পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত, হাদিসের পরিভাষায় নিসফে শাবানের রাতকে শবে-বরাত বলা হয়ে থাকে। ফারসি শব্দ ‘শব’এর অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ শব্দটি ফারসি ও আরবি উভয় ভাষাতেই প্রচলিত। ফারসি ভাষায় বরাত শব্দটির অর্থ হচ্ছে ভাগ্য। এদিক থেকে শবেবরাত অর্থ ভাগ্যরজনী। অপরদিকে ‘বরাত’ শব্দটিকে যদি আরবি শব্দ বারাআতুন থেকে উদ্ভূত ধরা যায় তবে এর অর্থ দাঁড়ায় নি®কৃতি, দায়মুক্তি, অব্যাহতি ইত্যাদি। এর আগে ‘শব’ শব্দটি যুক্ত করলে ‘শবে বারাআত’-এর অর্থ দাঁড়ায় নিষ্কৃতি, দায়মুক্তি, অব্যাহতি ইত্যাদির রাত। শবেবরাত মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে আমাদের এই উপমহাদেশসহ আশেপাশের দেশসমূহে। ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে রাতটি খুবই জাঁকজমকের সাথে পালন করা হয়ে থাকে। এই পবিত্র রাতের ফজিলত গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নফল এবাদত পালন করা হয়ে থাকে। হাদিসের ভাষায় নিসফে শাবান তথা শাবান মাসের অর্থ রাতের গুরুত্ব রয়েছে। হজরত আলি (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন অর্ধশাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে এবাদত করো এবং পরের দিনটিতে রোজা রেখো। কেননা প্রত্যেক রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমতা করব। কোনো রিযিক প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করব। আর সুবহে সাদিক পর্যন্ত এ ডাক অব্যাহত থাকে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরো কিছু হাদিস রয়েছে। যেমন-হজরত আয়েশা (রাঃ) এর ভাষায়, কোনো এক শাবান মাসের অর্থ রাতে নবী করিম (সাঃ) কে বিছানায় পাওয়া যাচ্ছিল না। খুঁজে দেখা গেল তিনি মদিনার জান্নাতুল বাকীতে কবর জিয়ারত করছেন। এই হাদিসের ভিত্তিতে এ রাতে নফল আমল হিসাবে অনেকেই মৃত আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করে থাকেন।
প্রকৃতপক্ষে রমজান মাসের প্রস্তুতি গ্রহণের মাস হিসাবে শাবান মাস অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাস। কেননা নবী করিম (সাঃ) শাবান মাসে এ দোয়াটি বেশি বেশি করতেন, ‘ হে আল্লাহ রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং রমজান পর্যন্ত আমাদেরকে পৌঁছার তওফিক দিন।’ রমজানের প্রস্তুতি হিসাবে নবী করিম এ মাসে বেশি বেশি করে নিজেও রোজা রাখতেন এবং অন্যদেরও রোজা পালন করতে বলতেন। হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সাঃ) শাবান মাসের চেয়ে বেশি আর কোনো মাসে রোজা রাখতেন না। বলতে গেলে প্রায় পুরো শাবান মাসই রোজা রাখতেন। অন্য রাওয়াতে বলা হয়েছে, তিনি শাবান মাসে স্বল্পসংখ্যক রোজা রাখতেন। রমজান মাসের প্রস্তুতি হিসাবে শাবান মাসের অন্যতম নফল, এবাদত বোজা পালন হিসাবে নিসফে শাবান তথা বরাতের আগে পরে মিলিয়ে কমপক্ষে দুটো রোজা পালন করা উচিত। তাছাড়া প্রতি চান্দ্র মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখে তিনটি নফল রোজা পালন করার ওপর নবী করিম (সাঃ) অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন তুমি মাসে তিনটি রোজা রাখতে চাও, তখন তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখে রোজা রাখো।
কেউ যদি বরাতের রাত পালন উপলক্ষে শাবান মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখে তিনটি নফল রোজা রাখে তবে সে আইয়ামে বীযর নফল সওয়াবও পেয়ে যায়। নিসফে শাবানের রাতে নফল নামাজ আদায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। কিন্তু এ সমস্ত আমলের ক্ষেত্রে আবেড়তাড়িত হয়ে কোনো রকম বাড়াবাড়ি করা যাবেনা এবং এ সমস্ত নফল এবাদতকে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুসাককাদাহর উপর গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। অথবা নফল আদায় করতে গিয়ে কোনো ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুআক্কাদায়হ যেন বিঘিœত না হয় সেদিকে তী² নজর রাখতে হবে। রাত জেগে নফল নামাজ মসজিদে ও নিজ গৃহে নীরবে-নিভৃতে আদায় করা যেতে পারে। ইসলামি শরিয়ত মতে, মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করতে হবে আর বাকি সুন্নাত ও নফল নামাজ ঘরে আদায় করাই উত্তম। কেননা তাতে ঘরেও একটি নামাজের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের ঘরে নামাজ পড়। কারণ, ফরজ নামাজসমূহ ছাড়া মানুষের সেই নামাজই উত্তম যা সে তার ঘরে আদায় করে।
এ রাতে আরেকটি আমল আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর কবর জিয়ারত। শরিয়তের বিধান পালন করে এ রাতে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর কবর জিয়ারত করা যেতে পারে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি ইতিপূর্বে তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা জিয়ারত করো।’
লেখকঃ সাংবাদিক-কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।