পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমিন জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন, বিদেশে কর্মরত ৯৩ হাজারেরও বেশী কর্মীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এই ৯৩ হাজারের মধ্যে ৮০ হাজার আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, ৫ হাজার আছে কুয়েতে, ৪ হাজার মিসরে, আড়াই হাজার দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং দেড় হাজার ইরানে। অন্যান্য দেশেও প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তবে তাদের সংখ্যা কত, সেটা তিনি জানাতে পারেননি। মন্ত্রী সংসদে আরো কিছু তথ্য দিয়েছেন। বলেছেন ৬ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী মালয়েশিয়ায় বৈধ ওয়ার্ক পারমিটের জন্য দরখাস্ত করার সুযোগ লাভ করেছে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এই সুযোগ তারা লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনৈতিক বিশেষ উদ্যোগের ফলে এটা সম্ভবপর হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪ লাখের মতো কর্মী ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছে। এই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ৫ মাসে মালয়েশিয়া থেকে ৫২ হাজার অবৈধ কর্মী মালয়েশীয় সরকারের সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফিরে এসেছে। সউদী আরবের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর সউদী সরকার যে বিশেষ এক্সিট প্রোগ্রাম নিয়েছে, তার আওতায় যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা স্ব স্ব দেশে ফিরে যাবে। এ ব্যাপারে জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট কাজ করছে। এই কর্মসূচীর অধীনে যারা তাদের স্বদেশে ফিরে যাবে, তারা বৈধ ভিসা নিয়ে পুনরায় সউদী আরবে যেতে পারবে।
প্রবাসী কর্মীদের, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, দেশে ফিরে আসা ছাড়া উপায় নেই। কেউ কেউ অবৈধভাবে থেকে যেতে পারে। এটা বেআইনী এবং ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় তারা গ্রেফতার হয়ে জেল যেতে পারে কিংবা জোর করে তাদের ফেরৎ পাঠানো হতে পারে। বৈধ ওয়ার্ক পারমিট, চাকরি ও বেতন-ভাতার নিশ্চয়তা ছাড়া কারো বিদেশে যাওয়া উচিৎ নয়। কিন্তু আমাদের দেশে অনেকে স্বদ্যোগে কিংবা রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারনার শিকার হয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। গিয়ে বিপদে পড়ে, নানারকম ভোগান্তির শিকার হয়। তাদের দু:খের কাহিনী প্রায়ই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখা যায়। দৈনিক ইনকিলাবে গতকাল এরকমই একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরের সারাংশ হলো, ৬/৭ মাস আগে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মাদারিপুর শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন স্থানের ১৫ জন কর্মী জনপ্রতি চার লাখ টাকা দিয়ে সউদী আরব যায়। রিক্রুটিং এজেন্সি আকামা ও চাকরি নিশ্চয়তা না দিয়েই তাদের সেখানে পাঠিয়ে দেয়। তারা রিয়াদ, দাম্মাম ও আল কাচ্ছিমসহ বিভিন্ন স্থানে কাজ ও বেতন-ভাতা না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। রিক্রুটিং এজেন্সিকে বারবার তাকাদা দেওয়া সত্তে¡ও তাদের আকামা ও চাকরির ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি। এজেন্সির তরফে কেবল একের পর এক আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। আবিদ কর্পোরেশন নামের রিক্রুটিং এজেন্সিটির সঙ্গে সউদী দূতাবাসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজস আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ওই এজেন্সির বিরুদ্ধে মানব ও অর্থপাচারের অভিযোগ এনে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, প্রতারণা, অর্থ লোপাট ও পাচারের অভিযোগ মোটেই নতুন নয়। কত কর্মপ্রত্যাশী মানুষ যে এদের অন্যায়, লোভ ও অপকর্মের শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে, বিদেশ-বিভূয়ে দুর্ভোগ-দুর্বিপাকের শিকার হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। অথচ তাদের রোখা কিংবা তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে কমই দেখা যায়। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের অনুগ্রহভাজন হওয়ায় তাদের অধিকাংশই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
অবৈধভাবে বিদেশে কর্মী পাঠানো, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর একাংশের যথেচ্ছ অর্থ আদায়, প্রতারণা, অর্থপাচার ইত্যাদির জন্য সরকারী ব্যবস্থাপনার ত্রুটি ও অপর্যাস্ততাই দায়ী। অপরপক্ষে বিদেশের কর্মবাজারে বাংলাদেশী কর্মীদের যথেষ্ট সংখ্যায় কর্ম সংস্থান না হওয়া, প্রবাসী কর্মীদের যথাযথভাবে দেখভাল করতে না পারা, বিদেশে বিপদ-বিপাকেপড়াদের সম্ভাব্য সহযোগিতা না দেয়া, দলে দলে বাংলাদেশীদের ফেরৎ পাঠানো ঠেকাতে না পারা ইত্যাদির জন্য সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে দায়ী না করে পারা যায় না। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোসহ মালয়েশিয়াতে কর্মসংস্থানের সুযোগের কোনো অভাব নেই। কিন্তু এ সুযোগ বাংলাদেশীদের জন্য অবারিত নয়। সউদী আরবে কর্মসংস্থান খুবই সীমিত হয়ে এসেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যান্য আরব দেশে এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। মালয়েশিয়াতেও দুয়ার ভালভাবে খুলছে না। এর দায় সরকার এড়াতে পারেনা। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রত্যাশার চেয়ে কম। আরো অনেক কর্মী রফতানি ও আয় বৃদ্ধির সুযোগ আমরা নিতে পারছিনা। অথচ রেমিটেন্স আমাদের অর্থনীতির প্রধান দুটি স্তম্ভের একটি। অন্যটি গার্মেন্ট রফতানির আয়। এই আয়ে এখন টান পড়েছে। শিল্প ও রফতানি দুইই নানা সংকর্টের আর্বতে পতিত। রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার অনেক নীচে এবং অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক অবনমনের শিকার। এমতাবস্থায়, জনশক্তি রফতানি ও আয় বৃদ্ধি বড় রকমের সহায়ক হতে পারে। সেখানে এখন যে অবস্থা তাতে বিচলিত ও উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। সরকার জনশক্তি রফতানি ও তা থেকে আয় বৃদ্ধির অনুকূল ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নিতে জরুরি ভিত্তিতে এগিয়ে আসবে, এটাই কামনা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।