্রয়োজন, যেখানে শারীরিক দক্ষতা দরকার একটি সুনির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে। বাকি সব ক্ষেত্রে বয়সের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে বরং দক্ষতার দিকে নজর দিতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেমন সুইডেনে ৬৫ বছর পর্যন্ত যে কেউ যে কোনো কাজে যোগ দিতে পারে যোগ্যতানুসারে। সেটা সরকারি বা বেসরকারি বলে কথা নেই।
এখন যদি শিক্ষার আলো বিবেককে সঠিক পথে পরিচালিত করতে না পারে, তখন বিবেক ভালো-মন্দের পার্থক্য হারিয়ে ফেলবে। হারিয়ে ফেলবে তার ভারসাম্যতা। তখন মানবজাতি দানবে পরিণত হবে। কারণ, শিক্ষা যখন আলোময় না হয়ে কালো রূপ ধারণ করে, তখন তা আর সুশিক্ষা দিতে পারে না, দেয় কুশিক্ষা। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আজ তুলে ধরব বেচা-কেনার ওপর জীবনের অভিজ্ঞতা। তার আগে জানি, একজন গুণী লোকের কিছু মূল্যবান তথ্য। ওয়ারেন অ্যাডওয়ার্ড বাফেট একজন মার্কিন ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী এবং জনহিতৈষী ব্যক্তি। জীবনে সফলতা পেতে ওয়ারেন বাফেটের অসাধারণ কিছু পরামর্শ রয়েছে। যেমন- ‘সততা খুবই দামী একটি উপহার, তা কখনই সস্তা লোকের নিকট থেকে আশা করা ঠিক হবে না। কখনোই সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখা উচিত নয়। পা পানিতে ডুবিয়ে কখনই নদীর গভীরতা মাপা ঠিক নয়। যা প্রয়োজন নেই তা ক্রয় করলে, শিগগির যা প্রয়োজন তা বিক্রি করতে হবে। কখনোই আয়ের একমাত্র উৎসের ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। বিনিয়োগের মাধ্যমে আরেকটি উৎস তৈরি করা ভালো এবং খরচের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা সঞ্চয় না করে বরং সঞ্চয়ের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা খরচ করা শিখো’।
শেয়ার বাজার এমন একটি ব্যবসা যেখানে নানা মত রয়েছে। ধর্মীয় দিক দিয়ে অনেকে অনেক রকম ধারণা দিয়ে থাকেন। আমার মত বা দ্বিমত নিয়ে আলোচনা করতে এ লেখা নয়। মূলত বর্তমান বিশ্বের সব কিছুই শেয়ার বাজারে বেচা-কেনা হচ্ছে। যা ভালো তার চাহিদা যেমন বেশি, বেচা-কেনাও হচ্ছে ভালো। এ কারণে কোটি কোটি লোক বিনিয়োগ করছে প্রতিদিন তাদের পুঁজি।
টিভিতে খবর দেখার সময় শেয়ার বাজারের কিছু খবর নজরে পড়ে গেল। তখন মনে পড়ে গেল প্রফেসর ড. মান্নান মৃধার কথা। মনে পড়ে গেল বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা। বাংলাদেশের জনসংখ্যার কথা, বেকারত্বের কথা। একইসঙ্গে ভাবনাতে এলো বাংলাদেশ কী করতে পারে এমন একটি সময়ে, যখন পৃথিবীর কিছু দেশ খুঁজছে দক্ষ কর্মী। অথচ, রয়েছে আমাদের দেশে লাখ লাখ বেকার যুবক। তাদের হয়তো নেই সেই যোগ্যতা, যা খুঁজছে পৃথিবী! তাই বলে কি সম্ভব নয় প্রশিক্ষণের মধ্যদিয়ে তা বাস্তবায়ন করা? অবশ্যই তা সম্ভব।
চেক রিপাবলিকে অটো মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে লোক নিয়োগের জন্য তারা উঠেপড়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ, কর্মীর অভাবে তারা ইন্ডাস্ট্রি চালাতে পারছে না। চেক রিপাবলিক সেন্ট্রাল ইউরোপের একটি দেশ। এর চারপাশের দেশ গুলো হল- অস্ট্রিয়া, জার্মানি, পোল্যান্ড এবং ¯েøাভাকিয়া। দেশটি ২০০৪ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ২০০৭ সালে সেনজেন স্টেটে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ বিষয়টি চেক রিপাবলিকের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশে বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী কর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের উচিৎ চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিয়ে এ ধরনের সুযোগ নেয়া। বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি এবং বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা বের করে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিতে পারে। দেশের বেকার শিক্ষার্থীদের চাহিদাভিত্তিক এবং অন দ্য জব ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষণের সুব্যবস্থা করে চেক রিপাবলিকের মতো দেশের সঙ্গে ব্যবসায়ের সমন্বয় ঘটান মিরাকেল কিছু নয়। যারা দেশের দায়িত্বে রয়েছে তারা যদি সত্যিকারে চেষ্টা করে। তবে তারা পারবে পরিবর্তন আনতে এবং একইসঙ্গে নিজেদেরকে বিক্রি করা শিখতে হবে সুশিক্ষা এবং চাহিদাভিত্তিক প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে।
আমি আমাকে বিক্রি করেছিলাম আমার মতো করে ১৯৮৫ সালে, যেদিন পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলাম সুইডেনে। তখন থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম, পৃথিবীটা একটা বেচা-কেনার জায়গা। দরকারে ‘কেনা’ প্রয়োজনে ‘বেচা’। সেই থেকে লেগে আছি বেচা-কেনার ওপর। দরকারে ‘কেনা’ আর প্রয়োজনে ‘বেচা’র সঙ্গে সুশিক্ষার সমন্বয় ঘটিয়ে নিজেকে বিক্রি করতে শেখা হোক আগামী প্রজন্মের প্রশিক্ষণ।
লেখক: সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।