Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিকল্প উৎস থেকে দ্রুত টিকা সংগ্রহ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

দেশে করোনার টিকা প্রদানের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারত থেকে সময়মতো টিকা না পাওয়া এবং টিকা রফতানিতে দেশটির স্থগিতাদেশ এই অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। উপমহাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষণালব্ধ কোভিশিল্ড টিকা উৎপাদন করছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠানের সাথে এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তিন কোটি টিকা আমদানির চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে এই টিকা বাংলাদেশকে প্রদান করবে। চুক্তি অনুযায়ী, জানুয়ারিতে টিকা আসে ৫০ লাখ এবং ফেব্রুয়ারিতে ২০ লাখ, মোট ৭০ লাখ। এছাড়া ভারতের উপহারসহ মোট টিকা পাওয়া যায় ১ কোটি ২ লাখ। অথচ এপ্রিল পর্যন্ত টিকা পাওয়ার কথা ২ কোটি। টিকার প্রথম চালান আসার পর সরকার গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টিকা নিয়েছে ৫৫ লাখ ৮৩ হাজার ৫০৭ জন। গত ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে টিকার দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম। হিসাব অনুযায়ী, প্রথম ডোজ নেয়া টিকা গ্রহীতাদের দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার জন্য প্রয়োজন প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ ডোজ। এ হিসাবে, টিকা প্রদানে এক ধরনের অনিশ্চয়তা এবং ঘাটতি দেখা দেয়ার উপক্রম হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বার বার বলেছেন, যথাসময়ে টিকা আনা এবং অব্যাহত গতিতে তা প্রদানের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হবে। এতে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা বা ছেদ পড়তে দেয়া যাবে না। টিকার সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, যথাসময়ে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে একধরনের শৈথিল্য ছিল। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় এ প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠে। গত মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারের যেন টনক নড়ে। একই সময়ে ভারতেও সংক্রমণের হার বাড়তে থাকায় ভারত তার চাহিদা না পূরণ হওয়া পর্যন্ত টিকা রফতানির ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। এখন দেশটিতেও টিকা সংকট দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তার পক্ষে বাংলাদেশকে সময়মতো টিকা প্রদান সম্ভব হবে না। একমাত্র ভারত থেকে বাংলাদেশের টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ ভুল ছিল বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলছেন, একদেশ নির্ভর না হয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আগাম টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ থাকা উচিৎ ছিল। তাহলে, টিকা প্রাপ্তি এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংকট ও অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হতো না। সরকার বিষয়টি যখন উপলব্ধি করে, তখন বেশ দেরি হয়ে গেছে। ভারতের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মার্চের শেষ দিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা দেশে উৎপাদন বা সরাসরি আমদানি ও প্যাকেটজাত করার জন্য উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান বৃটিশ-সুইডিশ বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যালকে প্রস্তাব দেয়। এক চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ জানানো হয়, প্রতিষ্ঠানটি যাতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রযুক্তি, মূল উপাদান প্রদান অথবা আমদানি ও প্যাকেটজাত করার অনুমতি দেয়। এতে দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন দ্রুত এবং কমদামে ব্যাপকভাবে প্রয়োগের সুবিধা হবে। এ চিঠি প্রদানের পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার উদ্ভাবিত টিকা আনার উদ্যোগ নিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ মাসের শুরুর দিকে দেশ দুটির রাষ্ট্রদূতকে তাদের টিকা নেয়ার কথা জানায়। ইতোমধ্যে আর্ন্তজাতিক উদ্যোগ গ্যাভি-কোভেক্স ফ্যাসিলিটি বাংলাদেশকে ১ লাখ ৬১০ ডোজ টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর আগে চায়না সিনোফার্ম ৫ লাখ টিকা বাংলাদেশকে উপহার দেয়ার কথা বলেছিল। এ টিকার অনুমোদনসংক্রান্ত বিষয়ে কিছু প্রশ্ন ওঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেয়। এখন মন্ত্রণালয় এ টিকা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাশিয়ার উদ্ভাবিত স্পুটনিক-ভি টিকা শুরুতে বাংলাদেশকে কাঁচামাল ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছিল। বাংলাদেশ টিকাটি সরাসরি রাশিয়া থেকে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে। দেখা যাচ্ছে, অন্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকারের এক ধরনের দ্বিধা কাজ করেছে।

করোনার সংক্রমণ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে টিকা কার্যক্রম অব্যাহত ও গতিশীল রাখা ছাড়া বিকল্প নেই। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত বিভিন্ন দেশের উদ্ভাবিত টিকা জরুরি ভিত্তিতে আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি চুক্তি অনুযায়ী, ভারত থেকে টিকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু করোনা পুরোপুরি নির্মূলের সম্ভাবনা নেই, তাই দেশে এ টিকা উৎপাদনের স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্য। অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের যে প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে, তার অনুমতি যাতে দ্রুত পাওয়া যায়, এ ব্যাপারে সরকারকে জোর তৎপরতা চালাতে হবে। রাশিয়ার টিকা উৎপাদনের বিষয়টিও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বমানে পৌঁছেছে। বিশ্বের শতাধিক দেশে ওষুধ রফতানি করছে। যেকোনো ওষুধ তৈরির সক্ষমতা ফার্মাসিউিটক্যালগুলোর রয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকাসহ উদ্ভাবিত অন্য টিকার কাঁচামাল ও প্রযুক্তি পেলে দেশীয় কোম্পানিগুলো তা উৎপাদন করতে সক্ষম। এতে টিকা আমদানির খরচ যেমন হ্রাস পাবে, তেমনি স্বল্পমূল্যে চাহিদা মোতাবেক উৎপাদন করা সম্ভব হবে। টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হবে এবং আমদানির জন্য অপেক্ষা ও অনিশ্চয়তায় থাকতে হবে না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনার টিকা


আরও
আরও পড়ুন