বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বাজিতপুরের গজারিয়া গ্রামের কৃষক আবু জামান ফেসবুক ব্যবহার করতে জানে না, নিজের স্মার্টফোনও নেই। তারপরও তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে কথিত ‘মানহানিকর’ পোস্ট দেয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। পুলিশের ভয়ে তিনি এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
মামলায় অভিযোগ তার পরামর্শে অন্য একজন ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছে। ফেসবুকে পোস্ট দেয়া আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে কটিয়াদি থানার পুলিশ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এমন মামলা নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন মহলে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলায গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো আবু জামানের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধে কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশী গিয়াস উদ্দিনের মামলা চলছে। গিয়াস উদ্দিন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। অবশেষে আবু জামানকে ফাঁসাতে মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান শিকদার (৪৩) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/৩১ ধারায় মামলা (মামলা নং ১৯) দায়ের করেছেন আবু জামানের বিরুদ্ধে। কৃষক আবু জামান ফেসবুক কি জিনিস বোঝেন না, আইডি খুলে চালানো তো দূরের কথা। তবে আবু জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি আল আমিন (২৫) নামে অন্য একজনের ফেসবুকের মাধ্যমে বাদী মিজান শিকদারের মৃত বাবার বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রচার করেছেন। আর এই অভিযোগে গত বছরের ১৯ অক্টোবর কটিয়াদি মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আল আমিনকে প্রধান আসামি ও আবু জামানকে দ্বিতীয় আসামি করে মামলাটি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আল আমিনকে গত বৃহস্পতিবার রাতে কটিয়াদি থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এরপর থেকে আবু জামান পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
কটিয়াদি থানার ওসি এসএম শাহাদত হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মামলায় কথিত ফেসবুক স্ট্যাটাসটি থানা থেকে সিআইডি’র বিশেষজ্ঞ দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে মামলাটি বানোয়াট প্রমাণিত হলে বাদীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।কারও পরামর্শে অন্য কেউ ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাকে আসামি করা সমীচীন কি-না, প্রশ্ন করলে ওসি সাংবাদিকদের জানান, যেহেতু মামলার এজাহারে আল আমিনের যোগসাজশে ফেসবুকে কুৎসা রটানোর কথা উলেখ করা হয়েছে, সেই কারণেই কৃষক আবু জামানকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি কটিয়াদি থানার এসআই তোফায়েল আহমেদ তদন্ত করছেন। তবে কথিত ফেসবুক স্ট্যাটাসটি সিআইডির বিশেষজ্ঞ দলের কাছে পাঠানো হয়েছে এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য। ফলাফল পেলেই পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।জানা গেছে, জমি নিয়ে বিরোধে ২০০২ সালে আবু জামানের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করেন প্রতিবেশী গিয়াস উদ্দিন। এরপর আবু জামানের বসতভিটা আত্মসাৎ করার জন্য তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, চুরি-ডাকাতি এবং অগ্নিসংযোগসহ আরও চারটি মামলা করা হয়। গিয়াস উদ্দিন মারা গেছেন। তার ছেলে মিজানুর রহমান শিকদার বর্তমানে কটিয়াদি এলাকায় বসবাস করেন। তিনি বাদী হয়ে গত বছরের ১৯ অক্টোবর আবু জামানের বিরুদ্ধে কটিয়াদি মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা (মামলা নং ১৯) করেছেন।
মামলায় বলা হয়েছে, বিলপাড় গজারিয়া গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে আল আমিন নামে একজনের ফেসবুকে বাদীর মৃত বাবার বিরুদ্ধে আবু জামান নানা রকম মানহানিকর বক্তব্য প্রচার করেছেন। অবশ্য মামলা দায়েরের ৫ মাসেও পুলিশ আদালতে কোন অভিযোগপত্র দেয়নি।
আসামি আবু জামান সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধে মিজানুর রহমান শিকদারের পরিবার তাকে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। অবশেষে মিথ্যা অভিযোগ এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা করা হয়েছে। এটি কি ধরনের মামলা, কোথায় এর আদালত, তাও তিনি জানেন না। বাদীর বাবার বিরুদ্ধে যেই আল আমিনের ফেসবুকে কুৎসা রটানোর কথা বলা হয়েছে, সেই আল আমিন নামে কাউকে তিনি চেনেন না বলে জানিয়েছেন। এই মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা থেকে বাঁচতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করছেন।
মামলার বাদী মিজানুর রহমান শিকদার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, তার বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার বিরুদ্ধে আবু জামান এলাকার চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন জায়গায় বসে মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে আসছেন। আর এসব বক্তব্য এক নম্বর আসামি আল আমিন তার ফেসবুকে পোস্ট করেন। এজন্য তিনি দু’জনের নামে মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে কটিয়াদি মডেল থানার ওসি এসএম শাহাদত হোসেন কটিয়াদি প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটি নিয়ে এক ধরনের চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। কৃষক আবু জামান স্মার্টফোন এবং ফেসবুক চালাতে না পারলেও তিনি আল আমিনের যোগসাজশে ফেসবুকে বাদীর বাবার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছেন বলে উলেখ করায় আবু জামানকে আসামি করা হয়েছে।তবে পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে বলে তিনি জানান। এমনকি, যে ফেসবুক স্ট্যাটাসের কথা বলা হয়েছে, সেটি সিআইডির বিশেষজ্ঞ দলের কাছে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হলে বাদীর বিরুদ্ধে উল্টো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই উলেখ করা আছে বলে ওসি মন্তব্য করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।