Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পটুয়াখালীর গলাচিপায় মোবাইল চুরির অপরাধে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ, গ্রেফতার-১

পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২১, ৮:৪৭ পিএম

জেলার গলাচিপায় মোবাইল চুরির অভিযোগে গরুর রশি দিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন করে কাঁচি দিয়ে মাথার চুল কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।এসময় শিশুটির বাবা-মাকেও নির্যাতন করা হয়। পুরো ঘটনাটি নির্যাতনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় গলাচিপা থানায় একটি মামলা হলে ফেসবুক থেকে ভিডিওটি মুছে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গলাচিপা থানা পুলিশ সোহেল মৃধা (৩৮) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। এদিকে মামলা করেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিশুটির পরিবার।

মামলার বিবরণ ও পুলিশ সূত্র জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলখালী গ্রামের জুয়েল মৃধার মোবাইল চুরির অভিযোগের শুক্রবার সকালে ডাকুয়ার আট নম্বর ওয়ার্ডের বিষ্ণুপুর গ্রামের মকবুল গাজীর ছেলে রাকিব গাজী (১৪) কে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে ফুলখালী রেজাউল মৃধার বাড়ির সামনে রাস্তায় রাকিবকে গরু বাঁধার রশি দিয়ে আম গাছের সাথে হাত পা বেঁধে নির্যাতন করে ফুলখালী গ্রামের জুয়েল মৃধা, রাকিব মৃধা, সোহেল মৃধা, এমাদুল মৃধা ও জাকির মৃধাসহ অজ্ঞাত দুই তিনজন। রাকিবের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় তিন ঘণ্টা ধর অকথ্য নির্যাতন চালায়। নির্যাতনর এক পর্যায় রাকিবের বাবা মকুল গাজীকে ঘর থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে আনে। তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ছেলের পাশে আনে এবং ছেলের সামনে তাকেও অকথ্য নির্যাতন করে। এতে মকবুল গাজী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে বাঁচাতে স্ত্রী মোর্শদা বেগম ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং স্বামীকে (মকবুল গাজীকে) উদ্ধার করতে চাইলে তাকে নির্যাতন করা হয়। এসব ঘটনা দুর্বৃত্তরা মোবাইল ভিডিও করে। এ ঘটনা শুনে মোর্শেদা বেগমের চাচা স্থানীয় রুহুল মোল্লা এসে রাকিবের বাধন খুলে দিলে তাকেও অপমান করে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পর ঘটনা শুনে ডাকুয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মা. আরিফ মিয়া এসে সংশ্লিষ্ট ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাকিব মোল্লাকে জানাতে বলেন।

এ বিষয় ডাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদর ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোঃ. আরিফ মিয়া বলেন, ‘শিশুটির বাড়ি আমার ওয়ার্ডে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বারকে খবর দিয়ে বিষয়টি আইনীভাবে মীমাংসার কথা বলেছিলাম।’

ডাকুয়া ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রাকিব মোল্লা বলেন, ‘আমি এলাকায় ছিলাম না। আমাকে এমাদুল ফোন দিয়ে জানিয়েছিলেন আমি তাক দফাদারকে বলতে বলেছি, তাকে আইন হাতে নিতে বলা হয়নি।’

নির্যাতনের শিকার শিশু রাকিব বলেন, ‘আমার ঘর দিয়া রেজাউল মৃধা ডাইক্কা নেয়। রাস্তায় উঠলে আমার একটা মোবাইল পকেটে তার ঢুকাইয়া দেয়। এর পর রেজাউল মৃধার বাড়ি নিয়া বলে ‘চোর পাইছি’। এ সময় এমাদুল মৃধা, রাকিব মৃধা, সোহেল মৃধা সহ কয়েক জন মিল্লা একটা গরুর দড়ি দিয়া আম গাছের লগে বাইন্ধা আমারে বাঁশের লাঠি দিয়া পিডাইছে,হেরা লোহার রড দিয়া চোখ উডাইয়া দেওয়ার ভয় দেহাইছে।’

এ বিষয় নির্যাতনের শিকার শিশুটির মা মুর্শিদা বেগম বলেন,‘রেজাউল ও জুয়েল মৃধাসহ ৪-৫জন আমার ছেলে রাকিবকে ঘর থাইকা ডাইক্কা নেয়। রেজাউল মৃধার বাড়িতে নিয়া আমার পোলারে আমগাছের লগে (সাথ) হাত পা বাইন্ধা পিডাইছে। এর কিছু পরই আমার স্বামী মকবুল গাজীকে মৃধাবাড়ির জুয়েল মৃধা ও রাকিব মৃধা গলায় গামছা পেচাইয়ি নিয়া যায়। বাপ-পোলারে একখানে কইরা পোলার সামনেই নির্যাতন করে এবং আমার পোলার রাকিবের মাথার চুল কাঁচি দিয়া কাইট্টা দেয়। আমার স্বামীক উদ্ধার করতে গেলে আমারেও মারধর করে। এতে কাপড় চোপড় সব খুইলা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যহন থানায় মামলা করতে যাই তহন আমার বাড়িতে যাইয়া আত্মীয় স্বজনদের কাছ হুমকি দিয়ি আসে।

এ প্রসঙ্গে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, পুরো ঘটনাটি গুরুত্বর সাথ দেখা হচ্ছে। ঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিশুটির মা মোর্শেদা বেগম বাদী হয়ে জুয়েল মৃধা, রাকিব মৃধা ও সোহেল মৃধাকে প্রধান আসামী করে ৫জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত তিনজনের নামে একটি মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্য অভিযুক্ত সোহেল মৃধাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পটুয়াখালী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ