বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নরেন্দ্র মোদির আগমন বাংলাদেশের জনগণ চায় না। মোদির আগমন বাতিল করতে হবে। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উৎযাপন উপলক্ষ্যে এমন কাউকে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসা উচিত নয়, যাকে এদেশের মানুষ চায় না, বা যার আগমন এদেশের মানুষকে আহত করবে। ভারতের মুসলিম বিদ্বেষী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদ এবং সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও মিডিয়ায় প্রচারিত অসত্য সংবাদের ব্যাপারে আজ সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরী আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব। এতে আরো বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব মাওলানা মো.নূরুল ইসলাম জিহাদী ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিতি ছিলেন, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা জোবায়ের আহমেদ, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মুনির হোসেন কাসেমী, মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা শরিফুল ইসলাম, মাওলানা জহিরুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একজন মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত। তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে তার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে গুজরাটে মুসলমানদের উপর পরিচালিত ভয়াবত হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস ভুলে যাওয়ার মতো নয়। মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ঐহিতাসিক বাবরী মসজিদ ধ্বংস এবং সেখানে অন্যায়ভাবে মন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্ত এখনো আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। এ ছাড়াও কাশ্মীরে নৃশংস মুসলিম নির্যাতন, নাগরিকত্ব আইনসহ প্রতিটি মুসলিম বিরোধী সিদ্ধান্তের মূল হোতা এই নরেন্দ্র মোদী। বছরখানেক আগে তার অনুসারীদের হাতে দিল্লীতে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে।
নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের নামে আসামে লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে বাংলাদেশী অভিহিত করে অনেকটা বন্দি করে রাখা হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ ত্রিপুরার মুসলমানদেরকেও অনিরাপদ অবস্থায় ঠেলে দেয়া হচ্ছে। একাধিকবার নরেন্দ্র মোদি তার ভাষণে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী অভিহিত করে তাদেরকে বাংলাদেশে তাড়িয়ে না দিলে ভারতের মানুষেরা চাকরি পাচ্ছে না বলে উস্কানি দিয়েছেন। আজ ভারতের মুসলমানদেরকে ঠুনকো অজুহাতে প্রকাশ্য রাজপথে পিটিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে।
গঙ্গার পানি চুক্তি যে প্রত্যাশার পরিবেশ তৈরি করেছিলো, তার বাস্তবায়ন হয়নি। তিস্তা নদীর পানিবন্টন চুক্তি পেছাতে পেছাতে এখন তালিকা থেকেই বাদ পড়ে গেছে। ভারতের নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশকে সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সীমান্তে প্রতিনিয়ত নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের হত্যা করে যাচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
এতে আরো বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের এক শিয়া নেতা মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ২৬ টি আয়াত বাতিল চেয়ে কোর্টে রিট করেছে। এই রিটের মাধ্যমে গোটা পৃথিবীর মুসলমানদের কলিজায় আঘাত করা হয়েছে। সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ আল কোরআনের কোন আয়াত থাকবে আর কোন আয়াত থাকবে না এটা কি মোদি সরকার আর তাদের আদালত ঠিক করে দিবে? এমন স্পর্ধা আর ধৃষ্টতা কোনো মুসলমানের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। ভারতের এহেন কর্মকান্ডে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের মানুষ চরম বিক্ষুব্ধ। সে কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর এই গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে নরেন্দ্র মোদির মত একজন মুসলিম বিদ্বেষী ব্যক্তি আসুক এটা আমরা চাই না। আমরা বাংলাদেশ সরকারের নিকট দেশের অধিকাংশ মানুষের সেন্টিমেন্টের প্রতি সম্মান জানিয়ে নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণ বাতিলের আহবান জানাই। অন্যথায় পরিস্থিতির অবনতি হলে তার দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। আমরা পরিস্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, মুসলমান হিসেবে ঈমানী দায়িত্ব ও দেশপ্রেমের দায়বোধ থেকেই মোদির আগমনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, গত ১৭ মার্চ সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের সংখ্যালঘুদের উপর জঘন্য আক্রমণ হয়েছে। ভাঙচুৃর ও লুটপাট করা হয়েছে বসতভিটা। আমরা তাৎক্ষণিক এর নিন্দা জানিয়েছি এবং আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে পুনরায় নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এই ঘটনার যাচাই-বাছাই ছাড়াই এক শ্রেণির মিডিয়া তাৎক্ষণিক প্রচার শুরু করে দেয় যে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে জনৈক ঝুমন দাসের ফেসবুকে কটুক্তির প্রতিবাদে এই হামলা হয়েছে। এভাবে কোনো ধরনের নিরপেক্ষ বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই এই ঘটনার দায় হেফাজতে ইসলামের উপরে চাপানোর চেষ্টা করা হয়। অথচ দুদিনের মাথায় জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এই বর্বরোচিত ঘটনার সাথে হেফাজতে ইসলাম বা মাওলানা মামুনুল হকের দূরতম কোনো সম্পৃক্ততাও নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইসলাম শান্তি, মানবতা ও সম্প্রীতির ধর্ম। অন্যায়ভাবে কারো উপর আঘাত করার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি। ইসলাম সংখ্যালঘুদের পরিপূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে। বিপুল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিয়ে সংখ্যালঘুরা বসবাস করছে। সারা দেশের কোথাও সংখ্যালঘু নির্যাতনের সাথে আলেম উলামা কিংবা ইসলামী সংগঠনের ন্যূনতম সম্পৃক্ততার প্রমাণ নেই। অথচ যখনই কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ও বাড়িঘরে হামলা বা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে, তৎক্ষণাৎ দেশি-বিদেশি চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষী মহল ইসলামী সংগঠন এবং ওলামায়ে কেরামের ওপর দায় চাপিয়ে বিভ্রান্তিকর ও প্রোপাগান্ডা চালায়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নেতৃবৃন্দ শাল্লার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।