প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
বাংলা চলচিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে যে কয়জন অভিনেতা সিনেমা প্রেমীদের হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন তাঁর মধ্যে শাহীন আলম অন্যতম। এই পর্যন্ত ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করে তিনি আলোচনায় এসেছেন বহুবার। স্বপ্নের নায়ক ছবিতে অমর নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে অভিনয় করে আলোচনায় আসা চিত্রনায়ক শাহীন আলম আর নেই। কিডনি জনিত জটিলতায় তিনি সোমবার রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান।
অশ্লীল নায়ক হিসেবে তকমা পাওয়া ও বেশ সমালোচিত নায়ক শাহীন আলমের মৃত্যুর পর তার স'ম্পর্কে জানা গেল দারুণ এক গল্প। যে গল্প পরিচয় করিয়ে দেয়া অজানা এক শাহীন আলমের সঙ্গে। অনেকদিন অভিনয়ে ছিলেন না প্রায় চার শতাধিক সিনেমা'র অভিনেতা শাহীন আলম।
গেল কয়েক বছর আগে হঠাৎ জানা যায় তার দিন চলে গুলিস্তানে কাপড়ের ব্যবসা করে। অর্থনৈতিক জৌলুস নেই, কিডনির জটিল অসুখে আক্রান্ত হয়ে সিনেমায় বেকার শাহীন আলম নিজের চিকিৎসা করাতে করাতেই প্রায় নিঃস্ব হয়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। তাই অসুস্থ শরীর নিয়েই দোকান চালাতেন তিনি। চেয়েছিলেন প্রধামন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অনুদানও। সর্বশেষ ১ মার্চ তার শরীর বেশি খারাপ হলে তাকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে। গত ৮ মার্চ রাত ১০টা ০৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র অভিনেতা শাহীন আলম।
শাহীন আলমের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন কাজী মুশফিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। তার সেই স্ট্যাটাস রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। তিনি ছিলেন শাহীন আলমের পুত্র ফাহিমের হোম টিউটর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এ ছাত্র ফাহিমকে বাসায় এসে পড়াতেন। সেই সুযোগে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন চমৎকার দয়ালু চরিত্রের একজন শাহীন আলমের সঙ্গে। এক আবেগঘন স্মৃতিচারণে তিনি লিখেছেন সেই অজানা শাহীন আলমের গল্প।
তিনি লেখেন, ‘সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ দিকের কথা, আমার পড়াশোনার খরচ জোগানো বাবার পক্ষে খুব কস্ট হয়ে যাচ্ছিলো। তখন শাহীন আলম সাহেবের ছেলেকে পড়িয়ে নিজের খরচ চালাতাম। মগবাজারে ওনার বাসা ছিলো। তারপর চলে গেলেন নিকেতনে ঝকমকে ফ্ল্যাটে। আমি পরলাম মহা ফাপরে। সেই জাহাঙ্গীরনগর থেকে আসতাম দুপুরের বাসে, আসাদগেট নেমে গুলশান ১ ট্যাম্পুতে তারপর হেঁটে নিকেতন। এখনকার মতো নিকেতন নয়, সবে শুরু হয়েছে বাড়ি ওঠা। সে গল্প থাক আত্মজীবনীর জন্য।যখন বাচ্চাটাকে পড়িয়েছি বেশিরভাগ দিনই দুপুরের ভাত খাওয়াটা হতো না। সেই জাহাঙ্গীরনগরে ২টা ৩০ মিনিটে বাস ধরতে ছুটতে হতো। সেই জাহাঙ্গীরনগর টু নিকেতন। কাঁচা রাস্তা। মহাখালী ফ্লাইওভারের কাজ চলে… সে এক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। পড়ানো শেষ করে ফিরতে হতো রাত। যাক সে আলাপও থাক। একদিন শাহীন আলম সাহেবের মা এসে দেখলেন চায়ের সাথে দেয়া গোটা কয়েক বিস্কুট এক নিমিষেই খেয়ে ফেলেছি। চরম ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত আমার সেদিকে কোনো খেয়াল ছিলো না। পরদিন থেকে হঠাৎ রকমারি নাস্তা আসতো। রাক্ষুসে খিদেটা মিটতো।
একদিন কালো স্যুট পরা শাহীন আলম সাহেব আমাকে রাতে নিকেতনের কাঁদাপানিতে ফিরতে দেখেন। আমি হন্তদন্ত হয়ে ৮টার বাস টার্গেট করে জোর কদমে হাঁটছি বলা ভুল হবে, দৌড়োচ্ছি… পরেরদিন ছেলের পড়া দেখতে আসবার ছলে অবজারভ করেন আমি সমুচা-রোল যা দেয় তা ঝাঁপিয়ে পরে খাই। পড়ানোর চেয়ে খাওয়ায় আমার আগ্রহ। কোনো কথা না বলে অন্য রুমে চলে যান। তারপর থেকে মাস্টার্স দেয়া অবধি যতদিন ফাহিম সম্ভবত ছেলেটার নাম, পড়িয়েছি আমার জন্য বাহারি তরকারি দিয়ে ভাত আসতো নাস্তা হিসেবে। রাতে ওনার চকচকে গাড়িটা বেশিরভাগ দিনই আসাদ গেট নামিয়ে দিয়ে যেত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ টার বাস ধরতে। বেতনও বাড়িয়ে দিলেন না চাইতেই!!!’
তিনি আরও লেখেন, ‘এমন অসীম মমতাবান একজন মানুষকে আপনারা চিনেন একজন অভিনেতা হিসেবে। অশ্লীল ছবিও করেছেন তিনি। আপনাদের হিসেবে। আর আমি চিনি একজন অভূক্ত মানুষকে পরম মমতার ছায়ায় আশ্রয়দাতা হিসেবে। আপনাদের হিসেবে কূলোবে না।’ শাহীন আলমের জন্য দোয়া করে তিনি বলেন, ‘আল্লাহতালা আপনাকে অনেক অনেক শান্তিতে রাখুক। আমিন।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।