বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রাজশাহীতে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা শনাক্তের হার। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই এবার রাজশাহী রয়েছে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকায়। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকার মানুষ করোনা সংক্রমিত হচ্ছে। কিন্তু সব শেষ গত দুইদিনের পরিসংখ্যান বিস্মিত করেছে খোদ স্থানীয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদেরকেই। এর মধ্যে গত ১০ এপ্রিল পরীক্ষিত নমুনার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি। এছাড়া ১১ এপ্রিলের শনাক্তের হারও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এদিন রাজশাহীর ২৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এর মধ্যে ৯৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ মোট নমুনার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৩১ শতাংশ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকায়ও রাজশাহীর অবস্থান রয়েছে শুরু থেকেই। বলা হচ্ছে, বাজার ও গণপরিবহন এই দুইস্থান থেকে সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে।
এই স্থানে আসা মানুষই সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন বা তাদের শরীরেই সংক্রমণের আশঙ্কা খুব বেশি। এরপরও রাজশাহীর সাধারণ মানুষের মধ্যে ন্যূনতম করোনা ভীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। উচ্চ সংক্রমণের মধ্যেও সোমবার সকাল থেকে বৈশাখী কেনাকাটার জন্য মার্কেটে জনস্রোত নেমেছে। সকাল থেকে ভিড় ঠেলে মানুষ চাঁদ রাতের মতো করেই নিজের ও পরিবারের জন্য কেনাকাটা সারছেন। দুইদিন পরই কঠোর লকডাউন। তাই কেউই যেন এই হাতে থাকা সামান্য সময়টুকু নষ্ট করতে চাইছেন না। জীবনের মায়া ভুলে উৎসবে গা ভাসাতে বেশিরভাগ মানুষই এখন মার্কেট ও বিপণিবিতানমুখি।
এদিকে ১৪ এপ্রিল থেকে পরবর্তী সাত দিন কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। লকডাউনের খবরের পর রাজশাহীর মার্কেট-শপিংমলে যেন ঈদের কেনাকাটা চলছে। কেউ বৈশাখী কেনাকাটা করছেন, কেউ ঈদের কেনাকাটা করছেন। আবার কেউ একসঙ্গে পহেলা বৈশাখ এবং ঈদের কেনাকাটা দুটোই করে নিচ্ছেন। অনেকের ধারণা ঈদের আগে আর এই লকডাউন ছুটবে না। এমন চিন্তা করে সবাই কেনাকাটা করতে মার্কেটের বিপণিবিতানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। আর করোনার স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব কিংবা বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতেও উদাসীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। অথচ শর্ত সাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেই শর্ত আর স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। আর স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে দিনের বেলা বাজারগুলোতে প্রশাসনিক তেমন কোনো তৎপরতাও দেখা যায়নি আজও।
সোমবার সকাল থেকেই রাজশাহীর মার্কেগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়ার মতো। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহানগরীর প্রায় সব মার্কেটের দোকান খোলেন ব্যবসায়ীরা। পসরা সাজিয়ে বসেছেন ফুটপাতেও। এতে প্রচুর মানুষের ভিড় দেখা গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই।
মহাগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার, আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেট, কোর্টবাজার, মাস্টারপাড়া, গণকপাড়া, কাপড়পট্টি ও আলুপট্টি এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা যায় প্রায় সব মার্কেট, শপিংমল ও শো-রুমগুলোয় ক্রেতায় ঠাসা। শপিংমলগুলোর চেয়ে মার্কেটগুলোতে ভিড় বেশি। শো-রুমের কর্মচারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আগ্রহ দেখা গেলেও মার্কেটগুলোর কর্মচারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি ছিল উপেক্ষিত। বিশেষ করে বাংলা নববর্ষ বরণের জন্য মহানগরীর মিষ্টান্নের দোকানগুলোতে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ ভিড় বেশি ছিলো।
রাজশাহীর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরও আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানছি না। আবার কাউকে মানাতেও পারছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলেই আশঙ্কা করছি। এভাবে বেপরোয়া চলাচল আমাদের জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠবে। তাই এই মুহূর্তে সবার ঘরে থাকা এবং সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। বাইরে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে মার্কেট, শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা আসার পর তারা এই নির্দেশনা অনুযায়ী মার্কেটগুলো মনিটরিং করছেন। ব্যবসায়ীদের সচেতন করছেন। এক্ষেত্রে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যত্যয় ঘটলে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।