পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিগত কয়েক মাস ধরে নিত্যপণ্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। নিয়ন্ত্রণের যথাযথ ও কার্যকর উদ্যোগও তেমন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় ও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। বিরোধীগুলো পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ করছে। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরছে। তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এমন কোনো ভোগ্যপণ্য নেই যার দাম প্রতিদিনই বৃদ্ধি না পাচ্ছে। চাল, ডাল, তেল, আটা, লবণ, চিনি, মসলা, শিশুখাদ্য, মাছ-গোশত, শাক-সবজি থেকে শুরু করে সবধরনের পণ্যের দাম অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে। সাধারণ মানুষের কেউই বাজারে গিয়ে স্বস্তি পাচ্ছে না। তারা নিত্যদিনের বাজার-সদাইয়ের বাজেট ও পরিমাণ একভাবে করে যায়, বাজারে গিয়ে দেখে সেই বাজেটে প্রয়োজনীয় পরিমাণের কোনো কিছুই কেনা যাচ্ছে না। হয় তাদের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হচ্ছে, না হয়, ফর্দ থেকে পণ্য বাদ দিতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের এই দুর্ভোগের বিষয়টি সরকার আমলে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। উল্টো সরকারের লোকজন নানা সাফাই গেয়ে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরছে।
করোনায় অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান অভিযানের কারণে বিশ্ববাজারে প্রায় সব পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। তবে অন্যান্য দেশ ও আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সমান নয়। আমাদের দেশের মানুষের যতটুকু ক্রয়ক্ষমতা ছিল, তা ইতোমধ্যে একেবারে ধসে পড়েছে। করোনাকালে কোটি কোটি মানুষের দরিদ্র হওয়া এবং আয় কমে যাওয়ার খবর ইতোমধ্যে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে। দারিদ্র্যসীমা দ্বিগুণ হয়ে ৪৩ শতাংশে পৌঁছেছে। এ চিত্র থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা দরিদ্র অবস্থায় রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এতদিন নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস তুললেও, তার সঙ্গে এবার মধ্যবিত্তরাও যুক্ত হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণহীনতা মধ্যবিত্তদেরও জোর আঘাত করেছে। বাকি থাকে উচ্চবিত্ত। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, দুর্ভিক্ষ লাগলেও কোনো কালেই এই শ্রেণীর অসুবিধা হয় না। না খেয়ে থাকতে হয় না। ইতোমধ্যে এ খবরও প্রকাশিত হয়েছে, অসংখ্য সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের তিন বেলা খাবারকে দুই বেলায় নামিয়ে এনেছে। দুর্মূল্যের বাজারে এছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই। দ্রব্যমূল্যের লাগাতার বৃদ্ধি ঘটলেও মানুষের আয় বাড়া দূরের কথা, আরো কমছে। সরকার এসব কথা স্বীকার করতে চায় না। বরং বলেই চলেছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এটা এক ধরনের মশকরা ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ সরকারের কাজ হচ্ছে, জনগণের সেবা এবং তাদের জীবনযাপনকে যতটা সম্ভব সহজ ও স্বস্তিদায়ক করা। আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠলেও সরকারের মধ্যে কোনো বিকার দেখা যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, সরকার সংশ্লিষ্টরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় দেয়ার কারণে তারা যেমন খুশি তেমন পণ্যমূল্য বাড়াচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অজুহাত হিসেবে বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। তাই বলে কি তা দিনের পর দিন বেড়েই যাবে? এক সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে যে কাণ্ড চলছে, তা বিস্ময়কর। সরকার দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় সিন্ডিকেট বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। কার্যত মানুষ তো বটেই সরকার যেন সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের তাহলে উপায় কি?
নিত্যপণ্যসহ যত ধরনের সেবাখাত রয়েছে, তার সবগুলোতেই চলছে এক অরাজক পরিস্থিতি। স্বস্তি বলে কিছু নেই। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে মশার উৎপাত কোনো কিছুর ব্যাপারেই যেন সরকারের কিছু করার নেই। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শুধু বিশ্ববাজারে বৃদ্ধি নয়, আভ্যন্তরীণ নানা সমস্যাও জড়িয়ে আছে। দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পণ্য সরবরাহ করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। যানজট ও পথে পথে চাঁদাবাজির কারণেও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়ে যানবাহনের যে জ্বালানি পোড়ে এবং চাঁদাবাজিতে যে খরচ হয়, ব্যবসায়ীরা তার সবটুকু পণ্যের সাথে জুড়ে দিয়ে পাই পাই করে তুলে নেয়। এসব ক্ষেত্রেও সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। আগামী মাসের শুরুতেই পবিত্র রমজান শুরু হচ্ছে। তখন পণ্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। সরকারকে নিত্যপণ্যের মূল্যনিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অতি মুনাফালোভী সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরতে হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে খেয়ালখুশি মতো পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে, এজন্য বাজারে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।