পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজনীতিতে একবার নিয়ন্ত্রণ হারালে তা সহজে ফিরে পাওয়া যায় না। এজন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। অনেক মূল্য দিতে হয়। এ মূল্য দিতে হয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অদূরদর্শী ও যথাসময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থতার কারণে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল ভুল করলে তা কাটিয়ে উঠতে পারে। তার দলীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং অনুগত প্রশাসন-এই দুইয়ের সমন্বয়ে ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তবে বিরোধীদল ভুল করলে তা কাটিয়ে উঠা কঠিন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিরোধীদল বরাবরই ব্যাকফুটে থাকে। এই অবস্থান থেকে ক্ষমতাসীন দলের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিচক্ষণ নেতৃত্ব ও যৌক্তিক এবং গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তাদের পিছিয়ে থাকা ও ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করে জনসমর্থন অর্জনের নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচি নিতে হয়। দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধীদল বিএনপি এ কাজটি কতটা করতে পেরেছে, তা তার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে দলটি ভুল করেছে কি করেনি, তা বিচার-বিশ্লেষণ না করে তার সামগ্রিক অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে যে কেউ বলবে, দলটি যথাসময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে সক্ষম হচ্ছে না। ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে দলটি যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়, তা আজ পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ওয়ান ইলেভেনের দুই বছরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই কাতারে ছিল। এ সময়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে যতটা দক্ষতার পরিচয় দেয়, বিএনপি তা থেকে পিছিয়ে ছিল। ফলে ২০০৯ সালের নির্বাচনে দলটির চরম ভরাডুবি হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দাপটে দলটির অবস্থা আরও খারাপ হয়। এ সময়ে যে ধরনের রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়ে দলটির ঘুরে দাঁড়ানোর কথা, তা দৃশ্যমান হয়নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের রোষে পড়ে দলটির অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়ে। এক প্রকার অস্তিত্ব রক্ষার সংকটে পড়ে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলেও বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে ঐক্যজোট করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এতে ফলাফলের কোনো পরিবর্তন হয়নি। দশটিরও কম আসন পায়। একটি বিশাল জনসমর্থনপুষ্ট দল দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় অতিক্রম করেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দলটির বোশিরভাগ নেতার কথা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন-গুম, সভা-সমাবেশ করতে না দেয়ার কারণে তারা রাজনীতি করতে পারছেন না। ক্ষমতাসীন দল প্রশাসনের সহযোগিতায় একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে এবং ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছে। তবে এমন রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশ ও নতুন পরিস্থিতিতে কিভাবে রাজনীতি করতে হয় এবং কি ধরনের রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নিতে হয়, দলটির নেতারা কি তা নিতে পেরেছেন? পারেননি। বরং ক্ষমতাসীন দলের অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে একাধিকবার ঘোষণা দিয়েও সংসদীয় উপ-নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে চলেছেন। ফলাফল হচ্ছে, শোচনীয় পরাজয়। এই যে পৌরসভা মেয়র নির্বাচন হচ্ছে, এ পর্যন্ত চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত দুই শতাধিক পৌর মেয়র নির্বাচনে বিএনপির অবস্থা কি? পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৬৮টি মেয়র পদে বিএনপি দ্বিতীয় স্থানেও ছিল না। কোনো কোনো এলাকায় ভোট পেয়েছে ৭০-৮০টি। মোট ভোট পেয়েছে ১৬.৪৪ শতাংশ। ভাবা যায়, তিন তিনবার ক্ষমতায় থাকা এবং সংসদে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বিরোধীদলের আসনে বসা দলটির এই শোচনীয় ফলাফল হবে?
দুই.
বিএনপির আজকের দুর্দশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে দলটির নেতৃবৃন্দের যেমন দুর্বলতা রয়েছে, তেমনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগেরও দায় রয়েছে। ক্ষমতাসীন হয়েই দলটি তার প্রধান প্রতিপক্ষকে নির্মূল বা প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চালায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের সম্পর্ক বরাবরই সাপে-নেউলে। এক দল আরেক দলকে শত্রু মনে করে। ফলে তাদের মধ্যে শত্রু-শত্রু খেলা সবসময়ই চলে আসছে। ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতায় থাকার জন্য বিরোধীদলকে অত্যাচার-নির্যাতন করবে, আর বিরোধীদল ক্ষমতাসীন হওয়া এবং বিভিন্ন ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দলকে হটানোর জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। রাজনৈতিক এই অপসংস্কৃতিতে একটা ভারসাম্য থাকলেও এ ধারাটি আওয়ামী লীগ বদলে দেয়। প্রধান প্রতিপক্ষকে অনেকটা নির্মূল করার প্রক্রিয়া চালায়। এজন্য নানা রাজনৈতিক ফাঁদ তৈরি করে এবং সেই ফাঁদে বিরোধীদলও পা দিয়েছে। এই যে ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে বিরোধী দল যে আন্দোলন করে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বহুবার বলেছেন, এই আন্দোলন বিরোধী দল যতটা না করেছে, ক্ষমতাসীন দল তার চেয়ে কোনো অংশে কম করেনি। এটি ছিল, ক্ষমতাসীন দলের ‘নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা’র এক দুষ্টনীতি। সে সময় জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী এমনকি প্রশাসনের একটি অংশের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। বিরোধীদলের অবরোধের মধ্যে যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত করে তার দায় বিরোধীদলের উপর চাপিয়ে দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা চালানোর অভিযোগ বিরোধী দল করেছিল। এ ছিল বিরোধীদল দমনে এক নতুন কৌশল। সরকারও বিরোধীদলের আন্দোলনের মধ্যে জ্বালাও-পোড়াও ঘটনা দেখিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রচার চালায়। অন্যদিকে হামলা-মামলা এবং গ্রেফতারের ভয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী মাঠছাড়া হয়ে পড়ে। ক্ষমতাসীন দলের এমন দুষ্টুনীতিতে পরাস্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত বিরোধীদলকে আন্দোলনের মাঠ থেকে বিদায় নিতে হয়। যুদ্ধে পরাজিত দলের ওপর কি ধরনের দুর্দশা নেমে আসে, তার অসংখ্য নজির ইতিহাসে রয়েছে। পরাজয়ের খেসারত দিতে গিয়ে অস্তিত্ব সংকট এমনকি বিলীন হয়ে যেতে দেখা গেছে। এর কারণ, জয়ী দলের কৌশল বুঝতে না পারা এবং নিজেদের কৌশল ও যুদ্ধনীতি নির্ধারণে নেতৃবৃন্দের অদূরদর্শীতা। পরাজিত দল যে ঘুরে দাঁড়াতে পারে না তা নয়, পারে। তবে এজন্য নতুন কার্যকর পরিকল্পনা, কৌশল এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ থাকতে হয়। বিএনপি এ কাজটি করতে পারেনি। তবে বিপর্যস্ত হওয়া দলটি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন করার কৌশল নেয়। এ কৌশল অনেকটা পিঠ বাঁচানোর। বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনে অংশ না নিলে ক্ষমতাসীন দলের দমন-পীড়নের মধ্যে থাকার শঙ্কা নিয়ে দলটি নেতা-কর্মীদের বাঁচাতে ও স্বস্তি দিতেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যদিও দলটি বলছে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, তা দেখাতেই অংশগ্রহণ করছে। এটা একটা যুক্তি হতে পারে। তবে এ যুক্তির ভিত্তি দৃঢ় নয়। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে যে আমাদের দেশে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, তা দেশের মানুষ তো বটেই বিশ্ববাসীও জানে। এটা নতুন করে দেখানোর কিছু নেই। এ কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়েছিল। বর্তমান সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে এ লক্ষ্য নিয়েই যাতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে বারবার ক্ষমতায় থাকা যায়। দলীয় সরকারের অধীনে বিতর্কিত নির্বাচন করেও যে ক্ষমতায় থাকা যায়, তা এ সরকার দেখিয়ে দিচ্ছে। এতে কে কি বলল, তাতে তার কিছু যায় আসে না। সে তার ক্ষমতায় থাকাকে দেশের উন্নয়নের দিকে নিয়ে গিয়েছে। দেশে বিরোধীদলের রাজনীতি কিংবা গণতন্ত্র থাকল কি থাকল না, তা নিয়ে তার মাথাব্যাথা নেই। জাতীয় হোক আর স্থানীয় হোক, নির্বাচনের সময় হলে নির্বাচন হবে এবং তার প্রার্থী জিতবে এটাই তার নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনে বিরোধীদল আসলো কি আসলো না, গ্রহণযোগ্য হলো কি হলো না-এ নিয়ে ভাবার সময় নেই। নির্বাচন হচ্ছে, তা দেখানো দরকার, তা দেখিয়ে দিচ্ছে। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী ব্যবস্থা যে বিলীন হয়ে গেছে, এ নিয়ে তার কোনো উদ্বেগ নেই।
তিন.
দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন হয়, ভোট কেন্দ্র আগে থেকেই ক্ষমতাসীনরা দখল করে নেয়-এমন অভিযোগ বরাবরই রয়েছে। তবে এসব অভিযোগ এখন আর অভিযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বাস্তবেই দেখা যাচ্ছে। পৌরসভার মেয়র নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রচার-প্রচারণার সময় নেতা-কর্মীরা এখন প্রকাশ্যেই বিরোধীদলকে হুমকি দিয়ে শুধু নৌকায় ভোট দেয়ার কথা বলছেন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও পৌরসভার নির্বাচনের প্রচারণার সময় কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম বলেছেন, যাদের মনে ধানের শীষের সঙ্গে প্রেম আছে, তারা কি করবেন? ১৩ তারিখে ঠাকুরগাঁও ছেড়ে চলে যাবেন। ১৩ তারিখ সন্ধ্যার পর তাদের দেখতে চাই না। তাদের ভোটকেন্দ্রে আসার কোনো প্রয়োজন নাই। তাহলে ভোটকেন্দ্রে যাবে শুধু কে? নৌকা, নৌকা আর নৌকা। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেশের নির্বাচন এখন শুধু ক্ষমতাসীন দলের জন্য। আর কোনো দলের নির্বাচন করার অধিকার নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের এ ধরনের বক্তব্য শুধু ঠাকুরগাঁওয়ে নয়, সারাদেশেই প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে শোনা যায়। ইভিএম-এ ভোট গ্রহণ নিয়ে সব বিরোধী দল ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের আপত্তি থাকলেও সরকার ও নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে অনড়। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দাবি ইভিএম-এর মাধ্যমে কারচুপি করার সুযোগ নেই। এর মাধ্যমে সুষ্ঠু ভোট সম্পন্ন করা যায়। তবে এতে যে বিশাল শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে, তা ফাঁস করে দিয়েছেন, ল²ীপুরের জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন চৌধুরী। গত ১০ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে গিয়ে এক কর্মীসভায় তিনি বলেছেন, ইভিএম এমন এক সিস্টেম নৌকার বাইরে ভোট দিলে ধরে ফেলা যায়। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র নির্বাচনে এক কেন্দ্রে নৌকা পেয়েছে ২ হাজার ৩০০ ভোট। ১ ভোট পায় ধানের শীষ। পরের দিন এ ভোট কে দিয়েছে তা ঐ ওয়ার্ডের নেতারা ধরে ফেলে। কত নম্বর ভোট নৌকার বাইরে গেছে তা ধরা যায়। তিনি বলেন, ইভিএম একটি মেশিন। কে কোথায় টিপ দেয়, তা বোঝা যায়। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সরকার ও নির্বাচন কমিশন কেন বিরোধী দল ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের আপত্তি উপেক্ষা করে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে চলেছে। এর মাধ্যমে সিস্টেম কন্ট্রোল করে সহজে কারচুপি করা যায়। এর প্রমাণ দিয়েছেন ল²ীপুরের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন চৌধুরী। শুধু নির্বাচনে কারচুপিই নয়, কে কাকে ভোট দিয়েছে তাও শনাক্ত করা যায়। বিষয়টি পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং বিরোধীদলকে নির্মূলের এক ডিজিটাল সিস্টেমে পরিণত হয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ ভোটারের যেমন কোনো স্বাধীন ইচ্ছা প্রকাশের সুযোগ থাকছে না, তেমনি কাকে ভোট দিয়েছে তাও প্রকাশ হয়ে পড়ছে। বিরোধীদলকে ভোট দেয়ার কারণে তার উপর নির্যাতনের খড়গও নেমে আসছে। এতে ভোটারদেরও আর ভোট দেয়ার আগ্রহ থাকবে না। অন্যদিকে বিরোধীদলের জনসমর্থন নেই, এই বিষয়টিও তুলে ধরা যাবে, যার নজির এখনই দেখা যাচ্ছে। অথচ এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়, রাজনীতির সংকুচিত পরিস্থিতিতে বিরোধীদলের কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীসহ ব্যাপক জনসমাগম। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং বিরোধীদল নির্মূল এবং বিরাজনীতিকরণে এ এক ভয়াবহ প্রক্রিয়া। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যদি এই ইভিএম সিস্টেমে ভোট গ্রহণ করা হয়, তবে ফলাফল কি হবে, তা বুঝতে বাকি থাকে না। টস করলেও দেখা যাবে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দুই পিঠেই ক্ষমতাসীন দল। অর্থাৎ পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা এক ধরনের প্রতারণায় পরিণত হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে ক্ষমতাসীন দলের নিরঙ্কুশ বিজয় এবং ক্ষমতায় থাকা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
চার.
এটা এখন পরিস্কার, সরকার ক্ষমতায় থাকার সকল ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে ফেলেছে। এজন্য যা করার তাই করেছে এবং করছে। বিরোধীদলকে নিস্ক্রিয় করা থেকে শুরু করে লোক দেখানো একটি নির্বাচনী সিস্টেম গড়ে তুলেছে। এখন বিরোধীদল বিশেষ করে বৃহৎ দল বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সে আত্মমর্যাদাশীল বিরোধীদল হয়ে থাকবে, নাকি নিস্ক্রিয় হয়ে প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নামমাত্র বিরোধীদল হয়ে থাকবে। যদি তা না হয়, তবে দলটিকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে দূরদর্শী, বিচক্ষণ ও কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে জনমত সৃষ্টি করতে হবে। সরকারকেও বুঝতে হবে, বিরাজনীতিকরণ এবং লোক দেখানো প্রহসনমূলক নির্বাচন করে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করা গেলেও তার ফলাফল ভাল হয় না।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।