পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে কোনো উপলক্ষের প্রয়োজন পড়ে না। প্রতিদিনই নানা উছিলায় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি হয়। এটা নির্ভর করে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছার ওপর। বিশেষ কোনো উপলক্ষ হলে তো কথাই নেই। মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছোঁয়া হয়ে পড়ে। যেমন বছরের রমজান ও দুই ঈদ। এই দুই আনন্দ উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা লাগামহীনভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে রমজান মাসে জিনিসপত্রের দাম চলে যায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এটা বহু বছর ধরেই চলে আসছে। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে ধারাবাহিকভাবে লেখালেখি হয় এবং হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকেও এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে হয়। তবে রমজানে মূল্যবৃদ্ধির বিষয় নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে ব্যবসায়ীরা এখন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। রমজানের আগেই সব জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করে দিচ্ছে, যাতে মানুষ বলতে না পারে রমজানে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারও যাতে বলতে পারে, রমজানে দাম বাড়েনি। এই কূট কৌশলে ব্যবসায়ীরা দুই ভাবে লাভবান হচ্ছে। প্রথমত রোজার আগে অধিক দামবৃদ্ধি, দ্বিতীয়ত রোজায় সেই দামবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা। ব্যবসায়ীদের এই নতুন কৌশলের কাছে সাধারণ মানুষ পুরোপুরি অসহায়। বিশ্বের কোনো দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামবৃদ্ধি নিয়ে এমন তুঘলকি কান্ড ঘটতে দেখা যায় না। বরং দাম বাড়ালে জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় দাম বৃদ্ধি করা হয় না। করলেও তার যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে এবং কত টাকা বাড়ানো হবে তার ব্যাখ্যা দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করা হয়। দাম বাড়ালেও তা জনগণের সহনীয় মাত্রায় রাখা হয়, তারাও তা মেনে নেয়। আমাদের দেশে দাম বাড়ানোর কোনো নিয়ম-নীতি নেই। এক্ষেত্রে যৌক্তিকতার যেমন ধার ধারা হয় না, তেমনি কোনো জবাবদিহিও নেই। জনগণ তার সামর্থ্যরে মধ্যে থেকে চাহিদা মতো কিনতে পারবে কিনা, তা নিয়ে ভাবা হয় না। অবশ্য আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মতামতের এখন আর কোনো মূল্য নেই। নীতিনির্ধারাকরা মনে করেন, তাদের মতামতই জনগণের মতামত এবং তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাই মেনে নিতে হবে।
দুই.
বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি নিয়ে বেশ সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে তখন পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হয়। সরকার কিছুতেই খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না। প্রতিদিনই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল। এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেকটা বিরক্ত হয়েই তিনি একদিন বলে ফেলেন, ‘কম খান’। তার এ মন্তব্য নিয়ে তখন বেশ সমালোচনা শুরু হয়। কেউ বলে ভাত দেয়ার মুরোদ নাই, আবার বলে কম খান। অথচ মন্ত্রী মূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছিলেন না। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির মূল হোতা সিন্ডিকেটকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। এর সঙ্গে যে রাঘব-বোয়ালরা জড়িত, তা জানা থাকলেও করার কিছু ছিল না। ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেট অনেক শক্তিশালী। ফলে অনেকটা ক্ষুদ্ধ হয়েই বলেন, কম খান। আরো একবার এমন হয়েছিল। ভাতের বিকল্প হিসেবে আলু খেতে বলা হয়েছিল। তখন একটি শ্লোগান দেয়া হয়েছিল, ‘বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান।’ এখন আর এ শ্লোগান দেয়া হয় না। কারণ, সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ অবস্থায় আলু খাওয়ার কথা বলা যায় না। আমাদের দেশে খাদ্য হিসেবে প্রধানত চালকে বোঝানো হয়। ঘরে বা সরকারের গোডাউনে চাল বোঝাই থাকলেই খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা বলা হয়। তবে চাল বা ভাতের সাথে যে তরিতরকারি মাছ-গোশত লাগে তা বলা হয় না। বাস্তবতা হচ্ছে, যে চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকাকে খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা বোঝায়, দেশে কি সেই চাল পর্যাপ্ত রয়েছে? বর্তমান পরিস্থিতি এ সাক্ষ্য দিচ্ছে না। সরকার বিদেশ থেকে লাখ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টন। গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত চাল আমদানি করা হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টন। এই চাল ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা হয়েছে। আমরা যদি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে থাকি, তাহলে এই আমদানি কেন? এ থেকে বোঝা যায়, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিষয়টি ধরে রাখা যাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে করোনার প্রভাব বলা হলেও এ প্রভাব থেকে আগামী কয়েক বছরে মুক্ত হওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। আবার করোনায় কোটি কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। দরিদ্রসীমার রেখা নি¤œগামী হয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৪০ শতাংশের কাছাকাছি চলে গেছে। এ হিসেবে, দেশের প্রায় সাড়ে ছয় কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে। সার্বিক দরিদ্রের চিত্র বিবেচনা করলে দেশের অর্ধেক মানুষ দরিদ্র। বিবিএস-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, যারা দৈনিক দুই হাজার ১২২ কিলোক্যালরির কম খায় এবং যারা খাওয়ার বাইরে কম খরচ করে তারা দরিদ্র। বিশ্বব্যাংকের হিসাবটি অন্যরকম। তার মতে, যাদের দৈনিক আয় দুই ডলার বা ন্যূনতম ১৭০ টাকার নিচে তারা দরিদ্র। এ হিসাবে বাংলাদেশে এখনো কোটি কোটি মানুষ দিনে ১০০ টাকা আয় করতে পারছে না। এর মধ্যে ইদানিং সরকার সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বাংলাদেশের দারিদ্র্য হারকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সাথে তুলনা করে বলেছেন, আমাদের দেশে হতদরিদ্রের হার ১২.৯ শতাংশ। আর ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৬ শতাংশ। এ এক বিশাল ব্যাপার মনে হতে পারে। মনে হতে পারে, আমেরিকার একটি অঙ্গরাজ্যের চেয়েও আমরা অনেক উন্নত। এসব পরিসংখ্যানের কথা শুনতে ভাল লাগে।
বাস্তবতা হচ্ছে, ক্যালিফোর্নিয়ায় দারিদ্র্যসীমার নিচে যে মানুষটি বসবাস করে, তারও ন্যূনতম একটি গাড়ি আছে, তার আয় বাংলাদেশের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের আয়ের চেয়েও বেশি। আর তাদের দারিদ্র্যসীমার সংজ্ঞার সাথে আমাদের দারিদ্র্যসীমার সংজ্ঞার তুলনা চলে না। এটা জাহাজের সাথে নৌকার পাল্লা দেয়ার মতো হয়ে দাঁড়ায়।
এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে রয়েছে। ফলে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের পক্ষে পেটভরে দুবেলা খাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। সীমিত আয়ের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষও রয়েছে নিদারুণ টানাপড়েনের মধ্যে। তাদের দিনান্তে পান্তা ফুরায় অবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে।
তিন.
প্রায় সাত-আট বছর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর ‘কম খান’ মন্তব্য যে আজ অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাবে, তা মনে হয় দেশের মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি। এখন তাদের ঠিকই কম খেতে হচ্ছে। অবশ্য বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মোট আয়ের ৩৮ শতাংশ যে ১০ শতাংশ মানুষের হাতে, তারা এই চিত্রের বাইরে। বাকি ৯০ শতাংশকেই এখন কম খাওয়ার অভ্যাস করতে হচ্ছে। গর্ব করে বলা হয়, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দেশে এখন যে খাদ্য সংকট চলছে, তাতে ১০ শতাংশ মানুষের কিছু যায় আসে না। চাল, ডাল, মাছ, গোশত, তেল, নুন, মরিচ, শাকসবজির কেজি ৫০০ বা এক হাজার টাকা হলেও তাদের পকেটে সামান্যতম টান ধরবে না। তারা জিনিসপত্রের দামের যেমন খোঁজ রাখেন না, তেমনি বাজারে যান না বললেই চলে। গেলেও যা প্রয়োজন দোকানিকে পরিমাণ বলে দেন এবং দোকানিও হিসাব করে কত হলো বলে দিলে এ অনুযায়ী দাম দিয়ে দেন। কোনটার কত দাম জানার প্রয়োজন মনে করেন না। অন্যদিকে, এই খাদ্য সংকট এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের কারণে খেটে খাওয়া মানুষ, নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবার এবং নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের কী দুর্দশা তা কেউ জানে না। মানসম্মানের ভয়ে তারা কষ্টের কথা বলেন না। জিনিসপত্রের দাম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেন বটে, নিজেদের দুঃখের কথা বলতে চান না। এই যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেল, তাতে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার খোঁজ কি ঐ ১০ শতাংশ মানুষ, বা সরকার রাখে? রাখে না। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও)-এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, চালের দাম বেড়ে গেলে দরিদ্র মানুষ তিন বেলার জায়গায় দুই বেলা খায়, আর যারা দুই বেলা খায়, তারা খাওয়া একবেলা কমিয়ে দেয়। এতে তাদের কর্ম ও জীবনশক্তি কমে যায়, অপুষ্ট একটি প্রজন্ম তৈরি হয়। যে মোটা চালের দাম ৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে, তা হতদরিদ্র মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব হচ্ছে না। একটু কম দামে কেনার জন্য তাদের এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরতে হচ্ছে। কোনো রকমে চাল কিনলেও মাছ-গোশত, শাক-সবজি কেনার সামর্থ্য থাকছে না। এসব মানুষের দুঃখের খবর কজনাই বা রাখে? বাধ্য হয়েই তাদের খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হচ্ছে। কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইউএসডি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাল কেনা সম্ভব না হওয়ায়, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমে যাবে। এই কমে যাওয়া শুরু হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতির অবনতি আরও আগে থেকে শুরু হয়েছে। শুরু না হলে লাখ লাখ টন চাল আমদানির প্রয়োজন পড়ত না। সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, ২০১৫-২০১৬ সালে চালের দাম বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের মানুষের ভাত খাওয়ার পরিমাণ দুই লাখ টন কমে যায়। পাঁচ বছর আগের এই চিত্র এখনও যে বিদ্যমান তা অস্বীকার করার উপায় নেই। মানুষের মৌলিক খাদ্য উপাদানের পরিমাণ যখন কমে যায়, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, বাংলাদেশের দরিদ্র ও অতি সাধারণ মানুষ কত কষ্টে জীবনযাপন করছে। তারা আধবেলা আধপেটে টানাপড়েনের জীবনযাপনকে নিত্যসঙ্গী করে চলেছে। এখন মানুষের এমন অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, নির্দিষ্ট বাজেট দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছে না। একটা কিনলে আরেকটা কেনার পয়সা থাকে না। ফলে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনা হয় বাদ দিতে হচ্ছে, না হয় প্রয়োজনের কম কিনতে হচ্ছে। উন্নত বিশ্ব এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশে নিত্যপণ্য মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে এমন তুঘলকি কাÐ দেখা যায় না। আমাদের দেশে জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি নিয়ে কোনো ধরনের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেয়া হয় না। ব্যবসায়ীদের ইচ্ছার উপর তা নির্ভর করে। তারা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দেয়। অজুহাত হিসেবে এমন সব বিষয় উপস্থাপন করা হয়, তারও যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয় না। সরকারও ব্যবসায়ীদের দামবৃদ্ধির এই অপসংস্কৃতি মেনে নিচ্ছে। বেশি সমালোচনা হলে কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। তাও ব্যবসায়ীদের বর্ধিত দাম থেকে কিছু কমিয়ে ধরা হয়। অর্থাৎ পণ্যমূল্যের দাম আগের অবস্থায় না এনে বর্ধিত দামই নির্ধারণ করা হয়। ব্যবসায়ীরা সরকারের এ বেঁধে দেয়া দামেরও কোনো তোয়াক্কা করে না। তারা তাদের দামেই বিক্রি করে। এর অর্থ হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারও ব্যর্থ হচ্ছে।
চার.
দুঃখের বিষয়, সাধারণ মানুষের এই দলিত-মথিত জীবনের মাঝেই আমরা ব্যাপক উন্নয়নের ফিরিস্তি ও পরিসংখ্যান দেখছি। সরকার বুঝতে পারছে না, অনাহারে-অর্ধাহারে, কষ্টেসৃষ্টে জীবনযাপন করা মানুষের কাছে এসব উন্নয়ন দৃশ্য পরিহাস ছাড়া কিছু নয়। বড় বড় প্রকল্পের উন্নতি তাদের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলছে না। বরং বিভিন্নভাবে ভ্যাট-ট্যাক্সের মাধ্যমে তাদের টানাপড়েনের জীবন থেকে যে অর্থ নেয়া হচ্ছে, তাই অনেক পীড়াদায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কষ্টে থাকা এসব মানুষের এখন প্রত্যাশা, কবে জিনিসপত্রের দাম কমবে, ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে, পেটভরে তিন বেলা খেতে পারবে, একবেলা খাবার কমানোর কথা চিন্তা করতে হবে না। তাদের এখন একান্ত কামনা, বেশি খাওয়ারও প্রয়োজন নেই, শুধু প্রয়োজনটুকু মিটলেই চলবে। অতি উন্নয়নের পরিসংখ্যান বা ফিরিস্তি নয়, সম্মানের সাথে বেঁচেবর্তে থাকাই তাদের এখন বড় স্বপ্ন। সাধারণ মানুষের এ স্বপ্ন সরকার উপলব্ধি ও অনুধাবন করলেই তারা খুশি। তারা উন্নয়নের ধোঁয়ায় মোহগ্রস্ত হতে চায় না। সাধারণ মানুষের এ চাওয়া সরকার খুব একটা যে অনুধাবন করছে, তা তার আচরণে স্পষ্ট নয়। সরকারি মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হিসাব দিচ্ছে, জিডিপির উল্লম্ফনের কথা বলছে, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলছে, অথচ সাধারণ মানুষ হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে, তাদের পক্ষে জীবনযাপন দিনে দিনে কতটা কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা মনে করি, জনগণের এসব সমস্যার দিকে সরকারের দৃষ্টি দেয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের ক্রয়সাধ্যের মধ্যে রাখার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।