Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় বিতাড়িত গৃহবধূ স্বামীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলেন

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২১, ৭:৩৭ পিএম

মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার অপরাধে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়া গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ার কুড়া গ্রামের লুৎফর মিয়ার মেয়ে রোকসানা বেগম নির্যাতনের অভিযোগ এনে স্বামী রাজা মিয়া, শশুর ও শাশুড়ীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। রোকসানা বেগম তার ১৪ দিন বয়সের সেই কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে আদালতে যান। তার প্রতি অন্যায় ও নির্যাতনের প্রতিকার দাবি করেছেন।
রবিবার (২১ মার্চ) দুপুরে গাইবান্ধার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে উপস্থিত হয়ে মামলার আবেদন করেন রোকসানা। আদালতের বিচারক শুনানী শেষে মামলাটি সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদি রোকসানার আইনজীবী এ্যাড. হাসিবুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ২০২০ সালের ১০ জুন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধনিয়ার কুড়া গ্রামের লুৎফর মিয়ার মেয়ে রোকসানার সঙ্গে বিয়ে হয় পাশ্ববর্তী সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোড়ামাড়া গ্রামের মহব্বত আলীর ছেলে রাজা মিয়ার। বিয়ের পর থেকেই যৌতুক দাবিসহ নানা কারণে রোকসানাকে নির্যাতন করে স্বামী রাজাসহ তার পরিবারের সদস্যরা। এরপর রোকসানা গর্ভবতী হলে তার শারীরিক পরীক্ষা করে কন্যা সন্তানের বিষয় অবগত হয় স্বামী রাজা মিয়া। এতে ছেলে সন্তানের আশা করা স্বামী রাজা মিয়াসহ তার বাবা-মা রোকসানাকে নির্যাতন ছাড়াও বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করেন। গত ৮ মার্চ রংপুরের একটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় রোকসানা। এরপর ১১ মার্চ সন্তান কোলে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে গেলে তাকে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি শশুর-শাশুড়ী। বিকেল পর্যন্ত নবজাতক সন্তানকে কোলে নিয়ে বাড়ির উঠানে দাড়িয়ে ছিলেন গৃহবধূ। এসময় শশুর বাড়ির লোকজন রোকসানাকে তিন মাস আগে তালাক দেয়ার কথা জানায়। পরে রোকসানাকে তাড়িয়ে দেয় স্বামীর বাড়ির লোকজন। 'মেয়ে জন্ম দেয়ায় ঘর থেকে বিতাড়িত মা' শিরোনামে খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং দেশজুড়ে আলোচিত ঘটনায় রূপ নেয়। তবে এই অমানবিক ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও নবজাতকসহ মা রোকসানার পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনও তার খোঁজ রাখেনি। আদালতের বারান্দায় নবজাতককে কোলে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রোকসানা বলেন, ‘যৌতুক দিতে না পারায় স্বামী আমাকে নির্যাতন করেছে। আমি আমার স্বামীর কঠিনতম শাস্তি চাই। আমার মতো কেউ যেন মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়ে এভাবে স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত না হয়। সেই সাথে কেউ যেন এভাবে নির্যাতনের শিকার না হয়। আমি আমার সন্তানের পিতৃ পরিচয় চাই। রোকসানা আরও বলেন, 'চারদিনের বাচ্চাটার কি দোষ। ও মেয়ে জন্য বাবার বাড়িতে স্থান পায় নাই। ভাবছিলাম, ওরা ভুল বুঝেছে। একদিন সন্তানসহ আমাকে ঘরে নেবে। কিন্তু না ওরা একবার সন্তানটার খবর পর্যন্ত নেয়নি। রোকসানা আরও বলেন, স্বামী আগে থেকে বলেছিল ছেলে হলে ও খুব খুশি হবে। পরে মেয়ে জন্ম হবে ডাক্তারী পরীক্ষায় এটা বোঝার পর থেকে ওরা সবাই আমাকে নির্যাতন করেছে। এক বেলা ভাত দিয়েছে আরেক বেলা দেয়নি।
এদিকে দরিদ্র দিন মজুর বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কোলের শিশুসহ রোকসানা পড়েছেন বিপাকে। তার বাবার পক্ষে মেয়ে ও নাতনীর ভরণ-পোষণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কোন মতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে রোকসানা ও তার নবজাতকের। তাছাড়া রোকসানাকে নিয়মিত অষুধ খেতে হচ্ছে। অবশেষে বাধ্য হয়ে আদালতের কাছে বিচার প্রার্থী হলেন রোকসানা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মামলা দায়ের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ