Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

করোনা নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। গত একমাসে এর ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। সংক্রমণের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সোমবার থেকে দেশে ৫ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে। এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। দেশে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন স্ট্রেইন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও বিপজ্জনক বলে বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে সতর্ক করে দিয়েছেন। অপেক্ষাকৃত অল্প বয়েসী তরুণরা এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে । অক্সিজেন ও আইসিইউ পরিচর্যা আগের চেয়ে বেশি লাগছে। মার্চের প্রথম থেকে গতকাল প্রর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্তের হার, সংখ্যা এবং মৃত্যুহার প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে চলেছে। আমরা মার্চের শুরু থেকেই এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার কথা বলে আসছি। কিন্তু সরকারের মধ্যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয়। ফলে করোনা এক বিপজ্জনক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। ঢাকার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বিভাগ ও জেলা শহরগুলোতে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে চলেছে। দেরিতে হলেও সরকার করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। গত বছর মার্চ মাসে করোনা অতিমারির শুরুতে যেসব নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল, সরকার ঘোষিত নতুন নির্দেশনায় মূলত সে সবই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গত বছরের শুরুতে যেসব দেশ ত্বরিৎ কার্যকর পদক্ষেপসহ ব্যাপকহারে করোনা টেস্ট এবং চিকিৎসাব্যবস্থা জোরদার করতে সক্ষম হয়েছে, মূলত তারাই সহজে করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চীন সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল। আমেরিকা ব্রাজিলসহ যেসব দেশ করোনা নিয়ে সন্দেহ ও তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করেছিল, তাদের এখনো অনেক খেসারত দিতে হচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে। তবে জানুয়ারি থেকে করোনার ভেকসিনেশন শুরু হয়ে অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও এখন তা অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। করোনার দ্বিতীয় ভেকসিন নিয়ে ইতোমধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও করোনার দ্বিতীয় ভেকসিন শুরু করা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। গত আড়াইমাসে করোনা টিকা প্রদানের হার শতকরা তিন শতাংশের বেশি নয়। অথচ দ্রুত ও কার্যকরভাবে টিকা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে না পারলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মার্চের শুরুতেই করোনা মোকাবেলায় গত বছরের ন্যায় দৃঢ় ও কড়াকড়ি পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল। এক্ষেত্রে, দেখব, দেখছির মতো শৈথিল্য দেখা গেছে। যার ফলাফল করোনা সংক্রমণের হারের উলম্ফন। এ প্রেক্ষিতে, আরেকটি লক-ডাউনের চাপ আমাদের অর্থনীতি সামাল দিতে পারবে না, তথাপি সরাসরি লক-ডাউন পরিহার করে জনসমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠানাদি, গণপরিবহণে নির্দেশিত বিধি নিষেধ এবং সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব নয়।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় গত ২৯ মার্চ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা ১৮ দফা নির্দেশনায় সব ধরণের সামাজিক অনুষ্ঠানাদি সীমিত করার কথা বলা হয়েছে। ধর্মীয় উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পর্যটন বিনোদন কেন্দ্রের সমাগম নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। গণপরিনবহণে অর্ধেক সিট খালি রেখে যাত্রী পরিবহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং স্টোর বন্ধ রাখা, হোটেল রে¯েঁÍারায় ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার মত নির্দেশনাগুলো জারি করা হলেও এসব নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নসহ কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা না গেলে শুধু নির্দেশনায় কোনো কাজ হবে না। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সউদী আরব ইফতার ও সেহরির আয়োজন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের দেশেও মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে ইফতার পার্টি বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। ইফতার সামগ্রী বেচা-কেনায় নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত রাখতে জনসাধারণকে সতর্ক ও সচেতন করতে হবে। যেসব জেলায় সংক্রমণের হার বেশি সেসব জেলার জেলাপ্রশাসককে বিয়ে-সাদীসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানা ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। করোনা টিকা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ভেকসিন কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়া কাম্য হতে পারে না। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ঘোষিত নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নে সরকারকে কঠোর হতে হবে। এক্ষেত্রে সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগ, সব হাসপাতালে করোনা টেস্ট ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি করোনা ভ্যাকসিন পেতে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন