Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রকৃতিক দূর্যোগে দক্ষিণাঞ্চলে আমন উৎপাদন ঘাটতি দেড় লক্ষাধীক টন বোরোতে পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২১, ৫:৩৮ পিএম

ভাদ্রের প্রবল বর্ষনের সাথে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার এবং উজানের ঢলের পানিতে গোটা দক্ষিণাঞ্চল সয়লাব হয়ে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন-এর উৎপাদন বিপর্যয়ে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দেড় লক্ষাধীক টন চালের উৎপাদন ঘাটতিতে এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি যথেষ্ঠ দূর্বল হয়ে পড়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। কম অবস্থাপন্ন কৃষক ও গৃহস্থ পরিবারগুলোতে ইতোমধ্যে অভাব কড়া নাড়তে শুরু করেছে। জাতীয় পর্যায়ে বোরো ধান এখনে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসলের স্থান দখল করলেও দক্ষিণাঞ্চলে আমনই এখনো প্রধান খাদ্য ফসল। কিন্তু প্রায় সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভর এ ফসলের যেকোন ক্ষতি খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিÑঅর্থনীতি সহ আর্থÑসামাজিক ব্যবস্থায় যথেষ্ঠ বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকে।

সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় বোনা আমন সহ ৭ লাখ ১৫ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর বেশী ৭ লাখ ১৯ হ্জাার ২০৪ হেক্টরে আমন ধানের আবাদ হয়। প্রকৃতি অনুকূল থাকলে লক্ষমাত্রা অনুযায়ী ১৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৭ টন চাল উৎপাদনের কথা থাকলেও ভাদ্রের অমাবশ্যা দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের সব স্বপ্ন চুড়মাড় করে দিয়েছে। যদিও কৃষি সম্পাসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র বরিশাল অঞ্চলের দায়িত্বশীল মহল প্রথম দিকে আগষ্টের ভয়াবহ বর্ষন ও প্লাবনে কৃষি সেক্টরে ক্ষতির সম্ভবনাকে প্রথমে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু সপ্তাহ খানেকেরও বেশী সময় পরে যখন আমনের জমি প্লাবনমূক্ত হতে শুরু করে, তখনই পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুভব করেন কৃষিবীদগন। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে, প্লবনমূক্ত হবার পরে ক্ষতিগ্রস্থ জমিতে আর আমনের বীজতলা তৈরী সহ রোপন স¤ভব হয়নি।
ফলে সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসৃুমে দক্ষিণাঞ্চরে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসলের উৎপাদন বিপর্যয় চরম আকার ধারন করে। ১৯ লাখ ৯৪ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে মৌসুমের শেষে প্রকৃত উৎপাদন দাড়ায় ১৬ লাখ ২৭ হাজার ৩৭০ টনে। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৪ টন কম। অথচ সদ্য সমাপ্ত খরিপ মৌসুমে সারা দেশে আমন উৎপাদন ছিল গত বছরের চেয়ে ১ লাখ টনেরও বেশী। ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, বিগত খরিপ-২ মৌসুমে সারা দেশে লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর অতিরিক্ত ৫৭ লাখ ৯৮ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৩৮ হাজার টন আমন চাল উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ১৩ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের মাধ্যমে প্রায় ৩৭ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
তবে আমনে উৎপাদন ঘাটতি হলেও আউশ আবাদে দক্ষিণাঞ্চল যথেষ্ঠ সাফল্য অর্জন করেছে বলে দাবী করেছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। বিগত খরিপ-১ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৬ হাজার ২৮৫ টন চাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রার বিপরিতে প্রায় ৫০ হাজার টন অতিরিক্ত ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৫ টন চাল উৎপাদন হয়েছে বলে ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এমনকি আম্পান’র ভরা ছোবলের মধ্যেই আউশের উৎপাদন লক্ষমাত্রার অতিরিক্ত হলেও এ প্রকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে আরো ৫০ হাজার টন চাল অতিরিক্ত পাবার সম্ভবনা ছিল বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
তবে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের এ বিপর্যয়ের ফলে দক্ষিনাঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা কিছুটা ব্যহত হবার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৮ লাখ ৩৫ হাজার টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে এবার পরিমানটা ৬লাখ ৭০ হাজার টনে নামিয়ে আনতে পারে বলে মনে করছেন কৃষিবীদগন।
ডিএই’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার প্রায় ৯৯ লাাখ ৬৮ হাজার ২৭১ জন মানুষের জন্য দৈনিক গড়ে ৪৪২ গ্রাম হিসেবে বছরে খাদ্য চাহিদা প্রায় ১৬ লাখ ৮ হাজার ১৮১ টন। এছাড়াও বীজ বাবদ বছরে আরো ৩ লাখ ১৯ হাজার ৯৩৬ টন খাদ্য শষ্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু বিগত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে গম এবং আমন, আউশ ও বোরো সহ মোট দানাদার খাদ্যশষ্য উৎপাদনের পরিমান ছিল ২৭ লাখ ৬২ হাজার ৮৩৫ টন। ফলে নীট উদ্বৃত্তের পরিমান ছিল ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৭১৭ টন। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে আমনের উৎপাদন বিপর্যয় যথেষ্ঠ নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
তবে এসব বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সরকার বোরো আবাদে বিশষ নজর দিচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। চলতি রবি মৌশুমে দেশে ৪৭.৮৪ লাখ হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে ২ কোটি ৫ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষ নির্ধারন করছে কৃষি মন্ত্রনালয়। ইতোমধ্যে লক্ষমাত্রার প্রায় শতভাগ আবাদ অর্জিত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় বোরো আবাদ পরিস্থিতিও যথেষ্ঠ আশাব্যঞ্জক। ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের ৬ জেলায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৫ হেক্টরে আবাদ লক্ষমাত্রার প্রায় ১২০% অর্জিত হয়েছে। বাস্তবে যা ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৬ হেক্টর। ফলে রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে ৬ লাখ ৩ হাজার টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অন্তত ১ লাখ টন অতিক্রমের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। তবে এর অনেকটাই নির্ভর করবে আবহাওয়া অনুকল থাকা সহ সার ও নির্বিঘœ সেচ ব্যবস্থার ওপর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বোরো

২২ ডিসেম্বর, ২০২২
৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৪ জানুয়ারি, ২০২২
২৩ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ