Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত থেকে বিতাড়নের আশঙ্কায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:৩৩ পিএম

ভারতে অনুপ্রবেশের কারণে দেশটির সরকার গ্রেপ্তার করতে পারে এই আশঙ্কায় ভারত থেকে পালিয়ে যাচ্ছে কিংবা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে লুকিয়ে পড়ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা এ খবর জানিয়েছে।

গত মাসে ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেশজুড়ে বেশকিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ধরে কারাগারে পাঠিয়েছে। এর ফলে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের মনে ভয় দেখা দিয়েছে।

নিজাম উদ্দিন নামের একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী সপরিবারে গত মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি গ্রাম থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে কয়েকশ রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছিল। কিন্তু রাজ্যে কয়েকজন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করার পর, অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের বেশির ভাগ অন্য রাজ্যে আত্মগোপন করেছে। বাকীরা বাংলাদেশে ঢুকেছে।’

নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার পরিবার ধরা পড়লে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে আমাদের কারাগারে পাঠাতো, তারপর মিয়ানমারে পাঠিয়ে দিত। মিয়ানমার এখনো রোহিঙ্গাদের জন্য অত্যন্ত অনিরাপদ। আমরা সেই নরকে যেতে চাই না। আটক হওয়ার ভয়ে আমি ভারত থেকে পালিয়েছি।’
শরণার্থী বিষয়ে কাজ করেন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন একজন কর্মকর্তার কাছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

এক বছর আগের হিসাব অনুযায়ী, মোট ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ভারত ১৯৫১ সালের জাতিসংঘ শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। তাই ভারতে অনুপ্রবেশকারী সব রোহিঙ্গাকে তারা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখে থাকে।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের অধিকার বিষয়ে কাজ করা হুসাইন আহমদ দাবি করেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অন্যায্যভাবে হয়রানি করছে।
পশ্চিমবঙ্গের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মনে করছে, রাজ্যে সাম্প্রতিক ধরপাকড়ের সঙ্গে কয়েক মাস পর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের যোগসূত্র রয়েছে।
হুসাইন আহমদ বলেন, ‘ভারতে ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আগেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হয়রানি করা হয়েছিল। এখন পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের আগে রোহিঙ্গাদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে।’

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক মীনাক্ষি গাঙ্গুলীও মনে করেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিশানা করা হয়।

গত অক্টোবরে যখন ভারত সাত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ বলে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায়, তখন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তি ও সমালোচনা ভারত সরকার ধর্তব্যে নেয়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ও গবেষকেরা আশঙ্কা করেছিলেন, ভারত সরকার রোহিঙ্গাদের যেভাবেই হোক ভারত থেকে বহিষ্কার করার পথেই এগোচ্ছে। সাতজনকে মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তরের ঘটনাকে তাঁরা এ কারণেই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছিলেন।
ভারতে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে বলে বলা হয়ে থাকে, যাদের মধ্যে সাড়ে ১৬ হাজার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তালিকাভুক্ত। ভারত সরকার দাবি করে, রোহিঙ্গারা সারা ভারতেই ছড়িয়ে আছে। সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ