Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জনশক্তি রফতানির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনা মহামারির প্রকোপ কিছুটা কমেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার এই প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ার্ক ভিসা চালু না করলেও ভিজিট ভিসায় আগতদের ভিসা স্ট্যাটাস পরিবর্তন করে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। এতে চাকরিপ্রার্থী বাংলাদেশিদের সেখানে চাকরি পাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশি, যারা ট্যুরিস্ট ভিসার যাচ্ছেন, চাকরি পাচ্ছেন। বাংলাদেশ দূতাবাস সে দেশের কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নিয়ে ভিজিট ভিসা সত্যায়ণ করে দিচ্ছে। ভ্রাতৃপ্রতীম আমিরাত সরকারের বিশেষ বদান্যতার কারণে বাংলাদেশিরা চাকরির এ সুযোগ লাভ করছে। আমরা এজন্য আমিরাত সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। স্মরণ করা যেতে পারে, নানা কারণে ২০১২ সালের আগস্ট মাস থেকে আমিরাতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় দু’ দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হলেও সুফল মেলেনি। ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমিরাত সফরে গিয়ে আমিরের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ থেকে বেশি বেশি কর্মী নেয়ার অনুরোধ জানান। তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুরোধের সুফল পাওয়া না গেলেও এখন অন্যভাবে হলেও একটা সুফল পাওয়ার সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে। এই সম্ভাবনাকে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে, স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে আমাদের কাজে লাগাতে হবে, যতদিন ওয়ার্ক ভিসায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি না হয়। এ কথা সত্য, করোনাকারণে বাংলাদেশি কর্মীরা বিশ্বের কোথাও আগের মতো চাকরি নিয়ে যেতে পারেনি। আমাদের প্রতিষ্ঠিত শ্রমবাজারগুলো নানা কারণে অনুকূল ফল দেয়নি। বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সউদী আরব শীর্ষ কর্মস্থল। সেখানে নানা কারণে কর্মী নিয়োগ তেমন একটা হয়নি। কুয়েত অন্যতম প্রধান কর্মস্থল। শহীদ ইসলাম পাপুল নামের এক বাংলাদেশি এমপির অপকাÐে সেখানকার শ্রমবাজার মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। কাতার-বাহরাইনেও কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে। ইরাক-লিবিয়ায় তো কর্মী যাওয়ার সুযোগই প্রায় নেই। মধ্যপ্রাচ্যের এসব শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের প্রবেশাধিকার এত ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ বড় ধরনের বিপাকে পড়ে গেছে।

অভিজ্ঞ মহলের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ করে সউদী আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত ও কাতারের শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার করতে না পারা বাংলাদেশের জন্য এক অনুশোচনীয় ব্যর্থতার নামান্তর। এইসব দেশসহ ওই এলাকার মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও সংস্কৃতিগত গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ ও ওইসব দেশ একই মুসলিম উম্মাহর অংশীদার হওয়ায় সঙ্গতকারণে বাংলাদেশের বিশেষ অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। শুরুতে এবং বহু বছর বাংলাদেশ এ অগ্রাধিকার পেয়েছে। এখনো যে লাখ লাখ বাংলাদেশি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করছে, হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতিবছর দেশে পাঠাচ্ছে, সেটা সেই অগ্রাধিকার পাওয়ারই ফল। প্রশ্ন উঠতে পারে, মধ্যপ্রাচ্য কর্মসংস্থানে এই ভাটার টান সৃষ্টি হলো কেন? ওয়াকিবহাল ব্যক্তিদের মতে, ওইসব দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকসহ যেকোনো কারণেই হোক সম্পর্কের অবনমন ঘটেছে। এতে ওইসব দেশের বিদেশি কর্মী নিয়োগের তালিকায় বাংলাদেশিরা হয় সব শেষে না হয় একেবারেই বাদ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক-কূটনৈতিক সম্পর্ক উষ্ণ ও জোরদার থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। সম্পর্কের শীতলতার জন্য বাংলাদেশ তার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। দ্বিতীয়ত সততা-স্বচ্ছতার অভাব, দুর্নীতি-দুষ্কৃতি ও নানা অভিযোগের কারণে কর্মী নিয়োগ বন্ধ বা স্থগিত হয়েছে। এখানে আস্থা ও বিশ্বস্থতার একটি বড় রকমের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে মালয়েশিয়া বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র। অথচ এই শ্রমক্ষেত্রটি বছরের পর বছর বন্ধ থেকেছে। কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কারণে সর্বশেষ বন্ধ হয়ে যাওয়া এই শ্রম ক্ষেত্রটি খুলে দেয়ার একটা সম্ভাবনা সম্প্রতি দেখা দিয়েছে। এনিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনাও শুরু হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, দু’দেশের সম্মিলিত একটি সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে উঠেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে আর্থিক ফায়দা হাসিলই সিন্ডিকেটের মূল লক্ষ্য। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ নিয়ে সরকার টু সরকার সমঝোতা ও ব্যবস্থা নেয়া হলেও ফল ভালো হয়নি। এমতাবস্থায়, এমন একটা পদ্ধতি বা ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ যাতে দ্রæত ও সহজ কর্মীরা যেখানে পৌঁছাতে পারে, তাদের খরচ ন্যায়সঙ্গত পর্যায়ে থাকে এবং কোনো প্রতারণার শিকার তাদের না হতে হয়। এ ব্যবস্থা অন্যান্য দেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রেও করতে হবে।

আমিরাত থেকে পাওয়া সুখবর যেমন আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক ও গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর খবরও একইভাবে আশাব্যঞ্জক ও গুরুত্বপূর্ণ। বিপুল সংখ্যাক কর্মীর ওই দু’দেশের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতে যাচ্ছে। করোনাকারণে গত প্রায় এক বছরে হাতে গোনা কিছু কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। অথচ লাখ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ছিল। এতে দেশে বেকারের মিছিল দীর্ঘ হওয়ার পাশাপাশি রেমিটেন্সপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। তাই সম্ভাব্য কোনো সুযোগকেই হাতছাড়া করা যাবে না। সর্বাগ্রে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বপ্রকার সিন্ডিকেটবাজি রহিত করতে হবে। অত্যন্ত অপ্রিয় হলেও এ অভিযোগের কথা বলতে হচ্ছে যে, সরকার মন্ত্রী পর্যায়ের কেউ কেউ নাকি এবং সরকারি কর্মকর্তাদেরও অনেকে এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি এ অভিযোগ সত্য হয়, তবে বিদেশে কর্মী পাঠানো কখনোই সততা-স্বচ্ছতার অন্তর্গত হবে না, দুর্নীতি ও প্রতারণামুক্ত হবে না। সরকারের বড় বড় লোকের সংশ্রব ছাড়া বড় বড় দুর্নীতি হয় না- একথা মনে রেখে এখনই সরকারের শীর্ষ নীতি নির্ধারকদের সতর্ক হতে হবে। সিন্ডিকেটবাজি রুখে দিতে হবে যে কোনো মূল্যে। সংশ্লিষ্টদের এটা বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে, মহামারির প্রকোপ যত কমবে, বিভিন্ন দেশে বিদেশি কর্মীর চাহিদাও ততটা বাড়বে। স্থগিত বা বন্ধ থাকা শ্রমবাজারগুলো খুলে যাবে। এই পর্যায়ে সর্বাগ্রে যাতে বাংলাদেশ কর্মসংস্থানের সুযোগ নিতে পারে তার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি দ্রæত সম্পন্ন করতে হবে। পুরানো শ্রমবাজার তো আছেই, সেইসঙ্গে অনেক নতুন শ্রমবাজারও খুলছে। এশিয়ায় বিভিন্ন দেশ, এমন কি চীনে পর্যন্ত জনশক্তি রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। ওদিকে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও বিদেশি জনশক্তির চাহিদা তৈরি হচ্ছে। এসব নব্যসৃষ্ট শ্রমবাজার দ্রæত আমাদের ধরতে হবে। এজন্য যা কিছু করা দরকার, তা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের অতিরিক্ত জনশক্তিকে যেমন কাজে লাগাতে হবে, তেমনি তাদের মাধ্যমে আসা রেমিটেন্সপ্রবাহ জোরদার করতে হবে, যা অর্থনীতির দুটি প্রধান স্তম্ভের একটিতে পরিণত হয়েছে ইতোমধ্যে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনশক্তি

১৫ জানুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন