পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার ঘটনায় গত রোববার হিন্দু মন্দির ও ঘর-বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরেকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নাসিরনগরে শান্তি সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।
এদিকে গতকাল সোমবার নাসিরনগরের পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল সোমবারও পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির সদস্যদেরও রাস্তায় টহল দিতে দেখা গেছে।
নাসিরনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, রোববারের হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আরেকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। উপজেলার দত্ত বাড়ির মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় কাজল জ্যোতি দত্ত বাদী হয়ে একটি এবং গৌর মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় উপজেলা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চন্দ্র চৌধুরী বাদী হয়ে অপর একটি মামলা দায়ের করেন। উভয় মামলাতেই অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে ১ হাজার দুইশত লোককে আসামি করা হয়। হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে গত রোববার রাতে ৬ জন এবং গতকাল সোমবার সকালে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে গ্রেফতারকৃতদের নাম জানা যায়নি।
এদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ রেজওয়ানুর রহমান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম, নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হামিদা লতিফ পান্না।
বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. রাফি উদ্দিন, সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, উপজেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আহ্বায়ক রিয়াজুল করিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরুন জ্যোতি ভট্টাচার্য, উপজেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত নেতা এস এম শহীদুল্লাহ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার রায়, উপজেলা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চন্দ্র চৌধুরী, হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী ফারুক মিয়া। শান্তি সমাবেশে ইউনিয়নের বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।।
এদিকে পবিত্র কাবা শরীফকে অবমাননা করে আপত্তির ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পরও একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করে গত রোববার নাসিরনগরে হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিভিন্ন মন্দির ও বাড়ি-ঘরে ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের কঠোর হস্তে দমন করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি সামাজিক শান্তি ও ধর্মীয় চেতনা রক্ষা এবং নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টিকারীদের অপতৎপরতা প্রতিহত করতে প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্য নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ এবং নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদেরের দ্রুত অপসারণ দাবি করে জেলা আওয়ামী লীগ। গত রোববার রাতে স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মহিউদ্দিন খান খোকন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি করা হয়।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার নাসিরনগর উপজেলা হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাস-(৩০) পবিত্র কাবা শরীফ অবমাননা করে আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে। এ ঘটনায় শনিবার বিকেলে স্থানীয় লোকজন রসরাজ দাসকে ধরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই রসরাজের বিরুদ্ধে নাসিরনগর থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় রোববার উত্তেজিত জনতা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ করে বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়ি-ঘর এবং দত্তবাড়ি মন্দির, জগন্নাথ বাড়ি মন্দিরসহ ১৩টি মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা বিকেল ৩টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আবদুল কাদের বলেন, রবিবারের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরেকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৮জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, নাসিরনগরে সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা সেখানে শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশ করে জনগণকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।