পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২০২২ সালের প্রথম নয় মাসে ১১ হাজার ২৮৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করেছে গ্রামীণফোন। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তুলনায় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। একই বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রবির মোট আয় হয়েছে ২ হাজার ২০৭ দশমিক ৪ কোটি টাকা। গত প্রান্তিকের তুলনায় ভয়েস সেবা থেকে রবির আয় বেড়েছে ৬ শতাংশ। এছাড়া গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর আগের প্রান্তিকের তুলনায় ডাটা সেবা থেকে আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা বেড়েছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। আরেক অপারেটর বাংলালিংকের তৃতীয় প্রান্তিকে আয় ১১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি প্রান্তিকে কিংবা বছরে মোবাইল ফোন অপারেটরদের আয় বাড়ছে, বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। শুধু বাড়ছে না গ্রাহক সেবার মান। ভয়েস কল কিংবা ইন্টারনেট কোনটিতেই মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারছে না মোবাইল কোম্পানিগুলো। তাদের বাজে নেটওয়ার্কের কারণে মিউট কল (কথা শোনা যায় না) কিংবা কলড্রপের (কথা বলতে বলে কেটে যাওয়া) শিকার হয়ে একই কলের জন্য একাধিকবার টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহককে। শুধু কলড্রপের কারণেই বছরে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে গ্রাহকদের। ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। টাকার বিনিময়ে সেবা কিনে প্রতিদিনই ঠকছেন মোবাইল ফোন গ্রাহকরা। খোদ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিবই ভয়েস ও ডাটার সার্ভিস নিয়ে ক্ষুব্ধ। মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমি ক্ষতিপূরণ চাচ্ছি না, আমি চাই যে সেবার জন্য টাকা দিচ্ছি সেই কাক্সিক্ষত, মানসম্পন্ন সেবা। কিন্তু সেই সেবা না দিয়ে অপারেটররা গ্রাহকদের ঠকাচ্ছে। আর সচিব মো. খলিলুর রহমান বলেছেন, তিন মিনিট কথা বলতে গিয়ে তিনি দুইবার কলড্রপের শিকার হয়েছেন। ফলে অপারেটরগুলোর প্রতি কঠোর হতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয় ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিটিআরসি। মানসম্মত সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গ্রামীণফোনের নতুন সিম বিক্রি বন্ধ করার পর এবার নতুনের পাশাপাশি পুরোনোসহ সব ধরণের সিম বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের সেবার মানোন্নয়নে নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিতে চায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, কলড্রপের কারণে বছরে গ্রাহকের ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি মেগাহার্টজে ৫ লাখ গ্রাহককে সেবা দিতে হবে। কিন্তু দেশে গ্রামীণফোন প্রতি মেগাহার্টজে সেবা দিচ্ছে ১৭ লাখ গ্রাহক, রবি ১২ লাখ ও বাংলালিংক ৯ লাখ গ্রাহক।
কমিশনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, কলড্রপের কারণে একদিকে যেমন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, সাথে সাথে নিম্নমানের সেবার অভিজ্ঞতা, কথা বলার সময় গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত মিস করা, সময় নষ্ট এবং পুনরায় কল করার মতো বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে গ্রামীণফোনের ৪ কোটি ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৪১টি। এর মধ্যে অন নেট কলড্রপ ৯৬ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং অফ নেট ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। একই মাসে রবি আজিয়াটার মোট কলড্রপ হয়েছে ৫ কোটি ৮০ লাখ ৩৬ হাজার ৭০৯টি। এর মধ্যে অন নেট ড্রপ ৫৭ দশমিক ১১ শতাংশ এবং অফ নেট ৪২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। জুন মাসে বাংলালিংকের কলড্রপ হয়েছে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৫টি। অন নেট ৩৮ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং অফ নেট ৬১ দশমিক ০৯ শতাংশ।
বিটিআরসির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, মে মাসে গ্রামীণফোনের একজন গ্রাহকের অন নেট কলের একটি করে কলড্রপ হয়েছে ৬৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ, দ্বিতীয়বার হয়েছে ১৮ দশমিক ০৬ শতাংশ, ৩বার হয়েছে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ, ৪টি কলড্রপ ২ দশমিক ৮২ শতাংশ, ৫টি ড্রপ হয়েছে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ৬টি হয়েছে দশমিক ৮৭ শতাংশ, ৭টি হয়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থ্যাৎ ১ থেকে ৭টি কলড্রপ হয়েছে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। রবির একটি ড্রপ ৫৮ দশমিক ৬১ শতাংশ, ২টি ১৯ দশমিক ২৫ শতাংশ, ৩টি ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৪টি ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ৫টি কলড্রপ ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ৬টি ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ৭টি ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। অর্থ্যাৎ ১ থেকে ৭টি কলড্রপ হয়েছে ৯৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বাংলালিংকের ১টি কলড্রপ ৭১ দশমিক ২০ শতাংশ, ২টি ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ৩টি ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ৪টি ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ৫টি ১ দশমিক ৩০ শতাংশ, ৬টি দশমিক ৭৬ শতাংশ, ৭টি দশমিক ৪৬ শতাংশ। অর্থ্যাৎ ১ থেকে ৭টি কলড্রপ হয় ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মে মাসে সর্বমোট অন নেট কলড্রপ হয় ৭ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩২টি। সিঙ্গেল ড্রপ হয়েছে ৫ কোটি ১৮লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৭টি।
অন্যদিকে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা অপারেটরগুলোর। গত ডিসেম্বরে ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার ৩৯টি উপজেলায় বিটিআরসি পরিচালিত ড্রাইভ টেস্টে গ্রামীণফোন, রবি ও টেলিটকে ফোরজি সেবার নির্ধারিত ন্যূনতম ডাউনলোড গতি আসেনি। পরীক্ষায় দেখা গেছে, রবির গতি সেকেন্ডে ৬ দশমিক ৪১ মেগাবাইট, গ্রামীণফোনের ৬ দশমিক ৯৯ মেগাবাইট। টেলিটকের ছিল ২ দশমিক ৮০ মেগাবাইট গতি। এর আগে ১৮ জেলায় বিটিআরসি পরিচালিত ড্রাইভ টেস্টে দেখা যায় নির্ধারিত মানের নিচে। আর গতকাল বিটিআরসিতে গ্রাহক প্রান্তে মানসম্মত টেলিকম সেবা নিশ্চিতে বিটিআরসিতে কোয়ালিটি অব সার্ভিস বেঞ্চমার্কিং সিস্টেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও দেখা যায় ইন্টারনেটের ডাউললোড গতি কেবল গ্রামীণফোনেরটি নির্ধারিত বেঞ্চমার্কে ছিল। রবির ও বাংলালিংকের গতি নির্ধারিত বেঞ্চমার্কের কম। নির্ধারিত মানের নিচেও কাগজে-কলেমে এটি দেখা গেলেও বাস্তবে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ।
মুঠোফোন গ্রাহকদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহীউদ্দিন আহমেদ বলেন, টেলিযোগাযোগ সেবার কোয়ালিটি অব সার্ভিস সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ অপারেটরদের গ্রাহক অনুপাতে তরঙ্গ কম থাকা। ফলে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা, কলড্রপ, ডাটা ব্যবহারে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি উদাসীনতা ও অনীহার কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে।
রবি আজিয়াটার চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ শাহেদুল আলম বলেন, আমরা সব সময় কোয়ালিটি সার্ভিসে নজর দেই। তবে ড্রাইভ টেস্টে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। তিনি বলেন, বর্ডার এলাকায় আমাদের কিছুটা সমস্যা হয়, তবে লোকালয়ে ড্রপ শূণ্য দশমিক ৫ শতাংশ। যা নির্ধারিত বেঞ্চমার্কের চেয়েও অনেক কম।
বিটিআরসির কোয়ালিটি অব সার্ভিস বেঞ্চমার্কিং সিস্টেম চালুর ফলে এখন কোন অপারেটরের সেবা কেমন তা নিজেরাই যাচাই করা যাবে জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমান বলেন, মন্ত্রীর সাথে কথা বলতে গিয়ে তিন মিনিটে দুইবার কলড্রপ হয়েছে। আমরা অপারেটরদের নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি। আমরা চাই গ্রাহকের যতটুকু প্রাপ্য সেটা পাচ্ছে কিনা।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, গ্রাহক আর মার্কেটের আকার বাড়াবেন কিন্তু গ্রাহক সেবা বাড়াবেন না সেটা হবে না। বিটিআরসি সবার আগে গ্রাহক সেবা দেখবে। কোন অপারেটরের সেবাই এখনো প্রত্যাশিত মানে পৌঁছেনি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গ্রামীণফোনের। তাই তাদের নতুন-পুরোনো সব ধরণের সিম বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রত্যেকটি অপারেটরের অবস্থা খারাপ। কারো সেবাই সন্তোষজনক নয়। একটার যদি ভালো হতে তাহলে এই অবস্থায় অন্যরা ঝরে পড়তো। কিন্তু কোনটিই গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে পারে না।
তিনি বলেন, সেবার মান যাতে বাড়ায় সেজন্য ২০১৮ সালে স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) দেয়া হলো কিন্তু এখনো সেগুলো রোল আউটই করেনি। তাহলে মানোন্নয়ন হবে কিভাবে?
মন্ত্রী বলেন, অপারেটররা শুধু গ্রাহক বৃদ্ধিতে মনোযোগী। কিন্তু মনে রাখতে হবে ব্যবসায় গ্রাহক বৃদ্ধি সাময়িক হাতিয়ার, দীর্ঘ মেয়াদে গ্রাহকদের সন্তুষ্ট না করতে পারলে, ধরে রাখতে না পারলে এক পর্যায়ে তারা চলে যাবে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।