Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমশ প্রভাব হারাচ্ছে ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:১৭ এএম | আপডেট : ১:৩৫ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা চীনা বলয়ে ঢুকে পড়ায় নরেন্দ্র মোদি সরকারকে অসহায় মনে হচ্ছে। ভারতের উপর চীনা চাপ আসছে চতুর্দিক থেকে। ভারতভিত্তিক নিউজ ওয়েবসাইট দ্য ফেডারেল ডট কম এর সহযোগী সম্পাদক কে এস দক্ষিণা মূর্তি ইংরেজিতে লেখা এক নিবন্ধে এ মন্তব্য করেন। দক্ষিণা মূর্তি লেখেন- ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কিছুদিন আগেই বলেন, ইতিমধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য নিরসন করাতো বহুদূর, ২০২০ সালের ঘটনাপ্রবাহ প্রকৃতপক্ষে সম্পর্কটিকে (ভারত-শ্রীলঙ্কা) "ব্যতিক্রমী এক চাপ" এর মধ্যে ফেলেছে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসে ভাইরা ক্ষমতায় আসে। তখন (তাদের চীনপন্থী অবস্থানের কারণে) নয়াদিল্লি হতাশ হয়েছিল। - সাউথ এশিয়ান মনিটর

এক বছরেরও পর, রাজাপাকসে সরকার গৃহীত অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সেই আশঙ্কা সত্যে পরিণত হয়, যেগুলো ভারতের বিপক্ষে আর চীনের পক্ষে যায়। যার সর্বশেষটি হল জাফনা থেকে দেশটির উত্তরাঞ্চলের তিনটি দ্বীপে একটি হাইব্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প যা চীনকে ভারতের তামিলনাড়ুর উপকূল থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার (গন্ধ পাওয়ার মতো) দূরত্বে নিয়ে আসে। এই প্রজেক্টের খবর প্রায় একই সময়ে আসে যখন রাজাপাকসে সরকার কলম্বো বন্দরের অন্তর্গত ইস্ট কনটেইনার টার্মিনাল (ইসিটি) উন্নত করার জন্য ভারত ও জাপানের সাথে করা যৌথ চুক্তি বাতিল করে। দক্ষিণা মূর্তির মতে, ভারতের জন্য এটা 'ফাইনাল' যে শ্রীলঙ্কা তার কক্ষপথের বাইরে চলে গেছে। চীন সে দেশে তার ইতিমধ্যে প্রভাবশালী অবস্থান সুদৃঢ় করে ফেলেছে, যা ভারতে দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত প্রভাব ফেলতে পারে। গোতাবায়া রাজাপাকসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে নয়াদিল্লি সফর করেছিলেন এবং দু দেশের সম্পর্কের পক্ষে যথাযথ বক্তব্য রেখেছিলেন স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি লেখেন, কিন্তু তারপর তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন এবং দুজনের মধ্যে ভারত নিজেকে সুবিধাবঞ্চিত হিসেবে আবিষ্কার করে। ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশটির কাছ থেকে সড়ে চীনা বলয়ে ঢুকে পড়ায় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে অসহায় মনে হচ্ছে। বেজিং থেকে ভারতের উপর চাপ আসছে চতুর্দিক থেকে। দেশের উত্তরে অরুণাচল প্রদেশের পূর্ব সীমান্ত এবং লাদাখের পশ্চিম সীমান্ত থেকে সক্রিয়ভাবে ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে চীন। গত মে মাস থেকে, চীন তার সেনাবাহিনীকে দক্ষিণে ভারতের দিকে নিয়ে গেছে এবং এর আগে ভারতীয় সৈন্যরা টহল দিতো এমন ভূ-খণ্ড দখল করেছে বলে জানা গেছে। বেজিং দু'দেশের মধ্যে 'নো ম্যানস ল্যান্ড' কে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছে। ভারত চীনের আক্রমণে দেরিতে জেগে উঠে চীনকে প্যাংগং লেকের দক্ষিণ দিক থেকে দূরে রাখতে পেরেছিল তবে লেকটির উত্তরের অংশটি ধরে রাখতে পারেনি যা তাদের টহল দেওয়ার অংশ ছিল। মোদি সরকারের সরকারি প্রতিক্রিয়াও বিভ্রান্তিকর।

গত বছরের জুনে চীনের সাথে গালাওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের (যাতে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়) পরপরই এক সর্বদলীয় বৈঠকে মোদি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, লাদাখে কোন বহিরাগত ব্যক্তি ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেনি, কোন ভারতীয় পোস্টও দখল করে নি। তীব্র ক্ষোভের কারণে ভারত সরকার এই অবস্থান থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং পরে পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে মোদি কিছু বিবৃতি দিয়েছিলেন। তবে তিনি এখন অবধি সীমান্ত সীমানা লঙ্ঘনের দায়ে চীনের নাম উল্লেখ করেন নি। সপ্তাহের শুরুতে, ভারতের প্রাক্তন সেনাপ্রধান এবং কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও জনপথ মন্ত্রী জেনারেল ভি কে সিং এক বিবৃতিতে (যা ভারত সরকারের অবস্থান বিরোধী) বলেন, “আমরা কেউ জানতে পারি নি যে, আমাদের নিজেদের উপলব্ধি মতে কতবার সীমালঙ্ঘন হয়েছে। চীনা গণমাধ্যমে এগুলো আসে নি। আপনাদের আশ্বস্ত করছি, চীন যদি ১০ বার সীমালঙ্ঘন করে থাকে তবে আমাদের অবশ্যই কমপক্ষে ৫০ বার তা করা উচিত। " দক্ষিণা মূর্তির ভাষায়- স্পষ্টতই চীন এই বক্তব্যকে নিজের পক্ষে নেয়ার সুযোগ বানিয়ে বলেছে, সিং সীমান্ত ইস্যুতে কেবল তার অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে বৈদেশিক নীতির উত্তাপ চারদিকেই। ভারত ও চীনের মধ্যে প্রক্সি লড়াইয়ের মধ্যে নেপালের অবস্থান এবং বাংলাদেশ দু'দেশের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলায়, নয়াদিল্লির পররাষ্ট্রনীতির কৌশলগুলো প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিবর্ণ ঠেকছে। কোন উৎসাহব্যঞ্জক পদক্ষেপও চোখে পড়ছে না।

এরইমধ্যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জায়গায় জো বাইডেন এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এতে ভারতের জন্য আরেক নতুন পরিস্থিতি বর্তমান। যদিও ট্রাম্প একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যেগুলো ভারতের জন্য বাণিজ্য এবং অভিবাসন বিরোধী ছিল, কিন্তু বৈদেশিক নীতিতে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের সাথে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লিকে খোলামেলাভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বৈদেশিক নীতিতে কয়েক দশকের অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ বাইডেন যে বিষয়গুলোকে নয়াদিল্লি তার অভ্যন্তরীণ বিষয় (যেমনঃ কাশ্মীর এবং কৃষক বিক্ষোভ) হিসেবে বিবেচনা করে সে বিষয়গুলোতে ভারতকে যা খুশি তা করতে দেবেন বলে আশা করা যায় না। ইতিমধ্যে, বাইডেন প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে একটি শক্তিশালী ভারত ককাস ভারতকে গণতন্ত্রের নিয়মাবলী মেনে চলতে এবং কৃষকদের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অনুমতি দিতে পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সরকারকে ইন্টারনেট সংযোগ পুনঃস্থাপন করতে বলেছে। ভারত যাকে তার অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলছে তা নিয়ে বিদেশি শক্তির মন্তব্য মোদি সরকারের জন্য সংবেদনশীল, মার্কিন কংগ্রেস গ্রুপের বক্তব্য ওয়াশিংটনের উপর নির্ভরশীলতার কারণে এড়িয়ে চলার সুযোগ কম। যা দৃশ্যমানভাবে অনুপস্থিত তা হল নিজের প্রতিবেশীদের বলয় ঘিরে বিদেশনীতির দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাগুলোর জবাবে ভারতের পাল্টা শক্তিশালী অবস্থান। কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমলা থেকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বনে যাওয়া এস জয়শঙ্কর শ্রীলঙ্কা, নেপাল সফর করেছেন এবং চীনের সাথেও আলোচনা করছেন। কিন্তু ভারতের জন্য এখনও তেমন কোন ইতিবাচক সংকেত নেই। বিপরীতে, এই মন্ত্রী সংবাদমাধ্যমে বলেন যে, ২০২০ সালটি ছিল চীনের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের জন্য "ব্যতিক্রমী এক চাপ" এর বছর।

যদি ভারতের বৈদেশিক নীতির জন্য কিছুটা ইতিবাচক সংবাদ থেকে থাকে তবে তা হল নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্টদের মধ্যে বিভাজন৷ যদিও এটা পিরিক বিজয় (প্রায় সব হারিয়ে জয়ের মতো), চীনপন্থী হিসেবে নেপালের অবস্থান সড়ানোর কিছুটা পথ যাওয়া মাত্র। বেজিংয়ের নেপালি সরকারের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার আশা নিয়ে এই বিভক্তি করা হয়েছিল। একমাত্র প্রতিবেশী যার সাথে ভারতের তুলনামূলক কম বিতর্কপূর্ণ সম্পর্ক ছিল বলে মনে করা হয় তা হল বাংলাদেশ। তবে চীন যে তার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার দেশটি সে বিষয়টি গোপন করে। ভারত পাঁচ বছর আগে চীনের কাছে বাংলাদেশে তার 'বিশিষ্ট অবস্থান'টি হারিয়েছিল। নাগরিকত্ব সংশোধন আইন যাতে মুসলমানদের তাদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা থেকে বাদ দেয়ার কথা বলা হয় তা নিয়ে বাংলাদেশেরও ভারতের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ছিল। এটি মোদি সরকারকে নিজের বৈদেশিক নীতিমালা নিয়ে গর্ব করার মতো কোন জায়গায় রাখে না। বরং, দক্ষিণ ব্লকের বিজেপি এবং মান্ডারিনরা দক্ষিণ এশিয়ায় ঐতিহ্যগতভাবে প্রভাবের ক্ষেত্রে ভারতের নিয়ন্ত্রণ হারানোর সভাপতিত্ব করার মতো অবিশ্বাস্য এক অবস্থানে রয়েছে।



 

Show all comments
  • Md Shahin ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:১৯ পিএম says : 0
    অন্যে মানেনা আপনি মোড়ল।
    Total Reply(0) Reply
  • Tareq Anam ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:১৯ পিএম says : 0
    একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া আর কারো উপর কখোনো ই ভার‍তের কোন প্রভাব ছিলোনা,,
    Total Reply(0) Reply
  • দাউদ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:২০ পিএম says : 0
    পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ন্যারো মাইন্ডের একটা দেশ ভারত।
    Total Reply(0) Reply
  • জামান শেখ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:২১ পিএম says : 0
    খুবই খুশীর খবর।
    Total Reply(0) Reply
  • Hosen Ali ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:৫০ এএম says : 0
    এই উপমহাদেশে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি মোটেই গ্রহনযোগ্য নয়, দাদাগিরিই ওদের স্বভাব।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ