নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
রেফারির শেষ বাঁজি বাজতেই মাথায় হাত জামাল ভূঁইয়াদের। ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে’র ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে না আসা। নেপালের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জামালের বিষন্ন বদনে রানার্সআপ ট্রফি গ্রহণ। এ সবই হতাশার খন্ড খন্ড চিত্র। ফিরে এল না ১৯৯৯ সালের সুখস্মৃতি। বরং আক্ষেপে পুড়ল গোটা দল। জেমি ডে’র অতিমাত্রায় পরীক্ষা নিরিক্ষাই কাল হয়ে দাঁড়াল বাংলাদেশের। সোমবার কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে স্বাগতিকদের কাছে ২-১ গোলে হেরে রানার্সআপ ট্রফিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হল লাল সবুজদের।
২২ বছর আগে সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে আলফাজের একমাত্র গোলে বালগোপাল মহারজনদের হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার কোচ হয়ে সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নিলেন মহারজন। আগের দু’ম্যাচে এক গোলও করতে পারেনি নেপাল। অথচ ফাইনালে ৪২ মিনিটের মধ্যে দুই গোল পেল স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের দুর্বল ডিফেন্ডারদের কারণেই এই ধ্বস নেমেছিল। ফাইনালে জেমির একাদশ নিয়ে ম্যাচ শেষে বিস্ময় প্রকাশ করেন নেপালের কোচ বালগোপাল। তার কথায়, ‘ম্যাচ শুরুর এক ঘণ্টা আগে একাদশে যখন দেখলাম জেমির একাদশে ছয়জন ফরোয়ার্ড, মাত্র দুইজন ডিফেন্সে- তখন খুবই অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তারা শুরু থেকেই হয়তো খুব আক্রমণাত্মক হবে। কিন্তু দেখলাম না, তেমন কিছুই হল না।’ বাংলাদেশের কোচ জেমি ডে মিডফিল্ডার সাদ উদ্দিনকে ফুল ব্যাক পজিশনে খেলিয়েছেন। এ রকম আরও অনেক পজিশনে তিনি পরিবর্তন করেছেন। ফাইনালে কোচের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যই রানার্স আপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে, এমনটা বলছেন অনেকে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের খেলা নিয়ে প্রসংশা করেন মহারজন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ গোছালো ছিল। তারা দ্বিতীয়ার্ধে ভালোই খেলেছে।’
ম্যাচের ১৮ মিনিটে লিড নেয় স্বাগতিকরা। কর্নার থেকে সুনীল বালের শট বক্সের মধ্যে ক্লিয়ার করতে পারেননি বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। সঞ্জোগ রাইয়ের বক্সের মধ্যে থেকে নেয়া শট গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকোকে পরাস্ত করে জালে প্রবেশ করে (১-০)। ৪২ মিনিটে ফের ডিফেন্সের ভুলে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে। ডিফেন্ডারদের ভুল বোঝাবুঝির সুযোগে বিশাল রাই বক্সের উপর থেকে শট করে গোল করেন (২-০)। ৎেকাচ এ ম্যাচেও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান। অনভিজ্ঞ ও তরুণ দুই মেহেদীকে খেলান। ফলে ডিফেন্স ও আক্রমণভাগ দুই জায়গাতেই বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল। ৮২ মিনিটে জামালের কর্নার থেকে সুফিল হেড করে স্কোরলাইন ২-১ করেন। ব্যাস, ওই পর্যন্ত। ব্যবধান কমালেও হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।
এমন ম্যাচের বাংলাদেশ দলের অনুভ’তি পেতে যোগাযোগ করা হয় জেমির সঙ্গে। হোয়াটসঅ্যাপে পরে বাংলাদেশ কোচ শুধু বললেন, ‘প্রথমার্ধে আমরা ভালো খেলতে পারিনি। সহজেই দুটি গোল হজম করেছি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভালো খেলেছি।’ নেপালের মাঠে তাদের বিপক্ষে ২-১ গোলে হারাটাই বাংলাদেশ দলের বর্তমান শক্তিমত্তা কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে বাস্তবতা বোঝালেন জেমি, ‘আমি গতকালই (পরশু) বলেছিলাম ম্যাচে নিজেদের মাঠে নেপালের জয়ের সুযোগ ৭০ ভাগ আর বাংলাদেশের ৩০। আমি মনে করি এটাই বাস্তবতা।’ বাংলাদেশের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ম্যাচটি জিতেছেন বলে জানান নেপাল কোচ বাল গোপাল, ‘বাংলাদেশের রক্ষণভাগ ভালো খেলতে পারিনি। তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা ছিল না। আমরা সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি। অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধে ভালো খেলেছে বাংলাদেশ।’
নেপালের এই প্রতিযোগিতায় এটিই বাংলাদেশের প্রথম হার। কিরগিজস্তান অন‚র্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে আত্মঘাতী গোলে ১-০ ব্যবধানে জিতে শুভস‚চনা করা ডের দল দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিকদের সঙ্গে গোলশ‚ন্য ড্র করেছিল। এই নিয়ে শেষ চার ম্যাচে এই প্রথম নেপালের কাছে হারল বাংলাদেশ। গত নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা দুই প্রীতি ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে ২-০ গোলে জিতেছিল জামালরা। পরের ম্যাচ হয়েছিল গোলশ‚ন্য ড্র। টানা তিন ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর হারের তেতো স্বাদ, সেটিই ফাইনালে! ২০০৩ সালে সবশেষ সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ী বাংলাদেশের সামনে ছিল দেড় যুগের শিরোপা খরা কাটানোর সুযোগ। কিন্তু ফাইনালের নিষ্প্রাণ পারফরম্যান্সে সে খরা হল আরও দীর্ঘ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।