Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সময়মতো টিকা চাই

| প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২১, ১২:০৭ এএম

করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে। এর কারণে গত এক বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। আশার কথা হচ্ছে, দেশে দেশে বেশ কয়েকটি কোভিড ভ্যাকসিনের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও সফল প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এমন একটি প্রাণঘাতী রোগের প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন নিয়ে সব মানুষের উৎকণ্ঠা ও আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক। এ জন্য ভ্যাকসিন বাজারে আসার আগে চীন-ভারতের মতো প্রতিদ্ব›দ্বী ও প্রভাবশালী দেশকে ভ্যাকসিন কূটনীতিতে তৎপর দেখা গেছে। এই দুই দেশের রশি টানাটানির জেরে চীনের সাথে ভ্যাকসিনের চুক্তি করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও তা স্থগিত হয়ে যায় এবং বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে ভ্যাকসিনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি অনুসারে ৩ কোটি ডোজ টিকার মূল্য হিসেবে অগ্রিম ৫ শতাধিক কোটি টাকা পরিশোধ করার পর ভারত সরকার টিকা রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অবশেষে বিষয়টির একটি ইতিবাচক মীমাংসার কথা শোনা গেলেও চুক্তি অনুসারে প্রতি মাসে ৫০ লাখ টিকা সরবরাহের কথা থাকলেও বাংলাদেশ তা পাচ্ছে না। চুক্তি অনুসারে টাকা নিয়ে টিকা সরবরাহ না করে ২০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে উপহার দেয়ার কথা প্রচার করা হয়। গত ২ মাসে ১ কোটি ডোজ টিকা পাঠানোর কথা থাকলেও উপহারসহ ৭০ লাখ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তি এভাবে লঙ্ঘিত হওয়ায় বাংলাদেশে কোভিড ভ্যাকসিনেশন নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অনেক দেশেই করোনার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউ চলছে। অনেক স্থানে নতুন করে লকডাউনসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সীমিত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। গত বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর সরকারের নানামুখী উদ্যোগে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত রাখা সম্ভব হয়েছিল। বছর ঘুরে আবারো করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার আলামত পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন। এহেন বাস্তবতায় সব নাগরিককে কোভিশিল্ড বা করোনা ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসাই নিরাপত্তার একমাত্র বিকল্প। প্রথমে ভারতের ভ্যাকসিন কূটনীতি বাংলাদেশকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি এস্ট্রাজেনেকোর ভ্যাকসিনের উপর নির্ভর করতে বাধ্য করেছিল। এখন ভারতের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি বাংলাদেশে ভারতের ভ্যাকসিন সরবরাহের পথে প্রতিবন্ধকতা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে চলেছে। যেখানে বিশ্বের অনেক দেশই একাধিক বিভিন্ন উৎস থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সব সুযোগই কাজে লাগিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ কেন সুযোগ থাকা সত্তে¡ও ভারতের কূটনৈতিক রাজনীতির ফাঁদে পা দিল তা’ সত্যিই বিস্ময়কর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভোটের রাজনীতিতে এবং আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী স্বার্থ রক্ষায় সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই নিজেদের স্বার্থ রক্ষা ও টিকা প্রাপ্তির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে।

টিকা নিয়ে কূটনীতি, রাজনীতি এবং ধনী দেশগুলোর কারণে গরিব দেশগুলোর সময়মত টিকা প্রাপ্তি নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। করোনার টিকাকে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা ও রাজনীতিমুক্ত রাখা এবং সব মানুষকে বিনামূল্যে টিকা সরবরাহের ব্যাপারেও কথাবার্তা হয়েছে। উল্লেখ্য, বিশ্বের শতাধিক দেশ এখনো করোনা ভ্যাকসিনেশন শুরুই করতে পারেনি। টিকা কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবশ্যই অগ্রসরদের তালিকায় রয়েছে। তবে সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তিবদ্ধ ৩ কোটি ডোজ দিয়ে টিকা কার্যক্রমের সিকিভাগও নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশকে অন্তত ২৮ কোটি ডোজ টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে চীনের সিনোভ্যাক, ফাইজার বায়োএনটেক, রাশিয়ার গ্যামালিয়া ইনস্টিটিউটসহ সম্ভাব্য সকল উৎস থেকে টিকা কেনার কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে দেশে চলমান নিজস্ব টিকা উৎপাদন কর্মসূচির প্রতিও মনোযোগ দিতে হবে। এই মুহূর্তে চুক্তি অনুসারে সময়মত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও বাংলাদেশকে ১ কোটি ৯ লাখ টিকা সরবরাহ করার কথা রয়েছে। তবে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ বছরের মধ্যে সময়মত টিকা পাওয়া। তা না হলে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয়-তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও মন্দা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। চুক্তি অনুসারে সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা প্রাপ্তির ব্যাপারে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টরা ইতোমধ্যে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা আশা করব, তারা টিকাকে ভোটের রাজনীতি ও আধিপত্যবাদী রণনীতি থেকে মুক্ত রাখবেন। তবে বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তার মূল দায়িত্ব সরকারের। এ ক্ষেত্রে সরকারকে সম্ভাব্য সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টিকা


আরও
আরও পড়ুন