পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধে দেশব্যাপী সাতদিনের লকডাউন শুরু হয়েছে। ৫ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত লকডাউন কার্যকর থাকবে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, লকডাউন চলার সময় গণপরিবহন, রেল ও বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। তবে পণ্যপরিবহন, জরুরি সেবাদান ও উৎপাদন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। আইনশৃংখলা ও জরুরি সেবা যেমন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বা জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস ও বন্দরসমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাকসেবা ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত অফিস, কর্মচারী ও যানবাহন এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। সকল সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস, আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে চালু থাকবে। এদের প্রয়োজনীয় জনবলকে প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব পরিবহনে অফিসে আনা-নেয়া করতে পারবে। শিল্প-কারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি চালু থাকবে। এদের কর্মী শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় আনা-নেয়া করতে হবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতিজরুরি প্রয়োজন (ওষুধ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যবিক্রী, চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি) ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। খাবারের দোকান হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা থাকবে। খাবার বিক্রী ও সরবরাহ করা যাবে। তবে সে খাবার খাওয়া যাবে না। শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ থাকবে। তবে দোকানসমূহ পাইকারী ও খুচরা পণ্য বিক্রী অনলাইনে করতে পারবে। কাঁচাবাজার খোলা থাকবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। উন্মুক্ত স্থানেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্যাদি বেচা-কেনা করা যাবে। এই হলো মোটামুটি নির্দেশনা। এ নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে মানতে হবে। না মানলে কঠোর শাস্তি হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে।
লকডাউনের উদ্দেশ্য মানুষকে ঘরে রাখা। ঘরে রেখে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে তাদের রক্ষা করা বা সংক্রমণ প্রশমিত করা। স্বাস্থ্যবিধি না মানা, সভা-সমাবেশ, পরিবহন, অফিস-আদালত ও হাটবাজারে যথেচ্ছ গমনাগমন ও পারস্পারিক মেলামেশার মাধ্যমে করোনাভাইরাস বিস্তার লাভ করে। লকডাউন করোনাভাইরাস থেকে রেহাই পাওয়ার আন্তর্জাতিক পরীক্ষিত একটি ব্যবস্থা। এতে জীবন যাত্রা, চলাফেরা, কাজকর্ম, উৎপাদন, অর্থনৈতিক তৎপরতা ইত্যাদির ব্যাপক ক্ষতি হয় বটে, কিন্তু এসব ক্ষতির চেয়ে জীবনের মূল্য অবশ্যই অনেক বেশি। এ জন্য লকডাউনে যাতে উদ্দিষ্ট লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জিত হয়, সেটা একান্তভাবে প্রার্থিত। লকডাউনের প্রথম দিনে আমরা কিছুটা হতাশ। রাস্তাঘাটে গণপরিবহন না দেখা গেলেও মানুষের ভিড় ও চলাচল একেবারে কম নয়। দোকানপাট বন্ধ থাকলেও বাজারে লোক সমাগম প্রায় আগের মতই। লোকজনের স্বাস্থ্যবিধি মানার গরজ খুব কম দেখা গেছে। টিসিবির ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো লোকদের অনেকে মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করেনি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার তো প্রশ্নই ওঠে না। লকডাউনের ঘোষণা দেয়ার পর ইতোমধ্যে রাজধানী অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। অনেকের পরিবারই ‘ছুটি’ কাটাতে গ্রামে চলে গেছে। গত বছরে বিপুল সংখ্যাক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার ফলে দেশব্যাপী করোনার বিস্তার দ্রুতায়িত হয়েছিল। গত বারের বিষয়টি খেয়াল রেখে এবার যে যেখানে আছে, সেখানেই তাকে আটকে রাখার ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল। এবারও শহর থেকে গ্রামে জনস্থানান্তর করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
লকডাউনের নির্দেশনায় কিছু অসঙ্গতি রয়েছে বলেও পর্যবেক্ষকদের ধারণা। তাদের মতে, অফিস, আদালত শিল্প-কারখানা, বাজারঘাট ইত্যাদি খোলা রাখলেও দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে একটা বৈষম্য হয়েছে। বিধিনিষিধ সাপেক্ষে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খোলা রাখা উচিৎ ছিল। সীমিত পরিসরে হোক, আর যে পরিসরেই হোক অনেক কিছু চালু রাখা হয়েছে, অথচ গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। তাহলে অফিস-আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিল্প-কারখানার শ্রমিক-কর্মী, বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা কীভাবে যাতায়াত করবে? অফিস-আদালত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা না হয় ‘নিজস্ব’ পরিবহনে যাওয়া-আসা করবে। বেসরকারি অফিস-প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানার ক্ষেত্রে কী হবে? তাদের কি সবার নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা আছে? এমতাবস্থায়, সীমিতভাবে হলেও গণপরিবহন চালু রাখা উচিৎ ছিল। গ্রামের হাটবাজারে বিপুল সংখ্যক লোক সমাগম হয়। সেখান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশংকা বিদ্যমান থাকলেও ওই হাটবাজারগুলোর ব্যবস্থাপনার কী হবে, তা নির্দেশনায় নেই। অথচ, থাকা উচিৎ ছিল। এ ধরনের অসম্পূর্ণতা বা অসঙ্গতি ছাড়াও নির্দেশনাগুলো কার্যকর করার ক্ষেত্রে আরো অপূর্ণতা ও অসঙ্গতি দৃশ্যমান হয়ে উঠতে পারে। এজন্য উপযুক্ত পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং দরকার। প্রয়োজনে নতুন নির্দেশনা দেয়া বা নির্দেশনা সংশোধন করা যেতে পারে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, লকডাউনের কারণে পরিবহন শ্রমিক, দিনমজুর ও স্বল্প আয়ের মানুষ বিপাকে পড়বে বেশি। তাদের জন্য কী সহায়তা দেয়া হবে, তার একটা ব্যবস্থা থাকা উচিৎ ছিল। লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করার আবশ্যকতা প্রশ্নাতীত। লকডাউন এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের মাধ্যমেই কেবল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার যেভাবে বাড়ছে তাতে এটা বলার উপায় নেই যে, সাতদিন পর তা সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। কাজেই লকডাউন যাতে শতভাগ কার্যকর হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।