পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ডিজিটাল বিপ্লবের জয়গানে আমরা সবর্দা উচ্চকণ্ঠ। অথচ এই বিপ্লবের প্রত্যাশিত সুবিধা-সেবা গ্রাহকরা ঠিকমত পাচ্ছে না। সত্য বটে, চলমান করোনাকালে ডিজিটালসেবার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা বিশেষভাবে অনুভব করা গেছে। যখন প্রায় সব কিছু বন্ধ থেকেছে, তখন ডিজিটালসেবা দুয়ার খুলে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। দেখা গেছে, অনলাইনে যোগাযোগ, লেখাপড়া, কেনাকাটা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালতের কাজকর্ম, আর্থিক লেনদেনসহ অনেক কিছুই হয়েছে। এখনো হচ্ছে। করোনাকালের সহসা ইতি ঘটবে, এমন ধারণা করা যাচ্ছে না। আরো অনির্দিষ্টকাল এ নাজুক অবস্থা প্রলম্বিত হতে পারে। যদিও টিকা নেয়ার কারণে করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করেছে এবং আস্তে আস্তে সবকিছুই উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে তবু ডিজিটালসেবার প্রয়োজনীয়তা যে এতটুকু কমবে, সেটা মনে হয় না। ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে ‘ডিজিটাল দুনিয়া’ তার অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। এই দুনিয়াকে উপেক্ষা করে কিংবা বাদ দিয়ে বিশ্বের কোনো দেশেরই চলা সম্ভব নয়। আগামীর প্রয়োজন পূরণ ও চ্যালেঞ্জে মোকাবিলায় বাংলাদেশ বসে নেই। তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়ক নির্মাণ ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুবিধাদি চয়নে অবকাঠামো তৈরি, জনসম্পদ প্রস্তুত, প্রযুক্তির আধুনিক সংস্কার সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। কিন্তু যাদের জন্য এই আয়োজন, সেই গ্রাহকরা বঞ্চিত হচ্ছে প্রত্যাশিত সেবা থেকে। এখন গ্রাহকদের ফোর-জি সুবিধা পাওয়ার কথা এবং আগামীতে তারা পাবে ফাইভ-জি সুবিধা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তারা টু-জির অধিক সুবিধা পাচ্ছে না। টাকা দিয়ে সেবা কিনে তাদের নানারকম সমস্যা ও দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। মোবাইল গ্রাহকরা কলড্রপ ও ধীরগতির ইন্টারনেটে রীতিমত বিরক্ত ও অতিষ্ঠ। ঢাকা এবং শহরাঞ্চলে সেবা কিছুটা মেলে, কিন্তু গ্রামঞ্চলে সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা খুবই কম। করোনাকারণে ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেখাপড়া চলছে। আগামীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও ইন্টারনেটে তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে হয়। সে ক্ষেত্রে গ্রামের শিক্ষার্থীরা কীভাবে লেখাপড়া করবে, যেখানে সেবা অত্যন্ত অপ্রতুল? অন্যান্য ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সেবা প্রাপ্তিরই বা কী হবে?
অপ্রতুল সেবা, সেইসঙ্গে নানা ভোগান্তির জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসিতে গ্রাহকদের শত শত অভিযোগ জমা হয়েছে বলে জানা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অভিযোগের অন্ত নেই। অথচ বিটিআরসিকে এসব অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। গ্রাহকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা এবং অভিযোগাদির দ্রুত প্রতিকার করা এই সংস্থার প্রধান কাজ। টাকা দিয়ে সেবা কিনেও যারা সুফল পাচ্ছে না, তাদের বিষয়টি তাহলে কে দেখবে? বিটিআরসি তবে করে কী? মোবাইল অপারেটরদের কাছে থেকে অর্থ আদায় তার একমাত্র কাজ হতে পারে না। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতে, অপারেটররা গ্রাহকসংখ্যা বাড়ালেও সেবার মান বাড়াতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করছে না। স্বল্প ও অপ্রতুল তরঙ্গ দিয়ে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের সেবা দিতে গিয়েই এই বিপত্তি ঘটছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জবারের বক্তব্য: আমাদের কাছে প্রচুর তরঙ্গ আছে। তাদের যে পরিমাণ তরঙ্গ দরকার সে পরিমাণ তারা নেয়নি। যদি নিতো, সেবার মান স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যেতো। উল্লেখ করা যেতে পারে, উন্নত দেশগুলোতে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ দিয়ে ১ লাখ গ্রাহককে সেবাদান করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ১ মেগাহার্টজ দিয়ে গ্রামীণফোন ২১ লাখ, রবি ১৪ লাখ, বাংলালিংক ১২ লাখ ও টেলিটক দুই লাখ গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। প্রশ্ন হলো, তরঙ্গ মজুদ আছে; তারপরও মোবাইল অপারেটরা তাদের প্রয়োজনীয় তরঙ্গ কিনছে না কেন? আসলে তারা কম তরঙ্গে বেশি গ্রাহকসেবা দিয়ে গ্রাহকদের বঞ্চিত করছে প্রাপ্য সেবা থেকে। কার্যত গ্রাহকদের কষ্টাজিত অর্থ লুটে নেয়া হচ্ছে। এব্যাপারে বিটিআরসি কিছু করছে না, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ও দায়িত্ব নিয়ে প্রতিবিধানের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফোর-জি সেবা দেয়ার কথা বলে অপারেটররা টু-জি সেবা দিতে পারে না। কাজেই, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অপরিহার্য দায়িত্ব।
ফোর-জির লাইসেন্স দেয়ার সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী অপরেটরদের মানসম্পন্ন সেবা দিতে বলেছিলেন। বলেছিলেন, মানুষ তাদের বহু কষ্টের অর্থের বিনিময়ে নিরবচ্ছিন্ন সেবা চায়। গুণগত মানহীন সেবা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তার এ কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তার কথার প্রতিফলন কোথায়? বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন ফাইভ-জি সেবা দিচ্ছে এবং সেবা আরো সহজ ও বৃদ্ধি করার জন্য তৎপর, তখন আমাদের সেবার নিম্নমান এবং গ্রাহকবঞ্চনার বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জাকর। এটা একই সঙ্গে বিটিআরসি, মন্ত্রণালয় ও সরকারের যুগপৎ ব্যর্থতা বলে গণ্য করা যায়। আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পালন করতে যাচ্ছি। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরনের জন্য গর্ব করছি। অথচ আমাদের ইন্টারনেটে মোবাইল ডাটার গতি দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের চেয়ে একটু বেশি। আর সবার চেয়ে কম। এমনকি আফ্রিকার ইথিওপিয়া ও সোমালিয়ার মতো দরিদ্র দেশের চেয়েও কম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। ডিজিটাল দুনিয়ার সকল সুবিধা নাগরিকদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আমরা পিছিয়ে যাবো, পিছিয়ে থাকবো। কথার ফুলঝুরি নয়, বাস্তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যারা টাকা দিয়ে সেবা কিনছে তাদের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। এব্যাপারে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেমন দায়িত্বশীল হতে হবে। তেমনি বিটিআরসি, মন্ত্রণালয় ও সরকারকে সব সময় সর্তক ও সক্রিয় থাকতে হবে। আমরা আশা করবো, অতঃপর সেবা নিয়ে গ্রাহকদের তরফে আর যাতে অভিযোগ না ওঠে তার ব্যবস্থা করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।