Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্রেফতারের মুখে এভার গিভেনের ভারতীয় ক্রুরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২১, ৭:১৬ পিএম

প্রায় সপ্তাহ খানেক পর এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংযোগকারী সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথ সুয়েজ খাল দিয়ে আবার জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। কিন্তু যে জাহাজের কারণে সুয়েজ খাল আটকে যায় সেই ‘এভার গিভেন’ এর চালক ও ভারতীয় ক্রুদের গ্রেফতার করা হতে পারে।

গত মঙ্গলবার ‘এভার গিভেন’ নামে ৪০০ মিটার দীর্ঘ এক কনটেইনার জাহাজ আড়াআড়ি ভাবে সুয়েজ খাল আটকে দাঁড়িয়ে পড়ে। ফলে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হয়। মিসরীয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ইউনিয়নের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করেছেন যে, জাহাজটির ২৫জন ভারতীয় ক্রু’কে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত জাহাজেই বন্দি করে রাখা হতে পারে।

এ বিষয়ে মিশরীয় সামুদ্রিক কর্মকর্তাদের একজন জানান, তদন্ত পরিচালনা করার সময় সুয়েজ জাহাজের ক্রুদের আটক রাখা হবে। তদন্তকারীরা জাহাজটি আটকে পড়ার শুরু থেকে এখন অবধি নাবিকদের কথোপকথনের রেকর্ডিং শুনবেন। তদন্তকারীরা দু’জন মিশরীয় পাইলটকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন যারা খালের প্রধান হিসাবে ‘এভার গিভেন’কে' নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। তারা এ ক্ষেত্রে ‘মানবীয় ত্রুটি’ হতে পারে বলে মনে করছেন। তবে ভারত সরকার এবং ভারতীয় সমুদ্রযাত্রীদের সংগঠনগুলি আশঙ্কা করছে যে, সুয়েজ খাল ছয় দিন অবরোধের অভিযোগে ক্রুরা অপরাধী হিসাবে বিবেচিত ও কারাদন্ডের মুখোমুখি হতে পারেন।

তবে ভারতের এক প্রবীণ নাবিক টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘স্পষ্ট ঝুঁকি রয়েছে যে ক্রুদের বলির পাঠা বানানো হবে।’ এদিকে ভারতের জাতীয় শিপিং বোর্ডের (এনএসবি) সদস্য ক্যাপ্টেন সঞ্জয় পারাশর বলেছেন, ‘প্রথমত বিশাল জাহাজটি কীভাবে চলাচল করেছিল তা নির্ধারণ করা উচিত।’ তিনি জানান, জাহাজ ভ্রমণ ডেটা রেকর্ডারে কথোপকথন পরীক্ষা করে শুনে শুনে তথ্যগুলি পরীক্ষা করা যায়; এরপরে যে কেউ এই দুর্ঘটনার কারণ কি তা বুঝতে পারে।

জাহাজটির জাপানি মালিক বলেছেন যে, ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত হবে। তবে জাহাজটির কথিত উচ্চ গতিসহ দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণগুলি নিয়ে কথা বলতে তিনি অস্বীকার করেছেন।

‘এভার গিভেন’ ভাসার পর ‘স্মিট স্যালভেজ’-এর মালিক ‘বোস্কালিস’-এর সিইও পিটার বারদাওস্কি বলেন, ‘অভিযান শেষ করার জন্য যে সময়ের চাপ ছিল তা এক কথায় অভূতপূর্ব।’ কোম্পানির তরফে জানানো হয়েছে, ২ লাখ ২৪ হাজার টনের দৈত্যাকার জাহাজটিকে টেনে তুলে ভাসানোর জন্য ৩০ হাজার কিউবিক মিটার বালি তুলতে হয়েছে এবং ১১টি টাগবোট এবং ২টি শক্তিশালী সি টাগ কাজে লাগানো হয়েছে।

‘এভার গিভেন’ জাহাজটিকে যারা লিজ দিয়েছে সেই ‘এভারগ্রিন লাইন’ বলেছে, খালের দুই অংশের মধ্যে যে লেক আছে সেখানে জাহাজটিকে আবার ভেড়ানো হবে এবং দেখা হবে জাহাজটি সমুদ্রে চলাচলের উপযুক্ত রয়েছে কি না। কনটেনার শিপের টেকনিক্যাল ম্যানেজার কোম্পানি বার্নহার্ড শুলতে শিপম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, কোনো দূষণ বা কার্গোর কোনো ক্ষতির খবর নেই এবং প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, কোনো যান্ত্রিক বা ইঞ্জিনে ত্রুটির জন্য যে জাহাজটি মাটিতে বসে গিয়েছিল তা নয়।

অ্যাডমিরাল ওসামা র‍্যাবি জানিয়েছেন, ‘এভার গিভেন’-এর বিপত্তির কারণে খালের দু’’দিকে ৩৬৯টি জাহাজ আটকে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কনটেনার শিপ, বাল্ক ক্যারিয়ার, অয়েল ট্যাঙ্কার, এলপিজি (লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) ভেসেল, এলএনজি (লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস) ভেসেল ইত্যাদি। তিনি জানান, মোটামুটি তিন দিনের মধ্যে খালে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হবে।

প্রসঙ্গত, কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুয়েজ খাল, লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরকে সংযুক্ত করে। এটি এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংক্ষিপ্ততম জলপথ। বিশ্বের মোট শিপিং ট্র্যাফিকের ১৫ শতাংশ সুয়েজ খাল দিয়ে যাতায়াত করে। মিশরের বিদেশি মুদ্রা আয়ের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎস এই খাল। জাহাজ আটকে যাওয়ার ফলে খাল কর্তৃপক্ষের দৈনিক প্রায় দেড় কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছিল। সূত্র: ডেইলি মেইল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ